অনিল কুম্বলে। —ফাইল চিত্র।
বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ় টেস্ট সিরিজ়। এই দুই দেশের টেস্ট সিরিজ়ের কথা হলে ২০০২ সালের অ্যান্টিগুয়া টেস্টের কথা উঠবেই। ২১ বছর আগে সেই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের জোরে বোলার মরভিন ডিলনের বাউন্সার ভেঙে দিয়েছিল অনিল কুম্বলের চোয়াল। অকুতোভয় কুম্বলে চোয়ালে ব্যান্ডেজ বেঁধে বল করেছিলেন ব্রায়ান লারার বিরুদ্ধে। কেন তাঁকে ওই অবস্থাতেও বল করতে হয়েছিল জানিয়েছেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক।
কুম্বলে বলেছেন, ‘‘আসলে কয়েকটা উইকেট নেওয়ার দরকার ছিল। চোট পাওয়ার পরে সাজঘরে ফিরে এসে দেখেছিলাম, সচিন তেন্ডুলকরকেও বল করতে হচ্ছে। স্পিন বল করার মতো দলে আর কেউ ছিল না। তখন ওদের ওয়াভেল হাইন্ডস ব্যাট করছিল। ওর পরে কারা ছিল মনে নেই এখন। পরিস্থিতি দেখে মনে হয়েছিল, মাঠে নেমে গোটা দুয়েক উইকেট নিতে হবে আমাকে। ভেবেছিলাম দিনের শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের তিন-চারটে উইকেট ফেলে দিতে পারলে আমরা সুবিধাজনক জায়গায় থাকতে পারব। জেতার ভাল সুযোগ থাকবে আমাদের। সে জন্যই আবার বল করতে নেমেছিলাম ব্যান্ডেজ জড়িয়ে।’’
মাঠে নামার কথা নিজেই ফিজিয়োকে বলেছিলেন কুম্বলে। জানিয়েছেন, ‘‘ফিজিয়ো অ্যান্ড্রু লিপাসকে গিয়ে বলেছিলাম, আমি মাঠে নামব। তুমি ব্যবস্থা করো। চেয়েছিলাম, দেশে ফেরার আগে নিজেকে অন্তত যেন বোঝাতে পারি যে চেষ্টার ত্রুটি রাখিনি।’’
লিপাসকে যেমন কুম্বলে বলেছিলেন তাঁকে মাঠে নামানোর ব্যবস্থা করতে, তেমনি স্ত্রী চেতনাকে বলেছিলেন দেশে ফিরলে অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করতে। আহত হওয়ার পরেই ফোনে কথা হয়েছিল চেতনার সঙ্গে। ব্যান্ডেজ নিয়েই যে ওই ম্যাচে বল করবেন, সেটাও তখনই বলে দিয়েছিলেন স্ত্রীকে। কুম্বলের কথা বিশ্বাস করেননি চেতনা। কুম্বলে বলেছেন, ‘‘চেতনাকে ফোনে জানিয়েছিলাম, আমাকে অস্ত্রোপচার করাতে হবে। দেশে ফিরছি। তুমি বেঙ্গালুরুতে অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করো। তবে দেশে ফেরার আগে কয়েক ওভার বল করব। আমার কথা বিশ্বাস করেনি চেতনা। ভেবেছিল মজা করছি। আমার শেষ কথায় তেমন পাত্তা দেয়নি। পরে সত্যিই আমাকে বল করতে দেখে অবাক হয়েছিল।’’
দীর্ঘ ক্রিকেটজীবনে বিশ্বের প্রথম সারির অনেক ব্যাটারকে বল করেছেন কুম্বলে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে প্রাক্তন অধিনায়ক বলেছেন, ‘‘আমার সময়ের কয়েক জন সেরা ব্যাটার আমাদের দলেই ছিল। একটা ম্যাচে সচিন, রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, বীরেন্দ্র সহবাগ, ভিভিএস লক্ষ্মণের বিরুদ্ধে বল করা মানে বুঝতে পারছেন কতটা কঠিন। একটা দুঃস্বপ্নের মতো। তবে কয়েক জন দুর্দান্ত ব্যাটারকে বল করার সুযোগ পেয়েছি।’’
বিদেশিদের মধ্যে অরবিন্দ ডি সিলভা, ব্রায়ান লারা, ইনজামাম উল হক, ম্যাথু হেডেন এবং জ্যাক কালিসকে সেরা ব্যাটার হিসাবে বেছে নিয়েছেন প্রাক্তন লেগ স্পিনার। কুম্বলে বলেছেন, ‘‘ডি সিলভাকে বল করা খুব কঠিন ছিল। আর এক জনের কথা বলব, লারা। প্রতিটি বলে অন্তত তিন রকম শট মারার ক্ষমতা ছিল ওর। কী করবে বোঝা যেত না। আপনি হয়তো এক রকম ভেবে বল করলেন, লারা সম্পূর্ণ অন্য রকম একটা শট মেরে দিল। এগিয়ে এসে মারার চেষ্টা করছে দেখে হয়তো ভাববেন গতিতে পরাস্ত করবেন। ও বলের গতি ব্যবহার করে এগিয়ে এসেও লেট কাট মেরে চার রান তুলে নেবে। এতটাই দক্ষ ব্যাটার ছিল লারা।’’
অনেকেই বলছেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এখন এতটাই খারাপ খেলছে, রোহিত শর্মার দল সহজেই জিতবে। কিন্তু কুম্বলে তা মনে করছেন না। তাঁর মতে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনও সিরিজ়ই সহজ নয়। কারণ প্রতি সিরিজ়েই বিপক্ষের দু’এক জন করে সেরা ক্রিকেটারকে সামলাতে হয়। কুম্বলে বলেছেন, ‘‘প্রতি সিরিজ়ে প্রতিপক্ষ দলে এমন দু’এক জন থাকত, যাদের বল করা বেশ কঠিন ছিল। যেমন কালিসের বিরুদ্ধে বল করা কঠিন। কখনও নিজের উইকেট ছুড়ে দিত না। ইনজামামকে বল করাও বেশ কঠিন ছিল। ম্যাথু হেডেন কঠিন প্রতিপক্ষ ছিল। জানতাম ওকে এলবিডব্লুউ আউট করা সম্ভব নয়।’’
বিশ্বের মাত্র তৃতীয় বোলার হিসাবে টেস্টের এক ইনিংসে ১০ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে কুম্বলের। ১৯৯৯ সালে দিল্লিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ইনিংসে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। এমন হতে পারে ভেবেছিলেন? কুম্বলে বলেছেন, ‘‘৬ উইকেট পাওয়ার পর চা পানের বিরতিতে এক বার ভাবনাটা মাথায় এসেছিল। সপ্তম উইকেট হিসাবে সেলিম মালিকের উইকেট পাই। তার পরে একটি ওভারের পঞ্চম এবং ষষ্ঠ বলে পর পর দু’টো উইকেট পেয়েছিলাম। ন’উইকেট পাওয়ার মনে হয়েছিল ১০ উইকেট পেয়েও যেতে পারি।’’
কুম্বলের আগে প্রথম এই কৃতিত্ব করে দেখান ইংল্যান্ডের জিম লেকার। ১৯৫৬ সালে এই অফ স্পিনার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ইনিংসে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন। সর্বশেষ এই কীর্তি করে দেখান নিউজিল্যান্ডের বাঁহাতি স্পিনার অজাজ পটেল। তিনি ২০২১ সালে ভারতের বিরুদ্ধে মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়েতে প্রথম ইনিংসে সবকটি উইকেটই নিয়েছিলেন।