Abel Prize

Abel Prize 2022: Abel Prize 2022: রসগোল্লার সঙ্গে ফারাক নেই লুডোর ছক্কার! টোপোলজিতে দিশা দেখিয়ে অ্যাবেল প্রাইজ সালিভানের

৮১ বছর বয়সি গণিতবিদকে সম্মানিত করার ঘোষণা করেছে নরওয়েইয়ান অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স অ্যান্ড লেটার্স। বুধবার রাতে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২২ ১৩:১৫
গোলকের মধ্যে ভবঘুরে আচরণ নেই,  প্রমাণ করেছিলেন ডেনিস সুলিভান। ছবি- নরওয়েইয়ান অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স অ্যান্ড লেটার্স-এর সৌজন্যে।

গোলকের মধ্যে ভবঘুরে আচরণ নেই, প্রমাণ করেছিলেন ডেনিস সুলিভান। ছবি- নরওয়েইয়ান অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স অ্যান্ড লেটার্স-এর সৌজন্যে।

সারা জীবনের অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে এ বছর গণিতের শীর্ষ সম্মান অ্যাবেল প্রাইজ পেলেন আমেরিকার গণিতবিদ ডেনিস পারনেল সালিভান। ৮১ বছর বয়সি গণিতবিদকে সম্মানিত করার ঘোষণা করেছে ‘নরওয়েইয়ান অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স অ্যান্ড লেটার্স’। ভারতীয় সময় বুধবার রাতে।

আমেরিকার স্টোনি ব্রুকে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্ক এবং সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্কের গ্র্যাজুয়েট স্কুল ও ইউনিভার্সিটি সেন্টারের অধ্যাপক সালিভানকে অ্যাবেল পুরস্কারে সম্মানিত করে বুধবার নরওয়েইয়ান অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স অ্যান্ড লেটার্স-এর তরফে বলা হয়েছে, ‘‘টোপোলজিতে আক্ষরিক অর্থেই যুগান্তকারী অবদানের জন্য সালিভানকে এই পুরস্কার দেওয়া হল। ওঁর বিশেষ অবদান রয়েছে টোপোলজির বীজগাণিতিক, জ্যামিতিক ও ‘ডায়নামিক্যাল’ (ভবঘুরে হবে নাকি হবে নিয়মানুবর্তী) দিকগুলিকে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে।’’

Advertisement

আধুনিক গণিতশাস্ত্রে টোপোলজির জন্ম হয়েছিল উনিশ শতকে। টোপোলজি বলতে বোঝায় কোনও তল (‘সারফেস’)-এর সেই সব গাণিতিক ধর্ম যা তল বা তলগুলির বিকৃতি (‘ডিফর্মেশন’)-র পরেও পরিবর্তিত হয় না।

টোপোলজির নিরিখে একটি বৃত্ত (‘সার্কেল’) আর একটি বর্গক্ষেত্র (‘স্কোয়্যার’)-এর মধ্যে কোনও ফারাক নেই। ফুটবলের সঙ্গে ফারাক নেই রাগবি বলের। রসগোল্লার সঙ্গে ফারাক নেই লুডোর ছক্কারও! বৃত্তের সঙ্গে ফারাক নেই গোলক (‘স্ফিয়ার’)-এর। একটি রসগোল্লা বা গাড়ির টায়ারের সঙ্গে কোনও ফারাক নেই এক হাতলওয়ালা একটি কফি মগেরও।

টোপোলজিকে সে জন্যই আর একটি নামে ডাকা হয়। ‘রাবার-শেপ্‌ড জ্যমেট্রি’। এমন জ্যামিতিক আকার যাকে রাবারের মতোই বাঁকিয়েচুরিয়ে নিজের ইচ্ছামতো আকারে বদলে নেওয়া যায়। কোনও একটি নির্দিষ্ট আকারের গণ্ডিতে তাকে আটকে থাকতে হয় না।

আড়াই হাজার বছরের পুরনো ইউক্লিডের জ্যামিতির ধারণাকে এই ভাবেই উনিশ শতকে সজোরে নাড়া দিয়েছিল টোপোলজি। ইউক্লিডের জ্যামিতিতে একটি বৃত্ত শেষ পর্যন্ত বৃত্তই। তাকে উপবৃত্তে পরিণত করা যায় না।

কিন্তু টোপোলজিতে বৃত্তকে রাবারের মতো টেনে বাড়িয়েই উপবৃত্তে পরিণত করা যায়। এইখানেই ইউক্লিডের জ্যামিতির সঙ্গে টোপোলজির ফারাক।

