Time

Time Distortion: সময় নিজেই দেরি করে চলে! আয়ু বাড়ে পরের সেকেন্ডের, মিলল আইনস্টাইনের পূর্বাভাস

পরীক্ষাটি যৌথ ভাবে চালিয়েছে আমেরিকার ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজি’ ও কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হতে চলেছে শীঘ্রই।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২১ ১৭:২৮
চলার পথে সময়ের আয়ু বেড়েই চলেছে একটু একটু করে। -ফাইল ছবি।

চলার পথে সময়ের আয়ু বেড়েই চলেছে একটু একটু করে। -ফাইল ছবি।

সময় নিজেই লেটলতিফ! কিছুতেই ঘড়ির কাঁটার তালে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না!

ব্রহ্মাণ্ডে এক অদৃশ্য পিছুটান সময়ের চলার পথ বাঁকিয়ে চুরিয়ে দেয়। তার চলার ছন্দ ভেঙে দেয়। বাড়ে সময়েরও দীর্ঘসূত্রিতা।

Advertisement

তাই প্রথম সেকেন্ড থেকে পরের সেকেন্ডে যেতে আয়ু বেড়ে যায় সেকেন্ডেরই। তার পরের সেকেন্ড আরও একটু দীর্ঘায়ু হয় ঠিক তার আগের সেকেন্ডটি থেকে। তার পরের সেকেন্ড আরও একটু…।

১০০ বছর আগে আইনস্টাইনের পূর্বাভাস

এই ভাবে চলার পথে এক মিলিমিটার দূরত্ব পেরতে গিয়ে সময় কতটা বদলে যায়, তা মাপা গেল পৃথিবীতে। একটি পরীক্ষার মাধ্যমে। এতটা নিখুঁত ভাবে এর আগে যা মাপা সম্ভব হয়নি। প্রমাণিত হল ১০০ বছরেরও বেশি আগে করা আইনস্টাইনের পূর্বাভাস।

এই নীলাভ গ্রহে সময়ের চলার পথ যদিও খুব সামান্যই বাঁকিয়েচুরিয়ে দিতে পারে ব্রহ্মাণ্ডের সেই অদৃশ্য পিছুটান। জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় যার নাম- অভিকর্ষ বল বা ‘গ্র্যাভিটেশনাল ফোর্স’।

এক মিলিমিটার দূরত্বে কতটা বদলায় সময়?

পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে লেখা গবেষণাপত্রটি রিভিউ পর্যায় পেরিয়ে প্রকাশিত হতে চলেছে একটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকায়। ফলাফলগুলি প্রকাশ করা হয়েছে অনলাইনে। পরীক্ষাটি যৌথ ভাবে চালিয়েছে আমেরিকার ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজি’কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়। পরীক্ষা প্রকল্পটির নাম- ‘জিলা’।

পরীক্ষার ফলাফল জানিয়েছে, এক মিলিমিটার বা ০.০৪ ইঞ্চি দূরত্ব পেরতে গিয়ে পৃথিবীতেই সময়ের প্রথম সেকেন্ড থেকে দ্বিতীয় সেকেন্ডের আয়ু বেড়ে যায়। একই ভাবে বাড়ে তার পরের সেকেন্ডগুলির আয়ুও। গবেষকরা দেখেছেন, এই ভাবে এক মিলিমিটার দূরত্বের মধ্যে সময়ের আয়ু বাড়ে এক শতাংশের এক লক্ষ কোটি ভাগের ৭.৬ লক্ষ ভাগ। পৃথিবীতে ব্রহ্মাণ্ডের সেই অদৃশ্য পিছুটান বা অভিকর্ষ বলের প্রভাব খুব সামান্য হলেও।

১০০ বছর আগে এর পূর্বাভাস দিয়েছিলেন আইনস্টাইন। -ফাইল ছবি।

১০০ বছর আগে এর পূর্বাভাস দিয়েছিলেন আইনস্টাইন। -ফাইল ছবি।

কেন সময়ের চলার পথে আয়ু বাড়ে সেকেন্ডের?

