International Space Station

International Space Station: রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হানায় গুঁড়িয়ে গেল উপগ্রহ, মহাকাশ স্টেশন ছেড়ে পালালেন মহাকাশচারীরা

সেই ক্ষেপণাস্ত্রগুলির আঘাতে কয়েক মিনিটের মধ্যে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায় পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা একটি কৃত্রিম উপগ্রহ।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২১ ১৫:৪৮
গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।

মহাকাশে বড় বিপদ ডেকে আনল রাশিয়া! যার জেরে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থায় পৌঁছেছেন মহাকাশচারীরা।

প্রাণ বাঁচাতে পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন ছেড়ে তাঁদের বেরিয়ে পড়তে হয়। আশ্রয় নিতে হয় পৃথিবীতে ফেরার জন্য অপেক্ষারত মহাকাশযানে।

Advertisement

কাকপক্ষীকেও না জানিয়ে ভূপৃষ্ঠ থেকে রাশিয়া মহাকাশে ছোড়ে খুব শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র। সোমবার। পরপর চারটি।

সেই ক্ষেপণাস্ত্রগুলির আঘাতে কয়েক মিনিটের মধ্যে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায় পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা একটি কৃত্রিম উপগ্রহ। ভেঙে পড়া সেই প্রায় ৪০ বছর বয়সি উপগ্রহ থেকে দিগ্বিদিকশূন্য হয়ে ছিটকে বেরনো বড় ও মাঝারি রাশি রাশি টুকরো ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে মহাকাশে। রাশি রাশি টুকরো কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করতে শুরু করে দেয় ঘণ্টায় প্রায় সাড়ে ২৭ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি গতিবেগে।

আর একটু হলেই যার অভিঘাতে টলে যেতে পারত পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। দাউদাউ করে আগুন লেগে যেতে পারত মহাকাশ স্টেশনে।

হিউস্টনে নাসার মিশন কন্ট্রোল রুম থেকে খবর পেয়ে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা হয় মহাকাশচারীদের। প্রাণ বাঁচাতে মহাকাশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে সাত জন মহাকাশচারীই চেপে বসেন পৃথিবীতে ফিরে আসার জন্য অপেক্ষারত মহাকাশযানে। সেখানেই আশ্রয় নিতে বাধ্য হন মহাকাশচারীরা। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন আমেরিকা, জাপান ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (এসা)-র মহাকাশচারীরা।

পরে জানা যায় ওই ঘটনা ঘটেছে রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘রসকসমস’-এর উপগ্রহ বিধ্বংসী পরীক্ষা (‘ডাইরেক্ট অ্যাসেন্ট অ্যান্টি-স্যাটেলাইট টেস্ট (ডিএ-এস্যাট)’-র জন্য।

রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ছিন্নভিন্ন উপগ্রহের বিভিন্ন অংশ। যা বাড়িয়ে দিল মহাকাশ আবর্জনার পরিমাণ। ছবি সৌজন্যে- ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি।

রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ছিন্নভিন্ন উপগ্রহের বিভিন্ন অংশ। যা বাড়িয়ে দিল মহাকাশ আবর্জনার পরিমাণ। ছবি সৌজন্যে- ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি।

চার দশক আগে পৃথিবীর কক্ষপথে একটি উপগ্রহ পাঠিয়েছিল রসকসমস। সেই উপগ্রহটির নাম ছিল ‘কসমস ১৪০৮’। সাবেক সোভিয়েত জমানায় উপগ্রহটিকে পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠানো হয় বিভিন্ন দেশের উপর গোয়েন্দাগিরির জন্য। ১৯৮২-তে। যদিও কয়েক দশক আগেই কার্যকালের মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়ে অচল হয়ে যায় উপগ্রহটি।

আমেরিকার বিদেশ দফতর ও নাসার অভিযোগ, উপগ্রহটিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে উড়িয়ে দেওয়ার আগে সেই কর্মসূচির কথা আমেরিকা, ভারত, জাপান, চিন বা ইউরোপের কোনও দেশের মহাকাশ সংস্থাকেই জানায়নি রুশ মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমস। এই ঘটনা আগামী দিনে মহাকাশে বিভিন্ন দেশের পেশি প্রদর্শন ও সমরসম্ভার পাঠানোর গোপন প্রস্তুতিতে আরও উৎসাহিত করবে। উৎসাহিত করবে উপগ্রহ বিধ্বংসী উপগ্রহ ও মহাকাশ যুদ্ধে খুব প্রয়োজনীয় লেসার রশ্মির অস্ত্রশস্ত্র বানাতে।

তাই এ ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ ও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নাসা। তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে আমেরিকার বিদেশ দফতরও। আমেরিকার বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়ে এই পরীক্ষা করেছে রাশিয়া। ওই ঘটনায় এখনই কক্ষপথে দেড় হাজারেরও বেশি মহাকাশ আবর্জনা বা স্পেস ডেব্রি তৈরি হয়েছে। সেগুলি বেশ বড় ও মাঝারি আকারের। আগামী দিনে সেগুলির ধাক্কাধাক্কিতে টুকরোগুলির সংখ্যা আরও বাড়বে। তা বিভিন্ন মহাকাশযানগুলির যাতায়াত ও আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের পক্ষে খুবই বিপজ্জনক হয়ে উঠল। তার ফলে অন্যান্য দেশের নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও বিজ্ঞান গবেষণা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা জোরদার হল।’’

আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-র প্রধান বিল নেলসন বলেছেন, ‘‘২০১৯ সালে এমন একটি পরীক্ষা করেছিল ভারত। ২০০৭ সালে চিনও করেছিল এমন একটি পরীক্ষা। দু’টি দেশকেই সতর্ক করা হয়েছিল। ২০০৮-এ এ জাতীয় একটি পরীক্ষার পর আমেরিকা আর এ পথে হাঁটেনি। এ বার রাশিয়ার এই পরীক্ষার পর আবার সব ক'টি দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থাকে বিষয়টি নিয়ে অবিলম্বে আলোচনার বাস্তবতা বুঝিয়ে দিল।’’

Advertisement
আরও পড়ুন