উইকেট পড়ার পর ভারতীয় ক্রিকেটারদের উচ্ছ্বাস। ছবি: পিটিআই।
১৯৯২ সালের ৪ মার্চ, সিডনি থেকে যে ধারা শুরু হয়েছিল, সেই ধারা অব্যাহত ২০২৩ সালের ১৪ অক্টোবর আমদাবাদেও। এক দিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপ হলেই ভারতের হাতে পাকিস্তানের হার বাধাধরাই হয়ে গিয়েছে। পর পর আট বার জিতল ভারত। শনিবারের ম্যাচের মতো একপেশে খেলা আর হয়েছে কি না অনেকেই মনে করতে পারছেন না। সেই ম্যাচে সেরা ক্রিকেটার যশপ্রীত বুমরা হলেন ঠিকই, কিন্তু ম্যাচের আরও চার জন নায়ক রয়েছেন। তাঁরা কারা?
রোহিত শর্মা: ৬৩ বলে ৮৬ রানের ইনিংস খেলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতকে একাই জিতিয়ে দিলেন রোহিত শর্মা। আবার অধিনায়কোচিত পারফরম্যান্স পাওয়া গেল তাঁর ব্যাট থেকে। শাহিন আফ্রিদিকে ইনিংসের প্রথম বলে চার মারা দিয়ে শুরু। মাঝে পুল শট, কভার ড্রাইভ, হুক— একাধিক শট পাওয়া গেল তাঁর থেকে। রোহিতের জন্যেই এক বারও মনে হয়নি পাকিস্তানের হাতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ চলে গিয়েছে। এতটাই দাপট ছিল। পাকিস্তানের কোনও বোলারকেই রেয়াত করেননি তিনি। শুরু থেকে সাজঘরে ফেরা পর্যন্ত একটানা শাসন করে গেলেন পাক বোলারদের।
মহম্মদ সিরাজ়: কেন মহম্মদ শামিকে না নিয়ে সিরাজ়কেই রেখে দেওয়া হল তা নিয়ে ম্যাচের আগে অনেক বিতর্ক হয়েছে। প্রথম ওভারে একগাদা রান দিয়ে সিরাজ় সেই সমালোচনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তবে যে ভাবে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিলেন তা সব সমালোচনা থামিয়ে দিল। পাকিস্তানের ওপেনিং জুটি যে মুহূর্তে ক্রিজে জমে যেতে শুরু করেছে তখনই ফেরালেন গত ম্যাচের শতরানকারী আবদুল্লাহ শফিককে। ম্যাচের অন্যতম সেরা উইকেটও এল তাঁর বলেই। তৃতীয় উইকেটে জমে গিয়েছিলেন বাবর আজম এবং মহম্মদ রিজ়ওয়ান। সেই সময় বলের গতিতে বৈচিত্র ঘটিয়ে তাঁকে ফেরালেন সিরাজ়।
যশপ্রীত বুমরা: বাবর আউট হলেও ভারতের ভয় তখনও ছিল। ক্রিজে ছিলেন মহম্মদ রিজ়ওয়ান। একার হাতে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে যাঁর কোনও জুড়ি নেই। পাকিস্তানকে বিপদে ফেলার জন্যে রিজ়ওয়ানকে ফেরানো দরকার ছিল। সেটাই করলেন বুমরা। ৩৪তম ওভারের শেষ বলে অফ কাটার দিয়েছিলেন। সামনের পায়ে খেলতে চেয়েও বলের ধারেকাছে পৌঁছতে পারেননি রিজ়ওয়ান। ব্যাট-প্যাডের ফাঁক দিয়ে বল স্টাম্প ভেঙে দেয়। নিজের পরের ওভারে শাদাব খানকেও কার্যত একই ভাবে আউট করেন বুমরা।
কুলদীপ যাদব: চার বছর আগের বিশ্বকাপে বাবর এবং ফখর জ়মানের জুটি ভেঙেছিলেন তিনি। এ দিন সিরাজ়ের বলে বাবর ফেরার পর পাকিস্তানের আত্মবিশ্বাস গুঁড়িয়ে দিলেন কুলদীপ। একই ওভারে ফেরালেন সাউদ শাকিল এবং ইফতিকার আহমেদকে। কুলদীপের বল বুঝতে না পেরে এলবিডব্লিউ হলেন শাকিল। অন্য দিকে, কুলদীপকে সুইপ মারতে গিয়ে নিজেরই গ্লাভসে লেগে ইফতিকারের উইকেট ভেঙে গেল। এক দিনের ক্রিকেটে চায়নাম্যান স্পিনার হিসাবে সবচেয়ে বেশি উইকেট পেলেন কুলদীপ (১৫৭)।
শ্রেয়স আয়ার: অর্ধশতরান পাওয়া গেল শ্রেয়সের ব্যাট থেকেও। শুভমন এবং কোহলি কম রানে ফেরার পর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে পারত ভারতও। উল্টো দিকে রোহিতকে একা দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য হয়তো দেখতে হত। কিন্তু শ্রেয়স এসে সেই যে উইকেটে জমে গেলেন, ম্যাচ শেষ হওয়া পর্যন্ত তাঁর সেই টিকে থাকার মানসিকতাই ধরা পড়ল।