প্রতীকী চিত্র
কাজের ব্যস্ততার মধ্যে শরীরের যত্ন নেওয়ার কথা অনেক সময়েই খেয়াল থাকে না। দুশ্চিন্তা, মানসিক উদ্বেগ— এই সব কিছুর জন্য শরীরে চেপে বসে নানা রোগ ব্যাধি। তার মধ্যে সবথেকে বেশি ভুগতে হয় স্ট্রোকের জন্য। স্ট্রোকের চিকিৎসায় যা সবথেকে জরুরি, তা হল মানুষের সচেতনতা বাড়ানো।
প্রতি বছরের মতো এ বছরও ২৯ অক্টোবর অ্যাপোলো পালন করেছে ‘স্ট্রোক ডে’। স্ট্রোকের বিষয়ে অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশাল্টি হাসপাতালের স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং সিনিয়র কনসালট্যান্ট, চিকিৎসক সঞ্জয় ভৌমিক বলেন, “মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর পিছনে মূল কারণ হল পৃথিবী জুড়ে স্ট্রোক এখন মহামারির রূপ ধারণ করেছে। প্রত্যেক ৩ সেকেন্ডে এক জন মানুষের স্ট্রোক হচ্ছে এবং ভারতে মৃত্যুর চতুর্থ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল এটি। ভারতে ২০০২ সালে স্ট্রোকের ব্যাপকতা ছিল ২২ লক্ষ, তা ২০১৯-এ এসে দাঁড়িয়েছে ৯৪ লক্ষ।” এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে স্ট্রোকের প্রকোপ কত পরিমাণে বেড়ে গিয়েছে।
কিন্তু কেন হয় স্ট্রোক? এর কারণ হল মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনের ঘাটতি। চিকিৎসক ভৌমিকের কথায়, “যে রক্তনালিগুলি রক্ত সরবরাহ করছে, সেগুলি যদি বন্ধ হয়ে যায় বা ফেটে যায়, তা হলে স্ট্রোক হতে পারে। সাধারণত ৮৭ শতাংশের ক্ষেত্রে রক্তনালিগুলি বন্ধ হয়ে গিয়ে স্ট্রোক হয়। তাই আমাদের প্রাথমিক কাজ হল যে রক্তনালিগুলি বন্ধ হয়েছে, সেগুলিকে ঠিক করা। কারণ ১ মিনিট যদি রক্তনালি বন্ধ থাকে, তা হলে মস্তিষ্কে ২০ লক্ষ নিউরন নষ্ট হয়।” তাঁর মতে, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রথমে যেটা দরকার, তা হল এটা জানা যে কী কী কারণে স্ট্রোক হতে পারে।
চিকিৎসক ভৌমিক আরও বলেন, “আমরা একটা নেমোনিক ব্যবহার করি ‘বি ফাস্ট’। এখানে ‘বি’ হচ্ছে ব্যালান্সের সমস্যা, হাঁটতে না পারা, কথা বলতে অসুবিধা হওয়া। ‘ই’ হচ্ছে ‘আই’ মানে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যাওয়া, একটা জিনিস দুটো দুটো দেখা। ‘এফ’ হচ্ছে ‘ফেস’ অথবা মুখের অসমতা, ‘এ’ হচ্ছে ‘আর্ম’ অথবা বাহু এবং পায়ের দুর্বলতা। ‘এস’ হচ্ছে ‘স্পিচ’ বা কথা বলার সমস্যা। ‘টি’ হচ্ছে ‘টাইম টু অ্যাক্ট’। এগুলি ছাড়াও যদি কোনও রোগী হঠাৎ অচেতন হয়ে যান, তা হলে এগুলি স্ট্রোকের উপসর্গ।
এ রকম উপসর্গ দেখা দিলে রোগীর বাড়ির লোকের উচিত বড় হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে যাওয়া। এ ক্ষেত্রে অ্যাপোলো হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্সের নম্বর, ১০৬৬-এ ফোন করতে পারেন।"
তাঁর মতে, যে হাসপাতালে স্ট্রোক চিকিৎসার সব রকম সুবিধা রয়েছে, সেখানেই রোগীকে নিয়ে যাওয়া উচিত। এই স্ট্রোক চিকিৎসার সুবিধা বলতে বোঝায় ২৪ ঘণ্টা স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং সেই সঙ্গে নিউরো রেডিওলজিস্ট ও ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজিস্ট-এর উপস্থিতি। এমআরআই এবং ক্যাথ ল্যাবের সুবিধাও থাকতে হবে।
কোনও ব্যক্তির স্ট্রোক হলে অ্যাপোলো হাসপাতাল যে প্রোটোকল মেনে চলে, সেই বিষয়েও জানান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। বলেন, “যখন এ রকম কোনও কল আসে, অ্যাম্বুল্যান্স তাড়াতাড়ি বাড়িতে পৌঁছে রোগীকে নিয়ে আসে। তার পরে প্যারামেডিক্স খবর পাঠায় যে রোগীর স্ট্রোক হতে পারে। তাই আমাদের ইমার্জেন্সি সবসময় তৈরি থাকে। যখন রোগী ইমার্জেন্সিতে পৌঁছন, দ্রুত একটি নিউরোলোজিক্যাল পরীক্ষা হয়। রোগীর স্ট্রোক হয়েছে বোঝার সঙ্গে সঙ্গে নিউরোলজিস্ট, নিউরোরেডিওলজিস্ট এবং ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজিস্টকে খবর পাঠানো হয়। তার সঙ্গে সঙ্গেই সিটি টেকনিশিয়ান, ল্যাব টেকনিশিয়ান, রেসিডেন্ট এবং স্ট্রোক নার্সের কাছে খবর পাঠানো হয়।”
এর পরেই বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। শুধু স্ট্রোকের তৎকালীন চিকিৎসা নয়, স্ট্রোক যাতে ফের না হয়, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। সুগার, রক্তচাপ, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ধূমপান বন্ধ রাখা, নিয়ম করে শরীরচর্চা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া— এই সব কিছু বজায় রাখতে পারলে স্ট্রোকের হারও কমবে।
যে কোনও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রশ্নের জন্য, অ্যাপোলোতে যোগাযোগ করুন:
জরুরি নং: ১০৬৬
হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩৪৪২০২১২২
ই-মেইল আইডি: infokolkata@apollohospitals.com
এই প্রতিবেদনটি ‘অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল’-এর সঙ্গে আনন্দবাজার ব্র্যান্ড স্টুডিয়ো দ্বারা যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত।