ভারতীয় দল। ছবি: রয়টার্স।
ইংল্যান্ডের ‘বাজ়বল’ ভারতে কতটা সাফল্য পাবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। প্রথম দিনের খেলা শেষে দেখা গেল হায়দরাবাদে ভারতই বাজ়বল (ইংল্যান্ডের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালাম আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলাচ্ছেন দলকে। যে হেতু তাঁর ডাকনাম ‘বাজ়’, ইংল্যান্ডের ক্রিকেটকে বাজ়বল বলা হচ্ছে।) খেলে দিল। প্রথমে ব্যাট করে ইংল্যান্ড তোলে ২৪৬ রান। জবাবে ভারত দিনের শেষে এক উইকেট হারিয়ে তুলল ১১৯ রান।
ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বেন স্টোকস টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। শুরুর আট ওভার বল করেন যশপ্রীত বুমরা এবং মহম্মদ সিরাজ। সেই সময় প্রায় ৫ রান প্রতি ওভার করে তুলছিল ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার। কিন্তু স্পিনারেরা বল করতে আসতেইষ সব দাপট শেষ হয়ে গেল ইংরেজ ব্যাটারদের।
ইংল্যান্ডের আগ্রাসী ক্রিকেটকে বাজ়বল বলা হচ্ছিল। কিন্তু দিনের শেষে দেখা গেল ভারতী অনেক বেশি আগ্রাসী ব্যাট করল। ওপেনার যশস্বী জয়সওয়াল ইনিংস শুরুই করেন চার মেরে। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে ছক্কাও মারেন তিনি। ৭০ বলে ৭৬ রান করেন যশস্বী। ন'টি চার এবং তিনটি ছক্কা মেরেছেন তরুণ ওপেনার। দ্বিতীয় দিনে শতরান করার লক্ষ্য নিয়েই নামবেন যশস্বী। তাঁর সঙ্গে থাকবেন শুভমন গিল। তিনি ১৪ রানে অপরাজিত। অধিনায়ক রোহিত ২৪ রান করে আউট হয়ে যান। জ্যাক লিচের বলে বড় শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন রোহিত।
ব্রেন্ডন ম্যাকালাম ইংল্যান্ডের টেস্ট দলের কোচ হওয়ার পর থেকেই আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলছেন বেন স্টোকসেরা। নিউ জ়িল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই ভাবে টেস্ট খেলে সাফল্যও পেয়েছেন তাঁরা। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ ছিল ভারতের মাটিতে এই ভাবে খেলা সম্ভব কি না। ভারত মানেই স্পিন সহায়ক পিচ। সেখানে আক্রমণাত্মক খেলতে গেলে উইকেট যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। আর ইংরেজ ব্যাটারদের মধ্যে অনেকেই স্পিনের বিরুদ্ধে স্বচ্ছন্দ নন। এমন অবস্থায় প্রথম টেস্টে বেশ চাপে ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় দিনে স্টোকসেরা ম্যাচে ফিরতে পারেন কি না সেই দিকে নজর থাকবে সমর্থকদের।
ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস শেষ হয়ে যায় ২৪৬ রানে। ইংল্যান্ডকে লড়াইয়ে রেখেছিলেন অধিনায়ক বেন স্টোকস। ইংল্যান্ডকে ২৫০ রানের কাছে পৌঁছে দিলেন স্টোকস। কিন্তু ইংল্যান্ডের মিডল অর্ডারকে রান করতে দেয়নি ভারত।
ইংল্যান্ড যে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলবে তা আগেই জানিয়েছিলেন স্টোকসেরা। সেই ভাবেই শুরু করেছিলেন দুই ওপেনার। প্রতি ওভারে প্রায় ৫ রান করে নিচ্ছিলেন তাঁরা। মহম্মদ সিরাজ ৪ ওভারে একাই ২৮ রান দেন। যশপ্রীত বুমরা ৪ ওভারে দেন ১২ রান। তাঁরা কোনও উইকেট পাননি। সবে ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার ম্যাচের রাশ নিজেদের হাতে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই সময় ভারতের স্পিনারদের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। খেলা বদলে যায় তখনই।
ইংল্যান্ডের প্রথম উইকেটটি নেন অশ্বিন। তাঁর স্পিন বুঝতে না পেরে এলবিডব্লিউ হয়ে যান ডাকেট (৩৫)। বেশি ক্ষণ ক্রিজে টিকতে পারেননি তিন নম্বরে নামা অলি পোপও (১)। জাডেজার বলে রোহিতের হাতে ক্যাচ দেন ইংরেজ ব্যাটার। পরের ওভারেই অশ্বিন তুলে নেন অন্য ওপেনার ক্রলিকে (২০)। ৫৫ রানে কোনও উইকেট না হারানো ইংল্যান্ড হঠাৎ ৬০ রানে ৩ উইকেট হয়ে যায়।
প্রথম সেশনে ইংল্যান্ডের ৩ উইকেট পড়েছিল। দ্বিতীয় সেশনে রবিচন্দ্রন অশ্বিনেরা তুলে নিয়েছিলেন আরও ৫ উইকেট। ৮ উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে পড়ে যায় ইংল্যান্ড। তার মধ্যেও লড়লেন স্টোকস। ইংরেজ অধিনায়ক ৭০ রান করেন। তাঁর উইকেট নেন যশপ্রীত বুমরা। ভারতের মাটিতে স্পিন খেলতে ব্যর্থ ইংল্যান্ড। স্টোকস ছাড়া কোনও ব্যাটারই বড় রান করতে পারেননি।
ভারতের হয়ে তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন রবীন্দ্র জাডেজা এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিন। দু'টি করে উইকেট নিয়েছেন যশপ্রীত বুমরা এবং অক্ষর পটেল। তৃতীয় সেশনে ইংল্যান্ড দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করে। হাতে উইকেট না থাকায় বড় শট খেলছিলেন স্টোকসই। কিন্তু তৃতীয় সেশনে খুব বেশি রান করার আগেই ইংল্যান্ডের শেষ ২ উইকেট তুলে নেয় ভারত। দিনের শেষে ইংল্যান্ডের থেকে ১২৭ রানে পিছিয়ে যশস্বীরা।