যশস্বী জয়সওয়াল। —ফাইল চিত্র।
রাজকোটে ২১৪ রানের অপরাজিত ইনিংসের পর উৎসবে মেতেছেন যশস্বী জয়সওয়ালের উত্তরপ্রদেশের ছোট শহর ভাদোহি। মুম্বইয়ের হয়ে খেললেও যশস্বীর বাড়ি ভাদোহিতে। সেখানকার সকলেই গর্বিত তাঁকে নিয়ে, গর্বিত তাঁর ছোটবেলার কোচ আরিফ হুসেনও।
ব্যান্ড পার্টি, আতশবাজি, আবির, মিষ্টি— ভাদোহির উৎসবে বাদ ছিল না কোনও কিছুর। স্থানীয় বাসিন্দারা শোভাযাত্রা করে যশস্বীর কাকা বিকাশ জয়সওয়ালের দোকানে গিয়ে তাঁকে মালা পরিয়ে সংবর্ধনাও জানিয়েছেন। সব কিছু দেখেও বিশ্বাস করতে পারছেন না তিনি। বিকাশ বলেছেন, ‘‘মানুষের উৎসাহ বর্ণনা করা সম্ভব নয়। ছোট একটা গ্রাম থেকে যশস্বী এখন গোটা দেশের গর্ব। আমাদের তো গর্ব হবেই। ১০ বছর বয়স থেকে লড়াই শুরু করেছিল। যশস্বীর সেই গল্প দেশের মানুষ শুনেছেন। আমরা চোখের সামনে দেখেছি ওর সংগ্রাম। তাই আমাদের আনন্দ আরও বেশি। এখানকার ছোট একটা মাঠে ওর খেলা শুরু। বাড়িতেও সারা দিন অনুশীলন করত। ওর বাবারও প্রচুর অবদান রয়েছে। যশস্বীর সাফল্যে গোটা গ্রামের মানুষ খুশি। ওর জন্যই আমাদের গ্রামের নাম এখন সবার কাছে পরিচিত। উৎসব থামছেই না এখানে।’’
উচ্ছ্বাস গোপন করেননি যশস্বীর আর এক কাকা রমাকান্ত জয়সওয়ালও। নিজের ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দোকান সাজিয়েছেন বিখ্যাত ভাইপোর ছবি দিয়ে। তিনি বলেছেন, ‘‘পরিবারের সকলে ভীষণ খুশি। আমাদের এখানে উৎসবের মেজাজ। পর পর দুটো টেস্টে দ্বিশতরান করেছে যশস্বী। তা-ও এত কম বয়সে। ছোট থেকে কঠোর পরিশ্রমের পুরস্কার পেয়েছে। বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছে। এখনই তো আনন্দ করার সময়।’’
যশস্বীর সাফল্যে খুশি হলেও বিস্মিত নন তাঁর ছোটবেলার কোচ আরিফ। তিনি বলেছেন, ‘‘যশস্বীকে দেখে প্রথম থেকেই মনে হয়েছে, ওর মধ্যে আলাদা একটা ব্যাপার রয়েছে। ওকে ক্রিকেট শেখানোর জন্য মুম্বই পাঠানোর পরিকল্পনা যে ভুল ছিল না, তা প্রমাণ করে দিয়েছে। প্রথম থেকেই যশস্বী আর পাঁচটা বাচ্চার থেকে আলাদা ছিল। এখনও মনে আছে, ২০০৭-০৮ মরসুমে সুরিয়াওয়ানে আমার অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হয়েছিল। এক বছরের মধ্যে সিনিয়র দলে জায়গা করে নেয়। আমাদের পক্ষে যতটা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া সম্ভব ছিল, সব দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। তার ফল এখন সারা দেশ দেখতে পাচ্ছে।’’ প্রিয় ছাত্রকে নিয়ে আরিফ আরও বলেছেন, ‘‘প্রথম থেকেই সাহসী ছিল যশস্বী। প্রচুর পরিশ্রম করতে পারত। ক্রিকেটের প্রতি একাগ্রতা, দায়বদ্ধতা ছিল। নেতৃত্ব দেওয়ার গুণ ছিল। আমার মতে, এটা সবে শুরু। অনেক দূর যাবে ও। আশা করি যশস্বী হতাশ করবে না।’’
বিশাখাপত্তনমের পর রাজকোটেও দ্বিশতরান করে ক্রিকেট মহলের নজর কেড়ে নিয়েছেন যশস্বী। বিনোদ কাম্বলি, বিরাট কোহলির পর তৃতীয় ভারতীয় ক্রিকেটার হিসাবে পর পর দুই টেস্টে দ্বিশতরান করার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। কোহলির পর দ্বিতীয় ভারতীয় ক্রিকেটার হিসাবে একই সিরিজ়ে দু’টি দ্বিশতরানের নজির গড়েছেন। গ্রামের ছেলেকে নিয়ে উচ্ছ্বাস থামছে না ভাদোহির। যশস্বী ব্যাট হাতে নামলে এখন সবাই বসে পড়েন টেলিভিশনের সামনে। ফাঁকা হয়ে যায় রাস্তা, বাজার। ভাদোহি অঘোষিত ‘বন্ধ’ পালন করে।