জেক পলের সঙ্গে লড়াই মাইক টাইসনের। ছবি: এএফপি।
শুক্রবার জেক পলকে চড় মেরেছিলেন মাইক টাইসন। শনিবার সেই পলের বিরুদ্ধে হেরেই তাঁকে বুকে টেনে নিলেন। তখন কে বলবে তিনি লৌহমানব টাইসন! প্রতিপক্ষের কান কামড়ে দেন, বিমানে সহযাত্রীকে ঘুষি মারেন। সেই টাইসন বড় দাদার মতো জড়িয়ে ধরলেন পলকে। আগের দিনের চড় মারার ঘটনা তখন অতীত। টাইসন হারলেন ৭৪-৭৮ ফলে।
বয়সের তফাত ৩১ বছর। টাইসন যখন অবসর নিয়েছিলেন, তখন পলের বয়স ছিল মাত্র ৮ বছর। কিন্তু ৫৮ বছরের টাইসন রিংয়ে এখনও লৌহমানব। শনিবার সকালে (ভারতীয় সময় অনুযায়ী) হয়তো সেটা প্রমাণ করার জন্যই নেমেছিলেন তিনি। সেটা দেখার জন্য ভোর থেকেই বহু অনুরাগীর নজর ছিল মোবাইলে। যদিও টাইসন এবং পলের খেলা শুরু হল সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ। ম্যাচ জিতলেন ২৭ বছরের পল, মন জিতলেন টাইসন।
৫৮ বছর বয়সের টাইসন স্বাভাবিক ভাবেই আগের থেকে মন্থর। আট রাউন্ডের লড়াইয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডের পরেই হাঁপিয়ে গিয়েছিলেন। পলকে হয়তো নিজের পুরো শক্তি দিতেই হয়নি টাইসনের বিরুদ্ধে। তবুও কেরিয়ার শেষে বলতে তো পারবেন, তিনি টাইসনকে হারিয়েছেন। সে যতই ৫৮ বছরের টাইসন হোক না কেন। সারা জীবনে যে বক্সার মাত্র ৬টি ম্যাচ হেরেছিলেন, সেই টাইসন হারলেন পলের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার দুই প্রতিপক্ষের জন্য একটি সাংবাদিক বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে এক মহিলা সাংবাদিক টাইসনকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তিনি হেরে গেলে কী হবে? তাতে ওই সাংবাদিকের দিকে কটমট করে তাকান ৫৮ বছরের বক্সার। তার পরেই হঠাৎ পলকে চড় মারেন টাইসন। সটান বলে দেন, “কথা শেষ।” সেই উগ্র টাইসনকে ম্যাচের পর দেখা গেল না। রিংয়ের মধ্যে যদিও পলের বিরুদ্ধে যতটা সম্ভব লড়াই করলেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হার মানতে হল তরুণ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে।
টাইসনের চড় মারার ঘটনা যদিও অবাক করার মতো কিছু নয়। ১৯৯৭ সালে একটি ম্যাচ চলাকালীন প্রতিদ্বন্দ্বী ইভান্ডার হোলিফিল্ডের কান কামড়ে ছিঁড়ে নিয়েছিলেন টাইসন। ফলে তাঁকে সেই ম্যাচ থেকে বাতিল করে দেওয়া হয়। রিংয়ে আক্রমণাত্মক খেলার পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনেও বার বার বিতর্কে জড়িয়েছেন টাইসন।
১৯৮৫ সাল থেকে পেশাদার বক্সিং শুরু করেছেন টাইসন। সেই হিসাবে তাঁর কেরিয়ার ৩৯ বছরের। মাঝে ১৯ বছর খেলেননি তিনি। রিংয়ে তাঁর দাপটের জন্য তাঁকে বক্সিংয়ের ‘লৌহমানব’ বলা হয়। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ওয়ার্ল্ড হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন ছিলেন তিনি। মাত্র ২০ বছর ৪ মাস ২২ দিন বয়সে সর্বকনিষ্ঠ হিসাবে হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন তিনি। কেরিয়ারে মোট ৫৮টি পেশাদার ম্যাচ খেলেছেন টাইসন। জিতেছেন ৫০টি। তার মধ্যে ৪৪টি ম্যাচ নকআউটে জিতেছেন টাইসন। তিনি কেরিয়ারের প্রথম ১৯টি ম্যাচই নকআউটে জিতেছিলেন। তার মধ্যে ১২টি প্রথম রাউন্ডেই।
১৯৯২ সালে ধর্ষণে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় ছ’বছরের জেল হয়েছিল টাইসনের। জেল থেকে ফিরে আবার বক্সিং শুরু করেন টাইসন। ২০০৫ সালে অবসর নিয়েছিলেন তিনি। তবে বিতর্ক থেকে দূরে থাকতে পারেননি। ২০২২ সালে বিমানের মধ্যে এক সহযাত্রীকে মেরেছিলেন। সেই বিমানে থাকা অন্য যাত্রীরা জানিয়েছিলেন, ওই সহযাত্রী মত্ত অবস্থায় ছিলেন। তিনি বার বার টাইসনকে কটাক্ষ করছিলেন। পিছন থেকে বার বার টাইসনকে উত্ত্যক্ত করছিলেন। জলও ছুড়েছিলেন। তাতেই রেগে গিয়ে টাইসন ওই সহযাত্রীকে মারেন।