প্রতীকী ছবি।
কাশির চেয়েও করোনা ভাইরাসের সংক্রমিতের কথা বলাটা বেশি বিপজ্জনক। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক একটি গবেষণা অন্তত এমনই দাবি করেছে।
শুধু কাশি হলেই ছড়াবে করোনা ভাইরাস এমন নয়, কথা বললেও কোনও সংক্রমিতের ধারেকাছে থাকা পরিবারের লোকজন বা অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে করোনাভাইরাস। অন্যরাও সংক্রমিত হতে পারেন। কেমব্রিজের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ‘প্রসিডিংস অব দ্যা রয়্যাল সোসাইটি’-র জার্নালে।
গবেষণা জানাচ্ছে, করোনাভাইরাস যেমন শ্বাস বা কাশির সঙ্গে ছড়ায়, তেমনই দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে সংক্রমিতের কথা বলা থেকেও। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সংক্রমণ ঘটে ড্রপলেটসের মাধ্যমে।
হয়তো সে জন্যই বাইরের চেয়ে ঘরের ভিতরে ভাইরাসটির সংক্রমণ বেশি হয়। কারণ বাইরে বেরোলে একে অন্যের সঙ্গে সাধারণত যে দূরত্ব বজায় রাখা হয়, ঘরের ভিতরে অনেক সময় তা হয় না। ঘরের ভিতরে একে অন্যের দূরত্বটা খেয়ালও করা হয় না অনেক সময়। আর সেটাই ঘরের ভিতরে দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করে।
সংক্রমিত কথা বললে বিপদ বাড়ে কেন?
গবেষণাপত্রটি জানাচ্ছে, কোনও সংক্রমিত যদি কারও সঙ্গে ৩০ সেকেন্ড কথা বলেন, তা হলে তার ১ ঘণ্টা পর সংক্রমিতের আশপাশের বাতাসে থাকা অ্যারোসল বা দূষণ কণার মধ্যে যতটা ভাইরাস জন্মায়, তা সংক্রমিতের কাশির থেকে বাতাসে ছড়ানো ভাইরাসের সংখ্যা থেকে অনেক গুণ বেশি। কথা বললে যে ড্রপলেট ছড়ায়, তা অনেক সময়ই হয় আকারে ছোট।
কেন ছোট ড্রপলেট বেশি বিপজ্জনক?
গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, শ্বাস বা কাশির সময় সংক্রমিতের নাক ও মুখ থেকে যেমন ড্রপলেট বেরিয়ে আসে, তেমনই তা বেরিয়ে আসে কথা বলার সময়েও। আকারে বড় ড্রপলেটগুলি ভারী হওয়ার জন্য অল্প দূরত্ব অতিক্রম করার পরেই মাটিতে পড়ে যায়। তাই সেগুলি একটু বেশি দূরে থাকা মানুষের পক্ষে ততটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে না। কিন্তু আকারে ছোট ড্রপলেটগুলি সংক্রমণ দ্রুত ছড়াতে বেশি সহায়ক হয় তারা ওজনে হাল্কা হয় বলে। বাতাসে ভেসে তারা অনেকটা দূর পর্যন্ত চলে যেতে পারে। তারা যেতে পারে ২ মিটারেরও বেশি দূরে। ফলে, ওই দূরত্বে থাকা যে কারও পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে সংক্রমিতের শ্বাস, কাশি বা কথা বলার সময় বেরিয়ে আসা আকারে ছোট ড্রপলেটগুলি। এগুলি অনেকটা আমাদের বাতাসে থাকা দূষণ কণা বা ‘অ্যারোসল’-এর মতো। গবেষকরা দেখেছেন, ছোট আকারের ড্রপলেটগুলি ২ মিটারেরও বেশি দূরত্ব পেরিয়ে যেতে পারে মাত্র দু’সেকেন্ডে।
রেহাই পাওয়ার উপায় কী?
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্লুইড মেকানিক্সের অধ্যাপক অন্যতম গবেষক পেড্রো মাগালহায়েস ডি অলিভিয়েরা বলেছেন, ‘‘মাস্ক পরে থাকতে হবে সব সময়। মেনে চলতে হবে দূরত্ব বিধি। আর ঘরের ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা ভাল রাখতে হবে।’’