সময় যে চেনা-জানা ঘড়ির কাঁটার তালে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না, ১০০ বছরেরও বেশি আগে প্রথম সে কথা জানিয়েছিলেন আইনস্টাইন। তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদে। সেই তত্ত্বেই প্রথম বলা হয়, এই ব্রহ্মাণ্ড আদৌ সমতল বা সরলরেখায় নেই। বরং তা ভীষণ দোমড়ানো মোচড়ানো (‘কার্ভড’) অবস্থায় রয়েছে। সেখানে দু’টি বিন্দুর মধ্যে সবচেয়ে কম দূরত্বও কোনও সরলরেখা নয়। বক্ররেখা। এও বলা হয়, ব্রহ্মাণ্ডকে আমাদের চেনা জানা তিনটি মাত্রায় ভাবলে ভুল করা হবে। দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা (এই তিনটি নিয়ে 'স্থান' বা ‘স্পেস’) ছাড়াও আর একটি মাত্রা রয়েছে ব্রহ্মাণ্ডের। তা হল সময় (টাইম)। এই স্থান-কাল (স্পেস-টাইম) নিয়েই চতুর্মাত্রিক ব্রহ্মাণ্ড। কোনও মহাজাগতিক বস্তুর উপস্থিতি সেই স্থান ও কালকে বাঁকিয়ে চুরিয়ে দেয়।

সেটা হয় সেই মহাজাগতিক বস্তুর অদৃশ্য পিছুটান বা অভিকর্ষ বলের জন্য। যে বলে পৃথিবীকে ধরে রেখেছে সূর্য। যে বলে পৃথিবী ধরে রেখেছে চাঁদকে। পৃথিবীর ভিতরে সেই বলের প্রভাব খুব সামান্য। প্রায় নেই বললেই হয়। তবে একেবারে শূন্যও নয়। তাই সেই সামান্য অভিকর্ষ বলের দৌলতে পৃথিবীতেও সময়ের প্রথম সেকেন্ডের আয়ু তার পরের সেকেন্ডে খুব সামান্য হলেও বেড়ে যেতে পারে।

কতটা বাড়ে, তা জানার জন্য বহু পরীক্ষা চালানো হয়েছে গত কয়েক দশকে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, এ বারের পরীক্ষার ফলাফল আগেরগুলির চেয়ে ৯৫ গুণ বেশি নিখুঁত।

সময় আরও ফুলে-ফেঁপে উঠছে। বাড়ছে পরের সেকেন্ডগুলির আয়ু। -প্রতীকী ছবি।

সময় আরও ফুলে-ফেঁপে উঠছে। বাড়ছে পরের সেকেন্ডগুলির আয়ু। -প্রতীকী ছবি।

কী ভাবে চালানো হয় পরীক্ষা

গবেষকরা জানিয়েছেন, পরীক্ষাটি চালানো হয় একটি ভ্যাকুয়াম চেম্বারে। এক লক্ষ স্ট্রংসিয়াম পরমাণুর উপর। সেই পরমাণুগুলি থেকে তাপ যতটা সম্ভব বার করে নিয়ে পরমাণুগুলিকে ‘ভার্চুয়ালি’ স্থবির করে দিতে পেরেছিলেন গবেষকরা। তার পর তাঁরা সেই পরমাণুগুলির একেবারে উপর ও নীচের স্তর থেকে কী পরিমাণ আলো বিকিরণ হচ্ছে, তার উপর নজরদারি চালান ৯২ ঘণ্টা ধরে। তাতে দেখেন, পরমাণুগুলির উপরের স্তর থেকে বিকিরণের কম্পাঙ্কের সঙ্গে নীচের স্তরের বিকিরণের কম্পাঙ্ক মিলছে না। তারই সূত্র ধরে পরমাণু ঘড়ি ব্যবহার করে তাঁরা মাপতে পেরেছেন সময়ের এক সেকেন্ড তার পরের সেকেন্ডে গিয়ে কতটা বড় হচ্ছে।

এই পরীক্ষা বুঝিয়ে দিল, সময় যেন আরও বেশি করে ছড়িয়ে পড়ছে ব্রহ্মাণ্ডে। ঢিল ফেললে পুকুরের মাঝে তৈরি হওয়া তরঙ্গ যেমন ক্রমশ বড় হতে হতে ঘাটে পৌঁছয়, অনেকটা তেমনই!

Advertisement
আরও পড়ুন