হাত বাড়ালেই জল মঙ্গলে! এখনও। জানাল এসা, রসকসমস-এর পাঠানো মহাকাশযান। ছবি- এসা-র সৌজন্যে।
হাত বাড়ালেই জল! লাল গ্রহে, এখনও।
বাড়ির পাতকুয়োরও গভীরতা রাখতে হয় ২০/২৫ ফুট। অন্তত। না হলে জল ওঠে না। দিনকয়েক পর টিউবওয়েলে জল ওঠে না বলে বসাতে হয় আরও গভীরে যাওয়ার নলকূপ।
আর পৃথিবী থেকে ৩৩ কোটি ৯০ লক্ষ মাইল দূরে ‘লাল গ্রহ’ মঙ্গলের বিশাল একটি এলাকায় তিন ফুট খুঁড়লেই জল মিলবে। এখনও। জানাল ‘ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (এসা)’ ও রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘রসকসমস’-এর যৌথ ভাবে পাঠানো মঙ্গলযান। যার নাম— ‘এক্সোমার্স ট্রেস গ্যাস অরবিটার’-এ থাকা ‘ফ্রেন্ড’ যন্ত্র। যার আদত নাম ‘ফাইন রেজোলিউশন এপিথার্মাল নিউট্রন ডিটেক্টর’।
সেই জল রয়েছে লাল গ্রহের ‘ভ্যালেস মেরিনারিস’ নামে সুবিশাল একটি গিরিখাতে। যার ডাক নাম— ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন অব মার্স’।
সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘আইকারাস’-এ।
এসা-র তরফে জানানো হয়েছে, এক্সোমার্স ট্রেস গ্যাস অরবিটার’-এ থাকা ‘ফ্রেন্ড’ যন্ত্র যে সব ছবি ও তথ্যাদি পাঠিয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে এ ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে, ৪ হাজার কিলোমিটার বা ২ হাজার ৪৮৫ মাইল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা মঙ্গলের ভ্যালেস মেরিনারিস-এর তিন ফুট গভীরতাতেই জল রয়েছে। বিশুদ্ধ বরফ হয়ে। যাকে ‘ওয়াটার আইস’ বলা যায়। সেই জল গভীরে থাকা খনিজ পদার্থগুলির মধ্যেও আটকে রয়েছে।
মঙ্গলের ধুলোবালিতে ভরা পিঠ ফুঁড়ে লাল গ্রহের আরও গভীরে নজর দিয়ে এ কথা জানতে পেরেছে ‘ফ্রেন্ড’ নামে যন্ত্রটি। এর আগে মঙ্গলের দুই মেরুতে, বিশেষ করে দক্ষিণ মেরুতেই কঠিন বরফ হয়ে থাকা জলের অস্তিত্বের হদিশ আগেই মিলেছিল। বরফ হয়ে থাকা জলের সঞ্চয় যে এখনও রয়েছে লাল গ্রহে তার আঁচ মিলেছিল মঙ্গলের বিষূবরেখার নীচে থাকা কয়েকটি অঞ্চলেরও গভীরে। তবে সেই গভীরতা অনেক বেশি।
২০১৮-র মে মাস থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মঙ্গলের গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে এই পর্যবেক্ষণ চালিয়েছে এসা ও রসকসমস-এর পাঠানো মহাকাশযানের ফ্রেন্ড যন্ত্রটি।
রাশিয়ান অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের স্পেস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পদার্থবিজ্ঞানী অ্যালেক্সেই মালাখভ বলেছেন, ‘‘লাল গ্রহের ওই গিরিখাতের নীচের মধ্যাঞ্চলটির প্রায় পুরোটাই জলে ভরা রয়েছে। যতটা আশা করা হয়েছিল তার চেয়ে বহুগুণ বেশি। পৃথিবীতেও এমন ওয়াটার আইস রয়েছে শুকনো মাটির নীচে।’’
কিন্তু মঙ্গলের ওই এলাকার চাপ ও তাপমাত্রা যা তাতে কী ভাবে জলের সেই বিপুল সঞ্চয় এখনও রয়েছে সেখানে সেই রহস্যের জট এখনও খোলা সম্ভব হয়নি বিজ্ঞানীদের পক্ষে।