brain

Locked-In Man Communicates: বিশ্বে প্রথম, সিউডোকোমায় থাকা রোগী কথা বললেন পরিবারের সঙ্গে, প্রশ্নে হ্যাঁ, না জবাব দিয়ে

প্রায় অসাড় হয়ে যাওয়া এক রোগী পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারলেন। মনের কথা জানাতে পারলেন তাঁর পরিবারের সদস্যদের। বিশ্বে এই প্রথম।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২২ ১৮:১০
সিউডোকোমায় থেকে রোগী কথা বললেন পরিবারের সঙ্গে। -প্রতীকী ছবি।

সিউডোকোমায় থেকে রোগী কথা বললেন পরিবারের সঙ্গে। -প্রতীকী ছবি।

প্রায় কোমায় চলে যাওয়া (সিউডোকোমা) কোনও রোগী এ বার চাইলে তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। পরিবারের সদস্য বা চিকিৎসকদের কোনও প্রশ্নের উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলতে পারবেন।

এমন সম্ভাবনা জোরালো করে তুলল সাম্প্রতিক একটি নজরকাড়া গবেষণা। যেখানে প্রায় অসাড় হয়ে যাওয়া এক রোগী বিশেষ একটি প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারলেন। মনের কথা জানাতে পারলেন তাঁর পরিবারের সদস্যদের। বিশ্বে এই প্রথম।

গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘নেচার কমিউনিকেশনস’-এ। বুধবার।

গবেষকরা জানিয়েছেন, ৩৪ বছর বয়সি ওই রোগী অনেক দিন ধরেই হাঁটতে পারছিলেন না। কথা বলতে পারছিলেন না। তাঁর মুখের পেশিগুলি আর কাজ করছিল না। মুখ, জিভ অসাড় হয়ে গিয়েছিল। এমনকি, চোখের পাতা ফেলেও তিনি আর নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারছিলেন না। রোগীদের এমন পরিস্থিতিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয়, সিউডোকোমা। পুরোপুরি কোমায় চলে যাওয়ার ঠিক প্রাক-অবস্থা।

এমন সিউডোকোমায় চলে যাওয়া রোগীর মস্তিষ্কে দুটি মাইক্রোচিপ বসিয়েই অসাধ্যসাধন করেছেন গবেষকরা। ওই দু’টি মাইক্রোচিপের মাধ্যমে রোগী তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছেন। তাঁর মনের কথা জানাতে পেরেছেন।

সিউডোকোমাকে লক্‌ড-ইন সিনড্রোমও বলা হয়। এই অবস্থায় পৌঁছলে রোগী হাঁটতে বা কথা বলতে পারেন না প্রাথমিক ভাবে। তবে তাঁদের সচেতনতা থাকে গোড়ার দিকে। তাঁরা দেখতে পান। শুনতে পান। কোনও খাবারের স্বাদ গ্রহণ করতে পারেন। গন্ধ পান। এমনকি ভাবতেও পারেন। পারেন অনুভব করতেও। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই সব ক্ষমতাও লোপ পেতে থাকে। সেই সময় চোখের পাতা বা মণি নাড়িয়ে নিজের অনুভূতিও আর প্রকাশ করতে পারেন না রোগী।

৩৪ বছর বয়সি যে রোগীকে নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন সুইটজারল্যান্ডের ভাইস সেন্টার ফর বায়ো অ্যান্ড ন্যানো ইঞ্জিনিয়ারিং এবং জার্মানির তাবিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা, সেই রোগী চোখের পাতা বা মণি নাড়িয়েও তাঁর অনুভূতি আর প্রকাশ করতে পারছিলেন না।

Advertisement

হাঁটা ও কথা বলার শক্তি হারানোর এক বছর পর ওই রোগীকে শ্বাস নেওয়ানোর জন্য রাখা হয় ভেন্টিলেশনে। তার এক বছরের মধ্যে তিনি রোগী চোখের পাতা বা মণি নাড়িয়েও তাঁর অনুভূতি আর প্রকাশ করতে পারছিলেন না। ফলে, পরিবারের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন ওই রোগী।

তখনই তাঁর সম্মতি নিয়ে তাঁর মস্তিষ্কে দুটি মাইক্রোচিপ বসান গবেষকরা। মস্তিষ্কের সেই অংশে বসানো হয় দুটি মাইক্রোচিপ যে অংশটি পেশির সঞ্চালনকে নিয়ন্ত্রণ করে। সেই চিপদুটির মাধ্যমেই তাঁর মস্তিষ্কের কাজকর্মগুলিকে বাইরে একটি কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। যার ফলে, তিনি কোনও প্রশ্নের উত্তরে ‘হ্যাঁ’, নাকি ‘না’ বলছেন তা ফুটে ওঠে কম্পিউটার স্ক্রিনে।

গবেষকরা দেখেছেন কোনও বর্ণ শুনে উত্তর দিতে সিউডোকোমায় থাকা রোগী অন্তত এক মিনিট সময় নিচ্ছেন। ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই তাঁর উত্তর নির্ভুল হচ্ছে। এর পরের ধাপে রোগী যাতে বাক্যগঠন করতে না পারলেও অন্তত নানা ধরনের শব্দ (‘ওয়ার্ড’) বলতে পারেন, প্রযুক্তিকে সে ভাবে উন্নত করে তোলারও গবেষণা চলছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

আরও পড়ুন
Advertisement