Sanju Samson

শতরানের রেকর্ড, শূন্যেরও রেকর্ড, রানের জোয়ার-ভাটায় সঞ্জু! বিদ্রুপ যে সঙ্গত, প্রমাণ করলেন নিজেই

আমেরিকার নির্বাচনের কারণে মাস্ক এক্সের লাইক বাটনে পরিবর্তন করেছিলেন। সেটাকেই অনেকে সঞ্জুর জন্য করেছেন বলে পোস্ট করেন। আসলে এত দিন পর কেরলের ব্যাটার রান পেয়েছেন যে, তাঁকে নিয়ে সমর্থকেরা বিদ্রুপ করছেন, মজা করছেন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:৩২
Sanju Samson

সঞ্জু স্যামসন। —ফাইল চিত্র।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সঞ্জু স্যামসনের শতরানের পর নাকি ইলন মাস্ক এক্সের (সাবেক টুইটার) লাইক বাটনে পরিবর্তন এনেছেন! সত্যিই কি তাই? না। মজা। আমেরিকার নির্বাচনের সময় মাস্ক এই কাণ্ড করেছিলেন। আসলে এত দিন পর কেরলের ব্যাটার রান পেয়েছেন যে, তাঁকে বিদ্রুপ শুনতে হচ্ছে। সেটা যে সঙ্গত, রবিবার প্রমাণ করে দিলেন সঞ্জু নিজেই।

Advertisement

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পর পর দু’টি শতরান করে রেকর্ড গড়েছিলেন। হায়দরাবাদে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শতরান করেছিলেন। তার পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে শুক্রবার প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ডারবানে আবার শতরান। শুধু ভারতীয় নয়, এশিয়ার কোনও ক্রিকেটারের এই রেকর্ড নেই। সারা বিশ্বে মাত্র চার জন ক্রিকেটার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পর পর দু’টি ম্যাচে শতরান করেছেন। গুস্তভ ম্যাককিয়ন (ফ্রান্স), রিলি রুসো (দক্ষিণ আফ্রিকা) এবং ফিল সল্টের (ইংল্যান্ড) পর সঞ্জু এই নজির গড়লেন।

রবিবার আবার রেকর্ড গড়লেন সঞ্জু। এ বার শূন্যের রেকর্ড। এক বছরে চারটি টি-টোয়েন্টি ইনিংসে শূন্য করলেন সঞ্জু। ভেঙে দিলেন ইউসুফ পাঠান (২০০৯), রোহিত শর্মা (২০১৮ এবং ২০২২) এবং বিরাট কোহলির (২০২৪) একই বছরে তিনটি ইনিংসে শূন্য করার রেকর্ড। ভারতীয়দের মধ্যে এক বছরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি শূন্য করার লজ্জার রেকর্ড এখন সঞ্জুর নামে।

সঞ্জুর ধারাবাহিকতার অভাব। ভারতীয় জার্সিতে তাঁর অভিষেক হয়েছিল ২০১৫ সালে। ঋষভ পন্থের অভিষেক হওয়ার দু’বছর আগে। কিন্তু উইকেটরক্ষক সঞ্জু কখনও দলে নিজের জায়গা পাকা করতে পারেননি। আগামী দিনে পন্থ টি-টোয়েন্টি দলে ফিরলে আবার তাঁকে বসতে হবে না, এই নিশ্চয়তাও নেই। ২০১৫ থেকে সঞ্জু এখনও পর্যন্ত দেশের জার্সিতে ৩৪টি ইনিংস খেলেছেন। এই বছরটাও শুরু করেছিলেন শূন্য দিয়ে। পর পর দু’টি শতরানের আগে এই বছরে সঞ্জু তিনটি ম্যাচে শূন্য করেন। ৩০ রানের গণ্ডি পার করেছেন মাত্র এক বার। অর্ধশতরান একটি।

সেই সঞ্জু পর পর দু’টি শতরান করে আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছিলেন। তিনি নাকি দ্বিতীয় রোহিত শর্মা! মিডল অর্ডারে খেলা রোহিতকে ওপেনার করে দেওয়ার পর তিনি রান পেতে শুরু করেছিলেন। সঞ্জুকেও তেমন ওপেনার হিসাবে খেলানোর পরেই তিনি রান পেতে শুরু করেছেন। আগামী দিনে আইপিএলেও তাঁর দল রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে তাঁকে ওপেন করতে দেখলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কিন্তু ধারাবাহিকতা দেখাতে পারবেন তো?

