নাসের হুসেন। —ফাইল চিত্র
ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবগুলির বিরুদ্ধে রক্ষণশীলতার অভিযোগ নতুন নয়। ক্রিকেটের নতুন কিছুকে গ্রহণ করতে তাদের নাকি বরাবরই বড্ড আপত্তি। এ বার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগ। এই অভিযোগ অবশ্য কাউন্টি ক্লাবগুলির বিরুদ্ধে সামগ্রিক ভাবে নয়। অভিযোগ উঠেছে এসেক্সের বিরুদ্ধে। সত্যিই কি তাই?
প্রশ্ন উঠছে। আধুনিক ক্রীড়া বিশ্বে বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগ ওঠে না তেমন নয়। কিন্তু এসেক্স কাউন্টির মতো ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ কেবল বেমানানই নয়, অপমানজনকও বটে। এসেক্স থেকে এশিয়া বা আফ্রিকার বংশোদ্ভূত বহু ক্রিকেটার উঠে এসেছেন। ইংল্যান্ডের জাতীয় দলের হয়েও খেলেছেন অনেকে। ইংল্যান্ডকে নেতৃত্বও দিয়েছেন। তাঁদেরই এক জন নাসের হুসেন।
প্রিয় ক্লাবের বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগে বিচলিত নাসের চলে গিয়েছিলেন নিজের প্রিয় কাউন্টিতে। কথা বলেছেন প্রাক্তন সতীর্থ তথা ছেলেবেলার বন্ধু আরফান আক্রমের সঙ্গে। এসেক্সের দ্বিতীয় একাদশের হয়ে দীর্ঘ দিন খেলেছেন আরফান। এখন পূর্ব লন্ডনের কাউন্টির ক্রিকেট অপারেশন ম্যানেজার। তাঁদের দু’জনের কথোপকথন প্রকাশিত হয়েছে ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেল-এ। এই সংবাদ পত্রে নিয়মিত কলমও লেখেন নাসের। বন্ধুর সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে নাসের ফিরে গিয়েছেন ছেলেবেলায়। তারই বিশেষ কিছু অংশ তুলে ধরা হল এই প্রতিবেদনে।
নাসের হুসেন: যখন আমরা বড় হচ্ছি, আমার বাবার ছত্রছায়ায় ক্রিকেট শিখছি ইলফোর্ড ক্রিকেট স্কুলে, তখন এই জায়গাটা দেখতে আরও একটু ভাল ছিল। কেন এবং কী ভাবে এই পরিবর্তনটা হল? স্থানীয়দের কাছে এর গুরুত্বই বা কতটা?
আরফান আক্রাম: ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড দক্ষিণ এশীয়দের আরও বেশি সাহায্য করার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে। যার পোশাকি নাম সাউথ এশিয়ান অ্যাকশন প্ল্যান। এসেক্স ইতিমধ্যেই সেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। ২০১৩ থেকে পূর্ব লন্ডনের শহরতলিতে আমরা কাজ করছি। ক্রিকেট নিয়ে আবেগ এখানে আগে থেকেই রয়েছে। তাই ইসিবি-র পরিকল্পনায় আমরা সহজেই অন্তর্ভুক্ত হতে পেরেছি। দেশের অন্যত্রও এখন ইসিবি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার কাজ করছে।
নাসের: এ সব কেন করা হচ্ছে? এসেক্সের ক্রিকেট কি এর আগে ব্যর্থ হচ্ছিল? এশীয়দের নিয়ে কি ঠিক মতো কাজ করা হচ্ছিল না?
আরফান: এই এলাকায় যে পরিমাণ ক্রিকেট খেলা হচ্ছিল, সেই তুলনায় ক্রিকেটার উঠে আসছিল না এসেক্সের জন্য। আমিই যখন ছোট ছিলাম তখন বুঝতে পারতাম না সঠিক পথ কী। এখন কিন্তু সুযোগ অনেক বেড়েছে। এখন যে ভাবে কাজ হচ্ছে, তাতে কারোরই সুযোগ নষ্ট হওয়ার কথা নয়।
নাসের: আমাদের বড় হওয়ার সময় একটা অনুভূতি কাজ করত, তুমি ব্রিটিশ-এশিয়ান বা অ্যাফ্রো-ক্যারিবিয়ান সম্প্রদায়ের হলে তোমার গড় ব্রিটিশ ছাত্রদের থেকে ৫০ শতাংশ ভাল হতে হবে। এখনও কী এই বিষয়টা রয়েছে?
