আফগানিস্তান দল। ছবি: পিটিআই।
বিশ্বকাপে হারের হ্যাটট্রিক পাকিস্তানের। ভারত, অস্ট্রেলিয়ার পর আফগানিস্তানের কাছেও হেরে গেল তারা। কিন্তু এই হারকে কি অঘটন বলা যায়? আগের ম্যাচে গত বারের বিশ্বজয়ী ইংল্যান্ডকে হারিয়ে খেলতে এসেছিল আফগানিস্তান। তাদের তুলনায় পাকিস্তান কিছুটা সহজ দল। ভারতের কাছে ৭ উইকেটে এবং অস্ট্রেলিয়ার কাছে ২২৯ রানে হেরে খেলতে নেমেছিল পাকিস্তান। মনোবল দুমড়ে থাকা একটি দলের বিরুদ্ধে আফগানিস্তান হাসতে হাসতে জিতল আট উইকেটে। ২৮৩-র মতো কঠিন লক্ষ্য়মাত্রাও মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে তুলে ফেলল তারা। কেউ শতরান করেননি। কিন্তু চার ব্যাটারই দলের হয়ে অবদান রেখে গেলেন।
বাবর আজমের অধিনায়কত্ব নিয়ে অনেক দিন থেকেই প্রশ্ন উঠছে। সোমবারের ম্যাচের পর সেই দাবি আরও জোরালো হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সেই ইমরান খানের আমল থেকে পাকিস্তানের ফিল্ডিং নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এখনও পর্যন্ত তার কোনও বদল হয়নি। এ দিনের ম্যাচে অন্তত তিনটি ক্যাচ ফেলেছেন পাকিস্তানের ফিল্ডারেরা। গুরবাজ়, জ়াদরান, রহমত সবাই এক বার করে প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। এ ছাড়া অসংখ্য ফিল্ডিং মিস্ তো রয়েছেই। সহজ বলও গলিয়েছেন হাসান আলিরা।
পাশাপাশি অধিনায়ক হিসাবে বুদ্ধি কাজে লাগাতে পারছেন না বাবর। দলের পেস বিভাগ ভাল। কিন্তু আফগানিস্তান যখন ক্রমশ লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন বাবর একের পর এক ওভার করিয়ে গেলেন স্পিনারদের দিয়ে। নির্বিষ বোলিং খেলতে আফগানিস্তানের কোনও অসুবিধাই হল না। খুচরো রান নিয়ে গেল তারা। বোলারদের ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও বাবরদের দুর্বলতা ধরা পড়েছে।
বিশ্বকাপের সূচি আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগেই পাকিস্তান আপত্তি তুলেছিল দু’টি ম্য়াচ নিয়ে। আফগানিস্তানের স্পিনারদের কথা ভেবে তারা এই ম্যাচটি খেলতে চেয়েছিল বেঙ্গালুরুতে। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ চেন্নাইয়ে চেয়েছিল তারা। হয়েছে উল্টোটাই। আইসিসি সূচিতে পরিবর্তন করেনি। ফলে বেঙ্গালুরুতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারার পর চেন্নাইয়ে আফগানিস্তানের কাছেও হারল পাকিস্তান।
আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে শুরুটা ভাল করেও বেশি দূর এগোতে পারেনি পাকিস্তান। দুই ওপেনার আবদুল্লাহ শফিক এবং ইমাম উল হক শুরু থেকে চাপ তৈরি করেন আফগান বোলারদের উপরে। এ বছরে প্রথম দশ ওভারে একটিও ছয় মারতে পারেননি পাকিস্তানের ব্যাটারেরা। সেই ‘ধারা’ বদলাল এ দিন। শফিক একটি নয়, দু’-দু’টি ছক্কা মারলেন। প্রথম নবীন উল হককে পুল করে। দ্বিতীয়টি মুজিব উর রহমানকে লং অফে।
কিন্তু ইমামের খারাপ ফর্ম অব্যাহত। এই ম্যাচেও তাঁর ব্যাট থেকে বড় রান এল না। ১৭ রানেই আউট। শফিকের সঙ্গে জুটি বাঁধলেন পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর। দু’জনে মিলে ৫৪ রানের জুটি তৈরি করার পর ফিরলেন শফিক। তার আগে অর্ধশতরান পূরণ করেছেন। বাবর এবং মহম্মদ রিজ়ওয়ানের কাঁধেই ফের দলের ধস রক্ষার দায়িত্ব এল। কিন্তু সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ রিজ়ওয়ান। বাবর একটি দিক ধরে রাখলেও রিজ়ওয়ান ফিরলেন ৮ রানেই।
নির্ভরযোগ্য ব্যাটার সাউদ শাকিলের (২৫) থেকেও বড় রান পাওয়া গেল না। তবু পাকিস্তান যে ভদ্রস্থ স্কোরে পৌঁছল, তার নেপথ্যে বাবর (৭৪) ছাড়াও অবদান রয়েছে শাদাব খান এবং ইফতিকার আহমেদের। এই ম্যাচে মহম্মদ নওয়াজ়ের জায়গায় ফিরেছিলেন শাদাব। তিনি ৪০ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে গেলেন। একই রান করলেন ইফতিকারও।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানকে জিতিয়েছিল তাদের ওপেনিং জুটি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও সেই ওপেনিং জুটি ম্যাচ বার করে দিল। আইপিএলে খেলার সময় কেকেআরের জার্সিতে পরিচিত রহমানুল্লাহ গুরবাজ়কে দেখা যায়নি। দেশের জার্সিতে তিনি একেবারে অন্য রকম। আগের ম্যাচের মতো এ দিনও শতরান পেলেন না। কিন্তু পাকিস্তানের বোলারদের শাসন করে গেলেন আগাগোড়া।
শাহিন আফ্রিদি হোন কি হাসান আলি, শুরুর দিকে দুই ওপেনারের হাতে শাসিত হতে হল। শাহিনের বোলিং এখনও বিশ্বকাপে ছন্নছাড়া দেখাচ্ছে। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধেও তাঁর দৈন্যদশা বেরিয়ে পড়ল। ৯টি চার এবং ১টি ছয়ের সাহায্যে ৫৩ বলে ৬৫ রান করে ফিরলেন গুরবাজ়। দলের রান তখন ১৩৫।
তিন নম্বরে নামা রহমত শাহ কোনও তাড়াহুড়োর দিকে যাননি। ধীর গতিতে অপর ওপেনার ইব্রাহিম জ়াদরানের সঙ্গে জুটি গড়ার কাজে মন দিলেন। গুরবাজ় ফিরে যাওয়ার পর খোলস ছেড়ে বেরোলেন জ়াদরানও। শুরুটা ধীর গতিতে করেও আগ্রাসী খেলতে শুরু করলেন। এগিয়ে যাচ্ছিলেন শতরানের দিকে। কিন্তু ফিরতে হল ৮৭ রানে। দলের রান তখন ১৯০।
আফগানিস্তান এমন একটা দল, যারা অতীতে এমন অবস্থা থেকেও হেরে গিয়েছে। কিন্তু সোমবার তেমন হওয়ার কথা ছিল না। পাকিস্তানের বোলারেরাও হতে দিলেন না। তাঁদের বোলিংয়ের কোনও ছন্দ পাওয়া যায়নি। শেষ মুহূর্তে কামড় দেওয়া বোলিংও দেখা যায়নি। পরের দিকে পেসারদের নিয়ে এলেও তত ক্ষণে ম্যাচ আফগানিস্তানের পকেটে। ৭৭ রানে অপরাজিত থাকলেন রহমত। ৪৮ রানে অপরাজিত থাকলেন শাহিদি।