সঞ্জু উপরের দিকে খেলতেই অভ্যস্ত। কিন্তু ভারতীয় দলে ওপেনারের অভাব নেই। রোহিত, যশস্বী জয়সওয়াল, শুভমন গিল, অভিষেক শর্মারা ভারতের বিভিন্ন দলে ওপেনার হিসাবে রয়েছেন। তার মাঝে সঞ্জুর সুযোগ পাওয়াটাই মুশকিল ছিল। দলে সুযোগ পাওয়াটাই ছিল অনিশ্চিত। সঞ্জু ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী দলে ছিলেন। কিন্তু একটি ম্যাচেও খেলার সুযোগ পাননি। কারণ সেখানে ওপেনার ছিলেন রোহিত এবং যশস্বী। উইকেটরক্ষক ছিলেন পন্থ। ফাইনালে নাকি তাঁর সুযোগ পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ম্যাচ শুরুর ১০ মিনিট আগে রোহিত সঞ্জুকে জানিয়েছিলেন যে, ফাইনালে খেলা হবে না তাঁর। সঞ্জু বলেছিলেন, “ম্যাচের আগে আমরা যখন গা গরম করছিলাম, সেই সময়ে রোহিত আমাকে মাঠের ধারে নিয়ে যায়। ও আমাকে বোঝাতে শুরু করে, কেন ফাইনালের দলে আমাকে রাখা হচ্ছে না। আমি ওকে বলেছিলাম, আগে আমরা ম্যাচটা জিতি, তার পর কথা হবে। রোহিত চলে গিয়েছিল, এক মিনিটের মধ্যে আবার ফিরে আসে। রোহিত আমাকে বলে, “আমি জানি তুমি মনে মনে আমাকে অভিশাপ দিচ্ছ। তুমি নিশ্চয়ই খুশি নয়।” আমি বলেছিলাম, “একজন ক্রিকেটার হিসাবে এই ম্যাচ আমি খেলতে চাই। তবে আমার আক্ষেপ থাকবে যে, তোমার মতো এক জন অধিনায়কের সঙ্গে বিশ্বকাপ খেলতে পারলাম না।”

Sanju Samson and Rohit Sharma

সঞ্জু স্যামসনের সঙ্গে কথা বলছেন রোহিত শর্মা। —ফাইল চিত্র।

বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার সুযোগ না পাওয়া সঞ্জু তাঁর কেরিয়ারে অনেক বারই দলে জায়গা পাননি। তার কারণ অবশ্যই ধারাবাহিকতার অভাব। সঞ্জু কোন ম্যাচে রান করবেন, কোন ম্যাচে করবেন না তা বলা খুব কঠিন। বাংলার প্রাক্তন উইকেটরক্ষক-ব্যাটার সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “সঞ্জুর টেকনিক খুব ভাল। কিন্তু ও দলে ধারাবাহিক ভাবে জায়গা পায় না। সেই কারণে মানসিক ভাবেও হয়তো একটা সমস্যা হয় ওর।” সেই সমস্যার সমাধান করেছেন অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে শতরানের পর সঞ্জু বলেন, “দলীপ ট্রফি খেলার সময় সূর্য আমার কাছে আসে। ও বলে, ভারতের হয়ে আগামী সাতটা ম্যাচে তুমি খেলবে। কত রান করছ সেটা ব্যাপার নয়। তুমি খেলবে। ও আমার উপর ভরসাটা দেখিয়েছিল। অধিনায়কের থেকে পাওয়া এই ভরসা আত্মবিশ্বাসটা অনেক বাড়িয়ে দেয়।” সেই আত্মবিশ্বাস দু’টি শতরান এনে দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু ধারাবাহিকতা আনতে পারবে কি?

সঞ্জুর আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল। ২০১৫ সালে তাঁর অভিষেক হলেও ভারতের জার্সিতে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দ্বিতীয় ম্যাচটি তিনি খেলেছিলেন ২০২০ সালে। সেই বছর তিনি ছ’টি ম্যাচ খেলেছিলেন। পরের বছর খেলেছিলেন তিনটি ম্যাচ। ২০২২ সালে তাঁকে ছ’টি ম্যাচে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ২০২৩ সালে খেলেছিলেন আটটি ম্যাচ। সেখানে এই বছর এখনই ১০টি ম্যাচ খেলা হয়ে গিয়েছে সঞ্জুর। ভারতের প্রাক্তন উইকেটরক্ষক সাবা করিমের মতেও সঞ্জুকে টানা সুযোগ না দেওয়াটাই সমস্যা তৈরি করেছে। তিনি বললেন, “ধারাবাহিক ভাবে রান পায়নি সঞ্জু। সুযোগও পায়নি। ওর টেকনিকে কোনও সমস্যা নেই, কিন্তু ক্রিকেটের মানসিকতাটাও বড় ব্যাপার। আইপিএলে সঞ্জু ধারাবাহিক ভাবে রান করেছে। যে কারণেই ভারতের টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা পেয়েছে। অধিনায়ক সূর্যকুমার ওর উপর সেই ভরসাটা দেখিয়েছে। তাতেই বদলে গিয়েছে সঞ্জু।” তাঁর টেকনিকের প্রশংসা করেন সম্বরণও। বললেন, “এই মুহূর্তে ভারতের যে ক’জন উইকেটরক্ষক রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ব্যাটিংয়ে টেকনিকের দিক থেকে সবচেয়ে ভাল সঞ্জু। ও খুব সোজা ব্যাটে খেলে। মিড-অন, মিড-অফের দিক দিয়ে ছক্কা হাঁকায়। প্রতি ম্যাচে রান করতে শুরু করলে ওপেনার হিসাবে দলে নিজের জায়গা পাকা করে ফেলতে পারে ও। রোহিত অবসর নেওয়ায় একটা জায়গা তো ফাঁকা হয়েছেই।”

পর পর দু’টি শতরান করে সঞ্জু অবশ্যই আত্মবিশ্বাস পেয়েছেন। কিন্তু তার আগের আটটি ইনিংসে রান না পাওয়াটাও ভুলে গেলে চলবে না। ভুললে চলবে না রবিবারের শূন্যটাও। না হলে কোন ভারতীয় ক্রিকেটার পর পর দু’টি শতরান করার পরেও বিদ্রুপের শিকার হন?

আরও পড়ুন
Advertisement