যশস্বী জয়সওয়াল। — ফাইল চিত্র।
সোমবার দুপুর থেকেই যশস্বী জয়সওয়ালের আউট নিয়ে সরগরম ক্রিকেটমহল। যশস্বী আউট ছিলেন কি না, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করা হয়েছিল কি না, তৃতীয় আম্পায়ার সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কি না— তা নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। সেই বিতর্কে এ বার মুখ খুললেন ‘হট স্পট’ প্রযুক্তির নিমার্তারা।
এক সংস্থাকে সাক্ষাৎকারে ‘হট স্পট’ প্রযুক্তির নির্মাতা সংস্থার মালিক ওয়ারেন ব্রেনান বলেছেন, “এটা এক ধরনের গ্লান্স শট। তাই সঠিক ভাবে কোনও শব্দ বোঝা যায়নি। যেটা ছিল সেটা আশেপাশের পরিবেশের আওয়াজ। আমি অডিয়ো ডিরেক্টরের সঙ্গে কথা বলেছি। উনিও বলেছেন কোনও আওয়াজ পাননি। হয়তো হট স্পট এই সমস্যার সমাধান করতে পারত।” ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ়ে ‘হট স্পট’ ব্যবহার করা হচ্ছে না। তার বদলে স্নিকোমিটার ব্যবহার করা হচ্ছে। সে কারণেই নির্ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি বলে মনে করেন ব্রেনান। যদিও ‘হট স্পট’-এর সিদ্ধান্তও নিখুঁত নয় বলে আগে অভিযোগ উঠেছিল।
উল্লেখ্য, মেলবোর্নে তখন শেষ দিনে ব্যাট করছিলেন যশস্বী। ৭১তম ওভারে বল করছিলেন প্যাট কামিন্স। তাঁর বল যশস্বীর লেগ স্টাম্পের বাইরে যাচ্ছিল। সেই বলে ব্যাট চালান ব্যাটার। বল উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারের হাতে যেতেই অস্ট্রেলিয়া আউটের আবেদন করে। কিন্তু মাঠের আম্পায়ার ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের জোয়েল উইলসন আউট দেননি। রিভিউ নেয় অস্ট্রেলিয়া। আউট দেন তৃতীয় আম্পায়ার।
তৃতীয় আম্পায়ার যখন রিপ্লে দেখছেন, তখন স্নিকোতে কোনও বড় স্পাইক দেখা যায়নি। তার পরেও তৃতীয় আম্পায়ার আউট দেওয়ায় বিতর্ক তৈরি হয়। তৃতীয় আম্পায়ার সৈকত বলেন, “ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে বল গ্লাভসে লেগেছে। বলের দিক পরিবর্তন হয়েছে।” সেই যুক্তিতে স্নিকোতে ব্যাটে বা গ্লাভসে বল লাগার কোনও প্রমাণ না পাওয়া গেলেও তৃতীয় আম্পায়ার আউটের সিদ্ধান্ত জানান।
স্নিকোতে কোনও স্পাইক না দেখালেও তৃতীয় আম্পায়ার আউট দেওয়ায় বিতর্ক হয়। কিন্তু রবি শাস্ত্রী বলেন, “তৃতীয় আম্পায়ার চাইলে স্নিকো না-ও মানতে পারেন। সেই ক্ষমতা তাঁর আছে। তিনি দেখছেন বল গ্লাভসে লাগার পর দিক পরিবর্তন করেছে। তাই তিনি আউট দিয়েছেন। আমার মনে হয় সঠিক সিদ্ধান্ত।” সম্প্রচারকারী সংস্থার চ্যানেলে দেখানো হয় বল যশস্বীর ব্যাটের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় দিক পরিবর্তন করেছে, যা তৃতীয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের পক্ষেই কথা বলছে।
বল যশস্বীর গ্লাভসে লাগার ভিডিয়ো দেখা গেলেও স্নিকোতে দেখা যায়নি। এর আগেও বিভিন্ন সময় স্নিকো নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। কখনও বল না লাগলেও স্নিকোতে আওয়াজ ধরা পড়েছে, আবার কখনও ব্যাটে বল লাগলেও তা ধরা পড়েনি। এই প্রযুক্তি কতটা সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। তবে যশস্বীর ক্ষেত্রে আরও একটি যুক্তি প্রযোজ্য। স্নিকোর মাইক থাকে স্টাম্পের পিছনে মাটির নীচে। উইকেটের উচ্চতায় বল থাকলে সেই আওয়াজ যতটা সহজে ধরা পড়ে, সেটা বেশি উচ্চতা থাকলে সম্ভব নয়। যশস্বী ৬ ফুট লম্বা । বল তাঁর মাথার কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। অর্থাৎ, স্টাম্প মাইক ছিল অন্তত ৬ ফুট নীচে। সেই কারণে গ্লাভসের মতো নরম জিনিসে বলের স্পর্শ ধরা না-ও পড়তে পারে স্নিকোতে। তাই তৃতীয় আম্পায়ার তাঁর পর্যবেক্ষণকে গুরুত্ব দিয়েছেন। তৃতীয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে তাই অনেকেই সাহসী সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন।