Rise and fall of Iraq

লাগাতার যুদ্ধে ‘হাত-পা ভেঙে’ আহত! পশ্চিম এশিয়ার এক সময়ের ‘সম্রাট’ আজ অস্তাচলে

পশ্চিম এশিয়ায় ক্রমশ বদলাচ্ছে ক্ষমতার ভরকেন্দ্র। একটা সময়ে সেখানে রাজ করা টাইগ্রিস নদীর তীরের দেশটি ধীরে ধীরে হারিয়ে গিয়েছে কালের গর্ভে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:২৬
০১ ২০
Rise and fall of Iraq which was once most powerful country in West Asia

পশ্চিম এশিয়ায় বদলে গিয়েছে শক্তির ভরকেন্দ্র। প্রাচুর্যের নিরিখে আত্মপ্রকাশ ঘটেছে দুই আরব মুলুকের। প্রভাব বাড়াচ্ছে আরও একটি রাষ্ট্র। অন্য দিকে কালের গর্ভে হারিয়ে গিয়েছে পুরনো সাম্রাজ্য। গত শতাব্দীতেও সেখানকার সেনাশাসকের চোখরাঙানি সহ্য করতে হত ‘সুপার পাওয়ার’ আমেরিকাকে।

০২ ২০
Rise and fall of Iraq which was once most powerful country in West Asia

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পর্বে পশ্চিম এশিয়ার রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ একরকম চলে গিয়েছিল ইরাকের হাতে। বাগদাদের সামরিক ক্ষমতাকেও সমীহ করত এই এলাকার দেশগুলি। কিন্তু নতুন শতাব্দীতে বিশ্ব রাজনীতির খেলায় একরকম অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়েছে টাইগ্রিস-ইউফ্রেটিস নদীর দেশ। আর তাই হামাস-ইজ়রায়েল যুদ্ধ হোক বা সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের ক্ষমতা দখল, ইতিহাসের মোড় ঘোরানো ঘটনাগুলির পর এক বারও শোনা যায়নি বাগদাদের নাম।

০৩ ২০
Rise and fall of Iraq which was once most powerful country in West Asia

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের দাবি, বর্তমান সময়ে পশ্চিম এশিয়ার ভাগ্য নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় উঠে এসেছে তিনটি দেশ— সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং কাতার। তিনটি রাষ্ট্রের কোষাগারে অর্থের অভাব নেই। পাশাপাশি, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, সমাজ সংস্কার বা রাজনৈতিক মধ্যস্থতা, সব ক্ষেত্রেই প্রথম সারিতে থাকছে এই তিন আরব মুলুকের নাম।

Advertisement
০৪ ২০
Rise and fall of Iraq which was once most powerful country in West Asia

গত শতাব্দীর আশি এবং নব্বইয়ের দশকে এই কাজটিই করত ইরাক। পশ্চিম এশিয়ার দেশটি সুপ্রাচীন মেসোপটেমিয়া সভ্যতার চারণভূমি হিসাবে পরিচিত। তবে ইতিহাসবিদেরা মনে করেন, খ্রিস্টীয় নবম থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী ছিল এর প্রকৃত স্বর্ণযুগ। এই সময়কালের মধ্যে বাগদাদের তখ্‌তে ছিলেন আব্বাসীয় খলিফারা, যার অন্যতম হলেন হারুন অল-রশিদ।

০৫ ২০
Rise and fall of Iraq which was once most powerful country in West Asia

পঞ্চদশ শতাব্দীতে পশ্চিম এশিয়ার সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী শহর হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে বাগদাদ। ওই সময়ে সারা দুনিয়ার অন্যতম জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র ছিল ইরাকের বর্তমান রাজধানী। পাশাপাশি বাণিজ্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি করেছিল টাইগ্রিস নদীর দেশটি। শুধু তা-ই নয়, মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপি এবং মাথাপিছু গড় আয়ের নিরিখে বিশ্বের প্রায় সব দেশকেই ছাপিয়ে গিয়েছিল ইরাক।

Advertisement
০৬ ২০
Rise and fall of Iraq which was once most powerful country in West Asia

কিন্তু পরবর্তী কালে এই জায়গা ধরে রাখতে পারেনি প্রাচীন মেসোপটেমিয়া সভ্যতার চারণভূমি। সেখানে জন্ম নেয় বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং ধর্মীয় কট্টরতা। এতে দুর্বল হয়ে পড়ে সাম্রাজ্য। সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে এতটুকু ভুল করেনি তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্য। ১৫৩৪ সালে বাগদাদ দখল করেন অটোমান শাসকেরা। ফলে অটোমান সাম্রাজ্যের সঙ্গে মিশে যায় ইরাক।

০৭ ২০
Rise and fall of Iraq which was once most powerful country in West Asia

১৯১৪ থেকে ১৯১৮ সালের প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটেনের হাতে পুরোপুরি পর্যুদস্ত হয় তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্য। বাগদাদ তখন কব্জা করেছে ইংরেজ ফৌজ। ১৯২১ সালে মক্কার শরিফ হোসেনের ছেলে ফয়সলকে ইরাকের প্রথম রাজা হিসাবে নিযুক্ত করে ব্রিটেন। তিনি অবশ্য ছিলেন লন্ডনের হাতের পুতুল।

Advertisement
০৮ ২০
Rise and fall of Iraq which was once most powerful country in West Asia

ব্রিটেনের এই চালাকি অবশ্য বেশি দিন খাটেনি। টাইগ্রিস এবং ইউফ্রেটিসের তীরে দানা বাঁধে বিদ্রোহ। ১৯৩২ সালে ব্রিটেনের কবলমুক্ত হয় ইরাক। তবে সেই স্বাধীনতা বেশি দিন টেকেনি। ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে প্রাচীন মেসোপটেমিয়া সভ্যতার চারণভূমিতে ফের পা পড়ে ব্রিটিশ ফৌজের। পাশাপাশি, মারাত্মক আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে বাগদাদ।

০৯ ২০
Rise and fall of Iraq which was once most powerful country in West Asia

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইরাকে লম্বা সময় ধরে চলেছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। তত দিনে ব্রিটেন অবশ্য সেখান থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে চলে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ১৯৬২ সালে বাগদাদের রাজতন্ত্রকে উৎখাত করেন ব্রিগেডিয়ার আবদুল করিম কাশিম। তবে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক জটিলতা তিনি পুরোপুরি মেটাতে পেরেছিলেন এমনটা নয়। ফলে নাগাড়ে চলা রক্তপাত দেখতে দেখতেই আধুনিকতার দিকে এগিয়েছে ইরাক।

১০ ২০
Rise and fall of Iraq which was once most powerful country in West Asia

অবশেষে বাগদাদের রাজনীতিতে কিছুটা ‘তাজা বাতাস’ নিয়ে আসেন সাদ্দাম হুসেন। ১৯৭৯ সালে প্রেসিডেন্ট হন তিনি। তাঁর আমলে কিছুটা স্থিতিশীল হয় ইরাকের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। যদিও ইতিহাসবিদরা তাঁকে একনায়ক হিসাবেই দেখেছেন। কুর্সিতে বসে অবশ্য সমস্ত বিরোধী কণ্ঠস্বর বন্ধ করতে এক মুহূর্ত সময়ও ব্যয় করেননি সাদ্দাম। সেই তালিকায় ছিলেন তাঁর নিজের দল বাথ পার্টির নেতারাও।

১১ ২০
Rise and fall of Iraq which was once most powerful country in West Asia

ক্ষমতালাভের এক বছরের মধ্যেই (পড়ুন ১৯৮০) প্রতিবেশী ইরানের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন সাদ্দাম। এই লড়াই চলে টানা আট বছর। ফলে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইরাকের অর্থনীতি। তবে পশ্চিম এশিয়ায় বাগদাদের প্রভাব বেড়েছিল। কারণ তত দিনে সেখানকার মাটি কাঁপাতে শুরু করেছে সাদ্দামের ভয়ঙ্কর সব মারণাস্ত্র।

১২ ২০
Rise and fall of Iraq which was once most powerful country in West Asia

ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ শেষ হতে না-হতেই কুয়েত আক্রমণ করে বসেন সাদ্দাম। সালটা ছিল ১৯৯০। সেই হামলার ঝাঁজ সহ্য করতে পারেনি ইরাকের প্রতিবেশী দেশটি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই খনিজ তেল সমৃদ্ধ দেশটির দখল নিয়ে ফেলে ইরাকি ফৌজ।

১৩ ২০
Rise and fall of Iraq which was once most powerful country in West Asia

সাদ্দামের এই সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব আমেরিকা মেনে নেয়নি। ১৯৯১ সালে কুয়েতকে মুক্ত করতে আসরে নামে ওয়াশিংটন। মিত্র বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে ‘অপারেশন ডেজ়ার্ট স্টর্ম’ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে বাধ্য হয়ে কুয়েত থেকে ফৌজ সরিয়ে নেন সাদ্দাম।

১৪ ২০
Rise and fall of Iraq which was once most powerful country in West Asia

কিন্তু পরবর্তী সময়ে বাগদাদের বিরুদ্ধে গণবিধ্বংসী রাসায়নিক অস্ত্র তৈরির অভিযোগ আনে আমেরিকা। ২০০৩ সালে টাইগ্রিসের তীরে নতুন করে আক্রমণ শানায় যুক্তরাষ্ট্র। আর্থিক ভাবে পঙ্গু সাদ্দামের পক্ষে তা ঠেকানোর ক্ষমতা ছিল না। মাত্র ২০ দিনের মধ্যেই ইরাকের অধিকাংশ শহর কব্জা করে ফেলে ওয়াশিংটনের মিত্র বাহিনী। মাটির নীচের গুপ্ত বাঙ্কারে তাঁদের হাতে ধরা পড়েন স্বয়ং সাদ্দাম।

১৫ ২০
Rise and fall of Iraq which was once most powerful country in West Asia

বিচারে সাদ্দামের মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেয় আদালত। ২০০৬ সালে তাঁকে ফাঁসিতে ঝোলায় আমেরিকান সৈন্যরা। এতে বাগদাদে একটি যুগের অবসান ঘটে। সাদ্দামের মৃত্যুর পর আর কখনওই সে ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি প্রাচীন মেসোপটেমিয়া সভ্যতার চারণভূমি।

১৬ ২০
Rise and fall of Iraq which was once most powerful country in West Asia

ইরাকের পতনের পর পশ্চিম এশিয়ায় দ্রুত উত্থান ঘটে কাতারের। ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে আমেরিকা। সেখানে দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় বসেছে তালিবান। এই সংক্রান্ত মধ্যস্থতায় কাতারের বড় ভূমিকা ছিল। দেশটির রাজধানী দোহায় চুক্তি সারে তালিবান এবং ওয়াশিংটন।

১৭ ২০
Rise and fall of Iraq which was once most powerful country in West Asia

২০২৩ সাল থেকে চলা হামাস-ইজ়রায়েল যুদ্ধেও মধ্যস্থতাকারী হিসাবে বড় ভূমিকা নিয়েছে কাতার। ইরান মদতপুষ্ট হামাস যে সমস্ত আমেরিকান নাগরিককে অপহরণ করেছিল, তাঁদের এক এক করে ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করছে দোহা। ২০২২ সালে ফিফা বিশ্বকাপের আয়োজনও করে আরব মুলুকের এই দেশ।

১৮ ২০
Rise and fall of Iraq which was once most powerful country in West Asia

অন্য দিকে মহিলাদের অধিকার থেকে শুরু করে আধুনিক প্রযুক্তি, একাধিক ক্ষেত্রে প্রগতিশীল পদক্ষেপ করছে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। সৌদির যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমন মেয়েদের গাড়ি চালানোর অনুমতি পর্যন্ত দিয়েছেন। তাঁর আমলে আরব দেশটিতে আয়োজিত হয়েছে ফ্যাশন শো।

১৯ ২০
Rise and fall of Iraq which was once most powerful country in West Asia

ভারতের আদলে আমিরশাহি প্রশাসন আবার চেষ্টা চালাচ্ছে আইআইটি ক্যাম্পাস খোলার। এ ব্যাপারে নয়াদিল্লির সাহায্য নিয়েছেন তাঁরা। দুবাই এবং আবু ধাবিতে ক্রিকেটের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। এই সব কিছু পশ্চিম এশিয়ার ইসলামীয় দেশগুলির থেকে একে আলাদা করেছে।

২০ ২০
Rise and fall of Iraq which was once most powerful country in West Asia

এ ছাড়া প্রভাবশালী রাষ্ট্র হিসাবে এই এলাকায় ফের চুপিসারে পা জমাতে শুরু করেছে তুরস্ক। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে গত ১০ বছরে (২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল) ব্যাপক উন্নতি করেছে এককালের ইউরোপের ‘রুগ্ন মানুষ’। এই সময়সীমার মধ্যে আঙ্কারার হাতিয়ার রফতানির পরিমাণ ১১ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্লেষকদের অনুমান, অতীতের অটোমান সাম্রাজ্য ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে এর বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়েপ এর্দোগানের। শেষ পর্যন্ত এতে সফল হলে গোটা পশ্চিম এশিয়ার নিয়ন্ত্রণ যে তাঁর হাতে যাবে, তা বলাই বাহুল্য।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও গ্যালারি