শেষ বলে নিউ জ়িল্যান্ডকে জেতানোর পর উইলিয়ামসনকে জড়িয়ে ধরেছেন ওয়াগনার। হতাশ শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা। ছবি: টুইটার।
টান টান উত্তেজনার মধ্যে শেষ হল নিউ জ়িল্যান্ড-শ্রীলঙ্কার প্রথম টেস্ট। বৃষ্টি বিঘ্নিত পঞ্চম দিনের শেষ বলে জয় তুলে নিল নিউ জ়িল্যান্ড। প্রথম টেস্টে শ্রীলঙ্কাকে ২ উইকেটে হারিয়ে ভারতকে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে তুলে দিল গত বারের চ্যাম্পিয়নরা।
টেস্ট ক্রিকেটের এমন নাটকীয় এবং উত্তেজনাময় সমাপ্তি খুব বেশি দেখা যায় না। প্রথম টেস্টের শেষ বেলায় নিউ জ়িল্যান্ড-শ্রীলঙ্কার টান টান লড়াই আরও এক বার বুঝিয়ে দিল, লাল বলের ক্রিকেট কতটা রুদ্ধশ্বাস হতে পারে। জয়ের জন্য ৭০ ওভারে আয়োজকদের করতে হত ২৮৫ রান। ৬৭ ওভারের শেষেও সুবিধাজনক জায়গায় ছিল নিউ জ়িল্যান্ডরা। সে সময় নিউ জ়িল্যান্ডের জয়ের জন্য দরকার ছিল ২০ রান। অন্য দিকে শ্রীলঙ্কার দরকার ছিল ৫ উইকেট। ৬৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে অসিতা ফার্নান্ডো আউট করে দেন মিচেল ব্রেসওয়েলকে। উইকেটের অন্য প্রান্তে ছিলেন কেন উইলিয়ামসন। তিনিই তখন নিউ জ়িল্যান্ডের বড় ভরসা। শ্রীলঙ্কার দুশ্চিন্তা। কারণ, ২২ গজে স্বীকৃত ব্যাটার বলতে তিনি একা। ১০ রানে ব্রেস ওয়েল আউট হওয়ায় রান তোলা গতি কমে যায় নিউ জ়িল্যান্ডের। ৬৮তম ওভারে ওঠে ৫ রান।
৬৯তম ওভার শুরু হওয়ার সময় কিউয়িদের দরকার ছিল ২ ওভারে ১৫ রান। শ্রীলঙ্কার ৪ উইকেট। এই ওভারে প্রতিপক্ষ শিবিরে আবার ধাক্কা দেয় দাসুন শনাকার দল। লাহিরু কুমারার প্রথম দু’বলে নিউ জ়িল্যান্ড ৩ রান তুললেও তৃতীয় বলে আউট হয়ে যান টিম সাউদি। আরও চাপে পড়ে যায় কিউয়িরা। জয়ের জন্য তখন তাঁদের দরকার ৯ বলে ১২ রান। টেস্ট ক্রিকেটে তখন সাদা বলের ক্রিকেটের উত্তেজনা। নতুন সঙ্গী ম্যাট হেনরির সঙ্গে জুটিতে ৬৯তম ওভারের বাকি তিন বলে ৪ রান তোলেন উইলিয়ামসন।
৭০তম অর্থাৎ টেস্টের শেষ ওভার শুরু হওয়ার সময় নিউ জ়িল্যান্ডের দরকার ছিল ৮ রান। শ্রীলঙ্কার ৩ উইকেট। ফার্নান্ডোর প্রথম দু’বলে ২ রান তোলেন উইলিয়ামসনরা। তখনও খেলা কিছুটা হলেও হেলে আয়োজকদের দিকে। কিন্তু হাল ছেড়ে দেয়নি সফরকারীরাও। শেষ ওভারের তৃতীয় বলে দ্রুত রান খুচরো রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে যান হেনরি। স্নায়ুর চাপ আরও বেড়ে যায় আয়োজকদের উপর। তখনও দরকার ৩ বলে ৫ রান। নিউ জ়িল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক বোধহয় ঠিক করে নেন, যা করার তাঁকেই করতে হবে। পরের বলেই বাউন্ডারি মেরে চাপ হালকা করলেন উইলিয়ামসন। দু’দলের রান সমান সমান। হারের সম্ভাবনা নেই। জয়ের জন্য দরকার ২ বলে ১ রান। না হলেও অন্তত হারতে হবে না ঘরের মাঠে। শ্রীলঙ্কা অবশ্য তখনও আশা ছাড়েনি। যদি অমীমাংসিতও রাখা যায় ম্যাচ! ৭০তম ওভারের পঞ্চম বলে রান নিতে পারলেন না উইলিয়ামসন। বাউন্সার দিয়ে শ্রীলঙ্কার আশা বাঁচিয়ে রাখলেন ফার্নান্ডো। আম্পায়াররা চাইলে ওয়াইড ডাকতে পারতেন। তা না হওয়ায় ম্যাচের শেষ জয়ের জন্য বলে ১ রান দরকার ছিল উইলিয়ামসনদের। আর একটা ডট বল মানেই হার বাঁচিয়ে ফেলবে শ্রীলঙ্কা।
ক্রাইস্ট চার্চের গ্যালারিতে তখন পিন পড়লেও শোনা যাবে। নিউ জ়িল্যান্ড জিততে পারবে? শ্রীলঙ্কা হার বাঁচাতে পারবে? এক বল পরেই ফয়সালা হয়ে যাবে। কিছুটা সময় নিয়ে, অধিনায়কের সঙ্গে পরামর্শ করে বোলিং মার্ক থেকে দৌড় শুরু করলেন ফার্নান্ডো। ব্যাটার সেই উইলিয়ামসন। টান টান উত্তেজনার মধ্যে ফার্নান্ডোর বলে পরাস্ত হলেন অভিজ্ঞ ব্যাটার। পুল করার চেষ্টা করলেও ব্যাটের সঙ্গে বলের সংযোগ হল না। বল ব্যাটে না লাগলেও রানের জন্য দৌড় শুরু করলেন উইলিমাসন। আগেই দৌড়তে শুরু করেছিলেন ওয়াগনার। শ্রীলঙ্কার উইকেটরক্ষক নিরোশান ডিকওয়ালা বল ধরেই ছুড়ে দিলেন ফার্নান্ডোকে। তিনিও মুহূর্তে ভেঙে দিলেন উইকেট। উইলিয়ামসন কি ক্রিজে পৌঁছেছেন? ভাল করে রি-প্লে দেখে তৃতীয় আম্পায়ার জানালেন অপরাজিত উইলিয়ামসন (১২১)। ১ রান বাই। ফটো ফিনিশে জয়ী নিউ জ়িল্যান্ড। শ্রীলঙ্কা হেরে গেল। উইলিয়ামসনের দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই আর শেষ বলে প্রাণপণ দৌড় বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে তুলে দিল রোহিত শর্মাদের।