আরফান: ’৮০, ’৯০ বা ২০০০-এর দশকেও এই বিষয়টা সত্যি ছিল। মনে হতেই পারে সে সময় ওই সম্প্রদায়কে উপেক্ষা করা হত কি না। আমরা বিষয়টা পরিবর্তন করেছি। ভুলগুলোকেই ঠিক বলে চালানো কখনই ঠিক নয়। আমরা এই বিষয়টাই পরিবর্তন করতে চেয়েছি।
নাসের: তা হলে তুমি কেন আজিম রফিককে সাংসদদের সামনে মুখ খুলতে বলেছিলে? ওকে কথা বলতে দেখে কী মনে হয়েছিল?
আরফান: সেটা কঠিন সময় ছিল। যখন ও বলছিল যে, নিজের সন্তানদের কখনই খেলার ব্যাপারে উৎসাহ দিতে চায় না। ক্রিকেট এখন ঠিক সেটাই করছে, যেটা গোটা সমাজ করছে। যেটা প্রয়োজন সেটা আমাদের ভাবতে হবে এবং কাজের মধ্যে প্রতিফলিত করতে হবে। আমরা কাজ শুরু করেছি। কিন্তু এখনও লম্বা রাস্তা যেতে হবে আমাদের।
নাসের: যে সমস্যাটা ইয়র্কশায়ারে শুরু হয়েছিল, সেটাই দ্রুত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এসেক্সের তিন জন প্রাক্তন ক্রিকেটার মরিস চামবার্স, জাহিদ আহমেদ এবং জোহেব শরিফ কিন্তু অভিযোগ করেছেন যে, তাঁদের সময় তাঁরা বর্ণবিদ্বেষের শিকার হয়েছেন। ইসিবিও খেলাকে অপমান করার অভিযোগ এনেছে এসেক্সের বিরুদ্ধে। আমরা কিন্তু এখনও নিউটন রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছি।
আরফান: জানি এটা ওদের খুবই ধাক্কা দিয়েছিল। এখনও তদন্ত চলছে এবং আমি সেটা প্রভাবিত করতে চাই না। তবে বলতে পারি এই অভিযোগটা অনেক কিছু নড়িয়ে দিয়েছে। প্রচুর সাংস্কতিক পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের আরও অনেক কিছু শিখতে হবে। ক্রিস সিলভারউড যখন প্রথম দলের কোচ ছিলেন, আমাদের সেই সময় পিছিয়ে যেতে হবে। তিনি কিন্তু দলের সমস্ত খেলোয়াড়কে পরস্পরের সাফল্য উদযাপন করতে বলতেন। ক্রিকেটারদের সাফল্যে অর্জিত ক্ষমতা উপভোগ করতেন। এটা আমাদের সাহায্য করেছে। কারণ এই বিষয়টা এসেছিল সর্বোচ্চ স্তর থেকে।
নাসের: এসেক্সে আসার পর তুমি কখনও বর্ণবিদ্বেষমূলক কিছু দেখেছ?
আরফান: আমিও অসাম্য দেখেছি। অবহেলা করা হত। এটা সামাজিক সমস্যা ছিল। শ্রেণি এবং প্রতিযোগিতার বিষয় ছিল। কখনই বলব না এটা ভাল, কিন্তু আমাকে এই বাধাগুলো অতিক্রম করতে হয়েছে।
নাসের: আমার সময় ইলফোর্ডে প্রচুর এশীয় বাচ্চা ছিল। এখন অ্যাকাডেমি হয়েছে। বয়স ভিত্তিক ক্রিকেট হয়েছে। কিন্তু এখনও প্রথম একাদশে তাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য নয়।
আরফান: আমরাও বিষয়টা নিয়ে ভাবছি। অনেকেই এখনও ভাবেন আমরা ওদের প্রতিভা শুধু মাত্র ঐতিহাসিক প্রতিযোগিতাগুলোতেই ব্যবহার করতে আগ্রহী। শেষ চার-পাঁচ বছরে ওদের ধারনা কিছুটা পরিবর্তন করা গিয়েছে। ওদের প্রতিভার পূর্ণ ব্যবহার করা হচ্ছে। দরকারে আর্থিক সাহায্য করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণ পদ্ধতিতে পরিবর্তন করা হয়েছে। ব্রিটিশ-এশীয় কোচদের বেশি করে কাজে লাগানো হচ্ছে। এখন অভিভাবকরা জানেন, ওঁদের বাচ্চারা সঠিক পথেই এগোবে। রবি বোপারার মতো ক্রিকেটারকে এনেও আমরা ওদের উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টা করেছি।