দলকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচিয়ে ফিরছেন আকাশ দীপ এবং যশপ্রীত বুমরা। ছবি: এএফপি।
অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের বল গালির উপর দিয়ে পাঠালেন আকাশ দীপ। আর সঙ্গে সঙ্গে সাজঘরে কোচ গৌতম গম্ভীর এবং প্রাক্তন অধিনায়ক বিরাট কোহলি লাফিয়ে উঠে হাত মেলালেন। হাত তালি দিতে শুরু করলেন বর্তমান অধিনায়ক রোহিত শর্মা। সেই সময়ের সাজঘরের ছবিটি সম্প্রচারকারী চ্যানেল যে কোনও সময় ভারতের ম্যাচ জয়ের ছবি বলে চালিয়ে দিতে পারে। কিন্তু ব্রিসবেনে ম্যাচ জেতা থেকে বহু দূরে ভারত। ব্যাটারেরা ব্যর্থ হওয়ায় যশপ্রীত বুমরা এবং আকাশ মিলে ফলো-অনের লজ্জাটা ঢাকলেন। তাতেই দলের ব্যাটারদের মুখে হাসি ফিরল।
প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ৪৪৫ রান করেছিল। ফলো-অন বাঁচাতে হলে ভারতকে ২৪৬ রান করতে হত। সেটাই যে ভারতীয় দলের লক্ষ্য হয়ে গিয়েছিল তা বুঝিয়ে দিল গম্ভীরদের উচ্ছ্বাস। যশস্বী জয়সওয়াল, শুভমন গিল, ঋষভ পন্থ, বিরাট, রোহিতেরা রান না পাওয়ায় জয়ের আশা ছেড়ে দেওয়াই স্বাভাবিক। ব্যাটারদের মধ্যে রান পেলেন শুধু লোকেশ রাহুল। ওপেনার হিসাবে সুযোগ পেয়ে টেস্টে নতুন জীবন পেয়েছেন তিনি। তবে দিনের শুরুতে তাঁর দেওয়া সহজ ক্যাচটা স্টিভ স্মিথ ফেলে না দিলে হয়তো লজ্জার খাতায় তাঁর নামও উঠত। স্মিথ তাঁকে জীবন দিতে রাহুল থামলেন ৮৪ রানে। আউট হলেন স্মিথকে ক্যাচ দিয়েই।
রাহুল দেখালেন ক্রিজ়ে থাকতে পারলে রান আসবেই। ঝুঁকি নিলে হবে না। তাঁর দেখানো পথ অনুসরণ করলেন রবীন্দ্র জাডেজা এবং নীতীশ কুমার রেড্ডি। ভারতের দুই অলরাউন্ডার মিলে ৫৩ রানের জুটি গড়েন। যে জুটি ফলো-অন বাঁচানোর বিশ্বাস তৈরি করে। কিন্তু নীতীশ ৬১ বলে ১৬ রান করে আউট হওয়ার পর জাডেজার সঙ্গীহীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। সিরাজ ক্রিজ়ে যে রকম হাস্যকর ভাবে রান নিতে রান আউট হচ্ছিলেন, তাতে তাঁর উপর ভরসা করা কঠিন ছিল। ১১ বলে ১ রান করে আউট হয়ে যান তিনি। ৭৭ রান করে আউট হন জাডেজাও। প্যাট কামিন্সের বাউন্সার সামলাতে না পেরে উইকেট দিয়ে আসেন। ফলো-অন বাঁচাতে ভারতের তখনও ৩৩ রান বাকি। যা অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছিল।
অসম্ভবকে সম্ভব করলেন বুমরা এবং আকাশ। দলের অধিনায়ক ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলেও সহ-অধিনায়ক বুমরা ব্যাট, বলে দলকে ভরসা দিয়ে চলেছেন। অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন। ব্যাট হাতে ফলো-অন বাঁচানোর ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা নিলেন। তৃতীয় দিনের শেষে বুমরা এক সাংবাদিককে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন তিনি ব্যাট করতে পারেন। চতুর্থ দিনে সেটা কাজে করে দেখালেন। দিনের শেষে ২৭ বলে ১০ রান করে অপরাজিত বুমরা। নেথন লায়ান, মিচেল স্টার্ক এবং কামিন্সকে সামলে অপরাজিত রইলেন তিনি। আর তাঁকে সঙ্গ দিলেন বাংলার আকাশ। ৩১ বলে ২৭ রানে অপরাজিত তিনিও। বুধবার সকালে প্রথম ইনিংসই খেলতে নামবে ভারত। যা মঙ্গলবার এক সময় অসম্ভব মনে হচ্ছিল। বুমরা এবং আকাশ একটি করে ছক্কা মেরেছেন। আকাশ দু’টি চারও মেরেছেন।
বিরাট তাঁর একটি ব্যাট আকাশকে উপহার দিয়েছিলেন। তার পর থেকে সেই ব্যাট নিয়েই খেলতে নামেন আকাশ। মঙ্গলবারও তাই নেমেছিলেন। সেই ব্যাটেই রান করলেন। বুমরা এবং তিনি যখন ব্যাট করছেন, সেই সময় বিরাট সাজঘর থেকে অভিমন্যু ঈশ্বরণকে দিয়ে কিছু বলে পাঠান। হয়তো বলে পাঠালেন, সিঙ্গলস নিয়ে খেলতে। তাড়াহুড়ো না করতে। রোহিত, বিরাটেরা ব্যাট করার সময় মাঝে মাঝে এই কথাগুলো মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য কোচ গম্ভীরেরও কাউকে পাঠানো উচিত। তাতে যদি শট নির্বাচনগুলি ঠিক মতো করেন ভারতের ব্যাটারেরা।
আকাশ এবং বুমরা ব্যাট হাতে সাজঘরে আনন্দ ফিরিয়ে এনেছেন। সোমবার সকালে ঝুঁকে পড়া কাঁধগুলি তাতে যদি আবার চাঙ্গা হয় তাহলে ভারতেরই লাভ। বুধবার ম্যাচের শেষ দিন। ১৯৩ রানে পিছিয়ে থাকা ভারতের বিরুদ্ধে বড় রানের লিড পাবে অস্ট্রেলিয়া। তবে তাতে ম্যাচ জেতা হয়তো সম্ভব হবে না। কারণ বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে ১০ উইকেট নেওয়ার কাজটা কঠিন হবে। বিরাট, রোহিতেরা তাড়াতাড়ি আউট হয়ে গেলেও বুমরা, আকাশেরা যে সহজে হার মানবেন না তা বলাই যায়।