রাহুল দ্রাবিড়। —ফাইল চিত্র।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরেই ভারতীয় ক্রিকেট দলের কোচের মেয়াদ শেষ রাহুল দ্রাবিড়ের। তিনি আগামী দিনে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের কোচ হিসাবে আর কাজ করতে আগ্রহী নন বলেই শোনা যাচ্ছে। বোর্ড ইতিমধ্যেই নতুন কোচ নেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। জানিয়ে দিয়েছে, কারা পারবেন কোচের পদের জন্য আবেদন করতে।
সূত্রের খবর, নিউ জ়িল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের সঙ্গে কথা বলছে বোর্ড। তাঁকে দ্রাবিড়ের উত্তরসূরি হিসাবে পেতে চাইছে বিসিসিআই। এখন চেন্নাই সুপার কিংসের কোচ ফ্লেমিং। আইপিএলে ২০০৯ সাল থেকে চেন্নাইয়ের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। সফল ভাবে কোচিং করাচ্ছেন। ট্রফি জিতিয়েছেন দলকে। দ্রাবিড়ের জায়গা নেওয়ার জন্য যথেষ্ট যোগ্য তিনি। আগামী দিনের দল তৈরি করার জন্য অনেকের মতে ফ্লেমিংয়ের থেকে ভাল কেউ হবেন না। কিন্তু দু’মাসের আইপিএল ছেড়ে ১০ মাস আন্তর্জাতিক দলের সঙ্গে থাকার পথে ফ্লেমিং হাঁটবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে অনেকের।
‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই ফ্লেমিংয়ের সঙ্গে প্রাথমিক ভাবে কথা বলেছে বোর্ড। কিন্তু চেন্নাই দল তাঁকে রাখতে চায়। সেই দলের সঙ্গে এখনও ফ্লেমিং কোনও কথা বলেননি ছেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে।
২০০৯ থেকে চেন্নাই ছাড়াও সারা বিশ্বে বিভিন্ন দলে কোচিং করিয়েছেন ফ্লেমিং। বিগ ব্যাশ লিগে মেলবোর্ন স্টারস, দক্ষিণ আফ্রিকার টি-টোয়েন্টি লিগে জোহানেসবার্গ সুপার কিংস, আমেরিকার মেজর লিগ ক্রিকেটে টেক্সাস সুপার কিংস, ইংল্যান্ডের দ্য হান্ড্রেডে সাদার্ন ব্রেভের মতো দলকে কোচিং করিয়েছেন তিনি। ভারতীয় দলের দায়িত্ব নিতে গেলে সেই সব দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে ফ্লেমিংকে।
চেন্নাইকে যে ভাবে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন ফ্লেমিং, তাতে খুশি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। কিউই কোচকে বোর্ডের কিছু কর্তা পছন্দ করেন বলে শোনা গিয়েছে। গত ১৫ বছরে চেন্নাইকে পাঁচ বার আইপিএল জিতিয়েছেন। তাঁর মতো এত বছর কেউ আইপিএলের কোনও দলে কোচিং করাতে পারেননি। ফ্লেমিংয়ের কোচিং ছাড়াও দল চালানোর ক্ষমতার প্রশংসা শোনা যায়। শিবম দুবের মতো ক্রিকেটারকে তুলে এনেছেন তিনি। ভারতের বহু ঘরোয়া ক্রিকেটারকে সাহায্য করেছেন ফ্লেমিং। নিউ জ়িল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক অনেকেরই পছন্দের মানুষ।
ভারতের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারেরাও এমন এক জনকে চাইবেন, যিনি অভিজ্ঞ এবং দীর্ঘ দিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন। আগামী তিন বছরে ভারতকে নতুন দল তৈরি করতে হবে। কারণ রোহিত, বিরাটদের আগামী প্রজন্ম তৈরি করার সময় এসেছে। এমন একটা সময় ফ্লেমিংয়ের মতো কাউকে পেলে উপকৃত হবে দল।
অন্য দিকে, দ্রাবিড়ের জায়গায় দায়িত্ব নেওয়ার লড়াইয়ে রয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে ভিভিএস লক্ষ্মণের নাম। এই মুহূর্তে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির (এনসিএ) প্রধান তিনি। দ্রাবিড় সেই দায়িত্ব ছেড়ে জাতীয় দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তার পরেই এনসিএ-র দায়িত্ব দেওয়া হয় লক্ষ্মণকে। এ বার দ্রাবিড় জাতীয় দল থেকে সরে গেলে আসতে পারেন লক্ষ্মণ। দ্রাবিড় কোচ থাকার সময়ও লক্ষ্মণকে কয়েকটি সিরিজ়ে কোচ হিসাবে দেখা গিয়েছিল। দীর্ঘ দিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁর। ভারতীয় এ এবং অনূর্ধ্ব-১৯ দলের দায়িত্ব সামলেছেন লক্ষ্মণ। তিনি ভারতের আগামী প্রজন্মের সঙ্গে যথেষ্ট পরিচিত। তাই লক্ষ্মণ দায়িত্ব নিতে চাইলে তাঁকেই কোচ করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
লক্ষ্মণ কোচ হিসাবে ভারতকে এশিয়ান গেমস জিতিয়েছেন। তা ছাড়াও ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া এবং বিদেশের মাঠে ইংল্যান্ড, নিউ জ়িল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজ়ে ভারতের কোচের দায়িত্ব সামলেছিলেন তিনি। রোহিত, বিরাট, রবীন্দ্র জাডেজা, মহম্মদ শামিরা হয়তো আরও দু’বছর খেলবেন। সেই সব ক্রিকেটারকে সামলানোর মতো ক্ষমতা লক্ষ্মণের আছে। পুরনো এবং নতুন, দুই প্রজন্মকে মেশাতে পারবেন বলেই তাঁকে আগামী দিনের কোচ হিসাবে চাইছেন অনেকে।
কোচ হিসাবে উঠে আসছে গৌতম গম্ভীরের নামও। কলকাতা নাইট রাইডার্সের মেন্টর তিনি। সেই দায়িত্ব ছেড়ে ভারতীয় ক্রিকেট দলের দায়িত্ব গম্ভীর নেবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে তাঁর হাতে যে ভাবে কেকেআর বদলে গিয়েছে, তাতে গম্ভীরকে চাইছেন অনেকে। রাজনীতি ছেড়ে পুরোপুরি ক্রিকেটে মন দিয়েছেন তিনি। তাই উঠে আসছে গম্ভীরের নামও। যদিও বিরাটদের কোচ হিসাবে গম্ভীর দায়িত্ব নেবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
ভারতীয় বোর্ড টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরেই নতুন কোচের নাম ঘোষণা করবে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে এখনও এক মাসের বেশি সময় রয়েছে কোচ বেছে নেওয়ার জন্য। তত দিন জল্পনা চলবেই।