ICC ODI World Cup 2023

অষ্টমীতে ‘বোধন’! বাঙালির উৎসবে শামিল বাংলার শামি, পাঁচ উইকেটের ‘অঞ্জলি’তে দিলেন জবাবও

অষ্টমীতেই এ বারের বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেললেন শামি। প্রথম ম্যাচেই পাঁচ উইকেট। ভাল খেলার পরেও দীর্ঘ দিন ধরে তাঁকে রিজ়ার্ভ বেঞ্চে বসিয়ে রাখা হচ্ছিল। রবিবার তাঁর জবাব দিয়েছেন বাংলার জোরে বোলার।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:২৮
cricket

মহম্মদ শামি। ছবি: পিটিআই।

বিশ্বকাপে তিনি নাকি ভারতের প্রথম তিন ‘পছন্দের’ জোরে বোলারের মধ্যে ছিলেন না। যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ সিরাজের জায়গা নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু শার্দূল ঠাকুর কী ভাবে মহম্মদ শামির আগে জায়গা পেতে পারেন সেটা নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন ছিল। রবিবার নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাঁচটি উইকেট নিয়ে সব বঞ্চনা, সব উপেক্ষার জবাব দিলেন বাংলার মহম্মদ শামি। পাঁচ-পাঁচটি উইকেট শুধুমাত্র এই ম্যাচের শুকনো একটা পরিসংখ্যান নয়, দল পরিচালন সমিতিকে এক-একটা জবাব, যাঁরা ভারতের অন্যতম সেরা অভিজ্ঞ বোলারের উপরে আস্থা রাখতে পারেননি প্রথম চারটি ম্যাচে।

Advertisement

দুর্গাপুজোর বোধন হয় ষষ্ঠীতে। কিন্তু বাংলার শামির এ বারের বিশ্বকাপে ‘বোধন’ হল অষ্টমীতে। কারণ, রবিবারই প্রথম বার সুযোগ পেলেন তিনি। নিউ জ়িল্যান্ডের ইনিংস শেষ হওয়ার পর ক্রিকেট বিশেষজ্ঞেরাও কুর্নিশ করতে ছাড়লেন না। একবাক্যে বলে দিলেন, ‘কামব্যাক হো তো অ্যায়সা’। একটি-দু’টি নয়, একেবারে পাঁচটি উইকেট প্রত্যাবর্তনের ম্যাচ। জবাব ছাড়া আর কী!

বিশ্বকাপের সেই প্রথম ম্যাচ থেকে ভারতের প্রথম একাদশ নির্বাচনের আগে একজনকে নিয়েই সবচেয়ে বেশি আলোচনা হত। তিনি শামি। প্রায় প্রতি ম্যাচেই সব জায়গায় সম্ভাব্য একাদশে থাকত তাঁর নাম। পর দিন টস করতে এসে রোহিত এসে দলে বদলের কথা বলতেন ঠিকই, কিন্তু কখনও তাঁর মুখ থেকে শামির কথা শোনা যায়নি। এশিয়া কাপেও তাঁর সঙ্গে এমনটাই করা হয়েছে। এই কোনও ম্যাচে সুযোগ পাচ্ছেন, তো পরের ম্যাচেই বাদ পড়ে যাচ্ছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মোহালির ম্যাচে পাঁচ উইকেট পাওয়ার পর মনে হয়েছিল বিশ্বকাপে তাঁর জায়গা পাকা। কোথায় কী! রাহুল দ্রাবিড়, রোহিত শর্মা সে কথা শুনলে তো!

অথচ বিশ্বকাপে শামির যে অভিজ্ঞতা রয়েছে তা আর কারওরই নেই। নিউ জ়িল্যান্ড ম্যাচে নামার আগে পর্যন্ত বিশ্বকাপে শামির ছিল ৩১টি উইকেট। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয় স্থানে। অনিল কুম্বলেকে টপকে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসতে স্রেফ একটা বল সময় লাগল। প্রথম বলেই ফেরালেন উইল ইয়ংকে। ৩২তম উইকেট। সেখানেই থামেননি। ৩৩, ৩৪, ৩৫-এর পর এই ম্যাচেই এসে গেল ৩৬ম উইকেটও। সামনে শুধু জাহির খান এবং জাভাগল শ্রীনাথ, যাঁদের দু’জনেরই ৪৪টি করে উইকেট রয়েছে।

দলকে শুরুর দিকে যদি ভরসা দেওয়া হয়, তা হলে জুটি ভাঙতেও শরণাপন্ন হতে হল সেই শামিরই। নিউ জ়িল্যান্ডের হয়ে তৃতীয় উইকেটে তখন ১৫৯ রানের জুটি গড়ে ফেলেছিলেন রাচিন রবীন্দ্র এবং ড্যারিল মিচেল। বুমরা, সিরাজ, কুলদীপদের যথেচ্ছ পেটাচ্ছিলেন। দুই ক্রিকেটারই শতরান করে ফেলবেন কি না, তা নিয়ে একসময় আলোচনা শুরু হয়েছিল।

সেখানেও কাজে লাগল শামির অভিজ্ঞতা। রাউন্ড দ্য উইকেটে শামির স্লোয়ার লং অনের দিকে মেরেছিলেন রাচিন। শুভমন গিলের হাতে বল জমা পড়ল। ওই যে এক বার নিউ জ়‌িল্যান্ডের আত্মবিশ্বাস নড়ে গেল, তা ফিরল না বাকি ইনিংসেও। যে ড্যারিল মিচেল বাইশ গজে তাণ্ডব চালাচ্ছিলেন, তাঁরও স্ট্রাইক রেট অবিশ্বাস্য ভাবে কমে গেল শতরানের পর।

তখনও বোঝা যায়নি ম্যাচের শেষ দিকে কী হতে চলেছে। কুলদীপ এবং বুমরা নিউ জ়িল্যান্ডের মেরুদণ্ড আগেই ভেঙে দিয়েছিলেন। নিউ জ়িল্যান্ডের টেলএন্ডারদের ল্যাজ ঝাপটানোর সুযোগই দিলেন না শামি। অতীতে ব্যাট হাতে মিচেল স্যান্টনারের ভাল খেলার বহু ইনিংস রয়েছে। শামির যে বলে অফ স্টাম্প উড়ে গেল সেটা দেখতে পেয়েছিলেন কি না সন্দেহ। পরের বলেই বোল্ড ম্যাট হেনরি। শেষ ওভারে ফেরালেন ড্যারিল মিচেলকেও।

এই শামিকেই আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বাদ দেওয়ার পর তুমুল রেগে গিয়েছিলেন সুনীল গাওস্কর। বলেছিলেন, “আমি ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত ঠিক বুঝতে পারছি না। গত বারের বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে শামি হ্যাটট্রিক করেছিল। ক্রিকেটে অনেক কিছুই মনস্তাত্ত্বিক। তাই ওদের উচিত ছিল শামিকে নেওয়া। আগের বার শামি যা করেছিল তাতে আফগানিস্তান চাপে থাকত। তাই যদি কাউকে জায়গা দিতে হত তা হলে শামির জায়গা পাওয়া উচিত ছিল।”

তাতেও চিঁড়ে ভেজেনি। বসে থাকতে হয়েছে আরও দু’টি ম্যাচ। অবশেষে নামিয়ে দেওয়া হল নিউ জ়িল্যান্ডের মতো কঠিন ম্যাচে। দল জিতুক বা হারুক, শামি পাশ করলেন সসম্মানেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement