অ্যাশেজের চতুর্থ টেস্টে প্রথম দিন দাপট দেখালেন ব্রডেরা। ছবি: আইসিসি।
অ্যাশেজ সিরিজ়ের চতুর্থ টেস্টের শুরুটা খারাপ করেনি অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ২ ঘণ্টায় ওভার প্রতি ৪.২৮ রান তোলেন ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিথ স্মিথেরা। তবু প্রথম দিনের খেলার শেষে কিছুটা চাপে প্যাট কামিন্সের দল। প্রথম দিনের শেষে অস্ট্রেলিয়ার রান ৮ উইকেটে ২৯৯। বুধবার টেস্ট ক্রিকেটে ৬০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করলেন ইংল্যান্ডের স্টুয়ার্ট ব্রড।
বুধবার টস জিতে প্রথম ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস। ইংল্যান্ডকে শুরুতেই সাফল্য এনে দেন ব্রড। অস্ট্রেলিয়ার ফর্মে থাকা ওপেনার উসমান খোয়াজাকে (৩) আউট করেন তিনি। আগের টেস্টগুলিতে রান না পাওয়া ওয়ার্নার অবশ্য ম্যাঞ্চেস্টারে শুরু করেছিলেন আগ্রাসী মেজাজে। ম্যাচের প্রথম বলেই ব্রডকে চার মেরে শুরু করেন তিনি। যদিও এই ম্যাচেও বড় রান পেলেন না। ৩২ রান করে তিনি আউট হলেন ক্রিস ওকসের বলে। তিন নম্বরে নামা মার্নাস লাবুশেন অর্ধশতরান পেলেন। দিনের প্রথম জল পানের বিরতির পর খেলা শুরু করতে মিনিট ৫ দেরি হল তাঁর জন্যই। উইকেটের সোজাসুজি গ্যালারির একটি চেয়ারে সূর্যের আলো পড়ায় তাঁর বল দেখতে অসুবিধা হচ্ছিল। আম্পায়ারেরা সেই চেয়ার ঢাকার ব্যবস্থা করার পর আবার খেলা শুরু হয়। খোয়াজা দ্রুত আউট হওয়ায় দলের ইনিংস তৈরি করার চেষ্টা করেন লাবুশেন। ভালই খেলছিলেন। কিন্তু অর্ধশতরান পূর্ণ করার পর তাঁর মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটে। ৫১ রান করে মইন আলির বলে এলবিডব্লিউ হন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার মিডল অর্ডারের কেউই বড় রান করতে পারলেন না। স্মিথ, ট্র্যাভিস হেড ভাল শুরু করেও আউট হয়ে গেলেন। দলকে তেমন নির্ভরতা দিতে পারলেন না তাঁরা। স্মিথের ব্যাট থেকে এল ৪১ রান। তিনি আউট হলেন মার্ক উডের বলে। হেড (৪৮) হাতছাড়া করলেন অর্ধশতরান। হেডকে ফিরিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে ৬০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করলেন ব্রড। মিচেল মার্শও আউট হলেন ৫১ রানে করে। তিনি ওকসের শিকার। চতুর্থ টেস্টে দলে ফেরা ক্যামেরুন গ্রিন সাফল্য পেলেন না। মাত্র ১৬ রান করে আউট হলেন ওকসের বলেই। ওকসের শিকার তালিকায় আছেন অস্ট্রেলিয়ার উইকেটরক্ষক-ব্যাটার অ্যালেক্স ক্যারেও (২০)। দিনের শেষে ২২ গজে অপরাজিত রয়েছেন স্টার্ক (২৩) এবং কামিন্স (১)।
ষষ্ঠ এবং সপ্তম উইকেট একই ওভারে হারিয়ে হারিয়ে চাপে পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। সে সময় কামিন্সের দলের রান ছিল ৭ উইকেটে ২৫৫। ওকসের অনবদ্য বোলিং ইংল্যান্ডকে সে সময় বসিয়ে দেয় চালকের আসনে। এর পর কিছুটা ধীরে খেলতে শুরু করেন কামিন্সেরা। উইকেট বাঁচিয়ে খেলার উপর জোর দেন তাঁরা। ইংল্যান্ডের বোলারেরা নিয়ন্ত্রিত বোলিং করলেন। ভাল ফিল্ডিংও করলেন স্টোকসেরা। অন্য দিকে ধারাবাহিক ব্যবধানে উইকেট হারাল অস্ট্রেলিয়া। ফলে প্রথম দিনের খেলায় কখনওই টেস্ট বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের প্রত্যাশিত মানে দেখা গেল না। ইংল্যান্ডের সফলতম বোলার ওকস। ৫২ রানে ৪ উইকেট নিলেন তিনি। ৬৮ রান দিয়ে ২ উইকেট ব্রডের। ১টি করে উইকেট পেয়েছেন উড এবং মইন।
এ দিন বিশ্বের দ্বিতীয় জোরে বোলার হিসাবে টেস্ট ক্রিকেটে ৬০০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়লেন ব্রড। এর আগে এই কৃতিত্ব শুধু ছিল ইংল্যান্ডেরই আর এক জোরে বোলার জেমস অ্যান্ডারসনের। অ্যাশেজ সিরিজ়ের চতুর্থ টেস্ট শুরুর আগে ব্রডের ঝুলিতে ছিল ৫৯৮টি উইকেট। বুধবার ম্যাঞ্চেস্টারে অস্ট্রেলিয়ার উসমান খোয়াজা এবং হেডকে আউট করে ৬০০ উইকেট পূর্ণ করলেন তিনি। অ্যান্ডারসনের টেস্ট উইকেট সংখ্যা ৬৮৮।
জোরে বোলার হিসাবে বিশ্বের দ্বিতীয় হলেও সব মিলিয়ে পঞ্চম বোলার হিসাবে টেস্ট ক্রিকেটে ৬০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করলেন ব্রড। টেস্টে সব থেকে বেশি উইকেটের মালিক শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন স্পিনার মুথাইয়া মুরলিধরন। তাঁর ঝুলিতে হয়েছে ৮০০টি টেস্ট উইকেট। দ্বিতীয় স্থানে অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্ন। প্রয়াত ক্রিকেটার টেস্টে ৭০৮টি উইকেট পেয়েছিলেন। তৃতীয় স্থানে রয়েছেন অ্যান্ডারসন। চতুর্থ স্থানে অনিল কুম্বলে। ভারতের প্রাক্তন অধিনায়কের ৬১৯টি টেস্ট উইকেট রয়েছে।
সিরিজ়ে ১-২ ব্যবধানে পিছিয়ে রয়েছেন স্টোকসেরা। তাই সিরিজ় হার বাঁচাতে হলে ম্যাঞ্চেস্টারে কোনও ভাবেই হারা চলবে না তাঁদের। অ্যাশেজ সিরিজ় মানে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া দু’দেশের কাছেই মর্যাদার লড়াই। কারণ সিরিজ়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক ইতিহাস। যা কিছুটা ব্যাঙ্গাত্মক। খানিকটা শোকেরও। ১৮৮২ সালে ওভালে আয়োজিত টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাছে প্রথম হেরেছিল ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ফ্রেড স্পফোর্থের অনবদ্য বোলিংয়ের কাছে হারতে হয়েছিল ইংরেজদের। চতুর্থ ইনিংসে ৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিততে পারেনি তারা। স্পফোর্থ ৪৪ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন। ০-১ ব্যবধানে সিরিজ় হেরে গিয়েছিল। পরের দিন ইংল্যান্ডের সংবাদপত্র ‘দ্য স্পোর্টিং টাইমস্’ তাদের প্রতিবেদনে ক্রিকেট দলের তীব্র সমালোচনা করেছিল। লেখা হয়েছিল, ইংরেজ ক্রিকেটকে চিরস্মরণীয় করে রাখল ওভালের ২৯ আগস্ট, ১৮৮২ তারিখটি। গভীর দুঃখের সঙ্গে বন্ধুরা তা মেনে নিয়েছে। ইংরেজ ক্রিকেটকে ভস্মীভূত করা হয়েছে এবং ছাইগুলো অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া হয়েছে। এর পরের বছর সিরিজ় পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় যায় ইংল্যান্ড। সংবাদমাধ্যমের ব্যঙ্গ মনে রেখে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক আইভো ব্লাই বলেছিলেন, তাঁরা অ্যাশেজ পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন।
সে সময় কয়েক জন অস্ট্রেলীয় মহিলা ব্লাইকে আগের সিরিজ়ে পরাজয় নিয়ে পাল্টা ব্যঙ্গ করে ছাই ভর্তি একটি পাত্র দিয়েছিলেন। যাতে ছিল উইকেটের উপরে থাকা বেলের ছাই। তার পর থেকে দু’দেশের টেস্ট সিরিজ় ‘অ্যাশেজ’ বলে পরিচিত হয়। ব্লাই অবশ্য ছাইয়ের সেই আধারটি ব্যক্তিগত উপহার হিসাবে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। বিজয়ী দলকে ট্রফি হিসাবে তা দেওয়া হত না তখন। ব্লাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী লর্ডসে এমসিসি জাদুঘরে সেই পাত্রটি দান করে দিয়েছিলেন।
(ভ্রম সংশোধন: এই প্রতিবেদনে ইংল্যান্ডের অধিনায়কের নাম প্রথমে স্টুয়ার্ট ব্রড লেখা হয়েছিল। ইংরেজ অধিনায়কের নাম বেন স্টোকস। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।)