ইউক্লিডের জ্যামিতিতে বৃত্তকে উপবৃত্তে পরিণত করা যায় না। কারণ সেই জ্যামিতি কোনও আকারের বিকৃতিই বরদাস্ত করে না। টোপোলজিতে সেটা করা যায় সেই জ্যামিতি রাবারের মতো বলে।

তব‌ে টোপোলজিতে কোনও বৃত্তকে সরলরেখায় বদলে ফেলা যায় না। তা হলে তো কাটতে হবে বৃত্তকে। তবেই সরলরেখা বানানোর জন্য তার দু’প্রান্তে দু’টি বিন্দু পাওয়া যাবে। টোপোলজি আবার এই কাটাছেঁড়া একেবারেই অনুমোদন করে না। যাকে টোপোলজির ভাষায় বলা হয় ‘সার্জারি’। বিকৃতিতে আপত্তি নেই, কিন্তু সার্জারি নৈব নৈব চ টোপোলজিতে।

বরাহনগরে ‘ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট (আইএসআই)’-এর গণিত বিভাগের অধ্যাপক ঋতব্রত মুন্সি জানিয়েছেন, টোপোলজি দিয়েই বলা সম্ভব একটি বৃত্ত বদলে গিয়ে কত রকমের জ্যামিতিক আকার তৈরি করবে। কতগুলি বর্গক্ষেত্র হবে, হবে কতগুলি উপবৃত্ত, কফি মাগ বা গাড়ির টায়ার। যদিও একটি গোলক থেকে থেকে একটি গাড়ির টায়ার বানানো যায় না টোপোলজিতে। তার জন্য দু’টি গাড়ির টায়ারকে একে অন্যের সঙ্গে জুড়তে হবে।

টোপোলজিকে উন্নতততর, নিখুঁততর করার লক্ষ্যে সালিভান বীজগাণিতিক, জ্যামিতিক ও সেই আকারগুলির ভিতরের ভবঘুরে আচরণেরও নজরকাড়া ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন।

ঋতব্রতের কথায়, ‘‘কোনও ভগ্নাংশের (যেমন, ১/৩) মধ্যে যেমন একটি নিয়মানুবর্তিতা রয়েছে, এক-কে তিন দিয়ে ভাগ করলে দশমিকের পর শুধুই তিন, তিন আর তিন-ই আসবে বার বার, অন্য কোনও সংখ্যা আসবে না। তেমনই আবার একটি সংখ্যা ‘পাই’। যার ভাগফলে দশমিকের পর অনন্তকাল ধরে বিভিন্ন সংখ্যা আসবে। সেই ধারায় কোনও পর্যাবৃত্তি (পিরিয়ডিসিটি) থাকবে না। বরং সেই ভাগফলে সংখ্যাগুলি অনেকটা ভবঘুরের মতোই আচরণ করবে। গত শতাব্দীর সাতের দশকে সালিভানের গাণিতিক তত্ত্বই প্রথম প্রমাণ করেছিল কোনও গোলকের মধ্যে এই ভবঘুরে আচরণ নেই (‘নো ওয়ান্ডারিং থিয়োরি’)। তাকে বৃত্ত, বর্গক্ষেত্র বা আয়তক্ষেত্র যে আকারেই বদলে ফেলা হোক, তার ভিতরের বিন্দুগুলি আবার ‘ঘরে ফিরে আসবে’। ফিরে আসবে একটি বিন্দুতে।’’

টোপোলজির টানেই নিজের পড়াশোনার ক্ষেত্র বদলেছিলেন সুলিভান। টেক্সাসের রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময়। গণিতশাস্ত্র আর টোপোলজি নিয়ে শুরু করেছিলেন পড়াশোনা।

এর আগেও বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন সালিভান। স্টিল প্রাইজ, উল্‌ফ প্রাইজ এবং বালজান প্রাইজ। আমেরিকান ম্যাথমেটিক্যাল সোসাইটির ফেলো সালিভানকে অ্যাবেল পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করতে গিয়ে অ্যাবেল কমিটির চেয়ার গণিতবিদ হান্স মুন্সে-কাস বলেছেন, ‘‘সালিভানকে পুরস্কারের নগদমূল্য হিসাবে আট লক্ষ ৫৪ হাজার আমেরিকান ডলার।’’

আরও পড়ুন
Advertisement