আরব দেশে আইপিএলের মেগা নিলাম শেষ। আগামী বছরের (পড়ুন ২০২৫) ১৪ মার্চ থেকে শুরু হবে কুড়ি-বিশের এই মেগা টুর্নামেন্ট। তার আগে সৌদির জেড্ডা শহরে হওয়া নিলামে ঘর গুছিয়ে নেওয়ার শেষ সুযোগ পেয়েছে ১০টি দল। আসন্ন লিগে কোন দল কতটা শক্তিশালী, তা নিয়ে জোর আলোচনা চালাচ্ছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
নভেম্বরে জেড্ডায় দু’দিন ধরে চলেছে আইপিএলের নিলাম। সেখানে ১৮২ জন ক্রিকেটারকে সই করানো হয়েছে, যার মধ্যে ৬২ জন ভারতীয়। দল তৈরি করতে নিলামে ১০টি ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির খরচ হয়েছে ৬৩৯.১৫ কোটি টাকা।
এ বারের আইপিএলের সর্বাধিক দামি খেলোয়াড়ের তকমা পেয়েছেন ঋভষ পন্থ। ‘টিম ইন্ডিয়া’র টি-২০ বিশ্বকাপজয়ী উইকেটরক্ষক বাঁহাতি ব্যাটারের জন্য ২৭ কোটি টাকা খরচ করছে লখনউ সুপার জায়ান্টস্। অন্য দিকে সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার বৈভব সূর্যবংশীকে কিনেছে রাজস্থান রয়্যালস্। এক কোটি ১০ লক্ষ টাকার চুক্তিতে সই করেছেন বছর ১৩-র এই ব্যাটার।
প্রতি বারের মতো এ বারের নিলামেও বেশ কিছু ক্রিকেটার অবিক্রিত থেকে গিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বিশ্বকাপ পর্যন্ত জিতেছেন। কিন্তু, কুড়ি-বিশের ফরম্যাটে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ভাল না হওয়ায় তাঁদের দিকে নজরই দেয়নি কোনও দল। কিন্তু অবিক্রিতদের নিয়ে দল তৈরি হলে, তা অন্যদের রাতের ঘুম কেড়ে নিতে পারে, বলছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞেরা।
এই তালিকায় প্রথমেই আসবে ডেভিড ওয়ার্নারের নাম। ২০২৩ সালের আইসিসি একদিনের আন্তর্জাতিক বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলীয় দলের সদস্য ছিলেন তিনি। এ বছরের গোড়ায় জাতীয় দলের হয়ে সব ফরম্যাটের ক্রিকেটকে বিদায় জানান ওয়ার্নার। তবে ঘরোয়া লিগ খেলবেন বলে জানিয়েছেন ক্যাঙারু ব্যাটার।
গত বছর (পড়ুন ২০২৩) দিল্লি ক্যাপিটালসের জার্সিতে মাঠে নেমেছিলেন ওয়ার্নার। কিন্তু এ বার তাঁকে ধরে রাখেনি সৌরভের দল। নিলামে অসি ক্রিকেটারের ন্যূনতম মূল্য দু’কোটি টাকা ঠিক করা হয়েছিল। প্রথম রাউন্ডে অবিক্রিত থাকার পর দ্বিতীয় রাউন্ডে তিনি আর ফিরে আসেননি। ২০১৬ সালের আইপিএল জয়ী সানরাইজার্স হায়দরাবাদের অধিনায়ক ছিলেন ওয়ার্নার। এই টুর্নামেন্টে ৬ হাজার ৫৬৫ রান রয়েছে তাঁর, যা চতুর্থ সর্বোচ্চ।
ওয়ার্নারের পরেই অবিক্রিত ক্রিকেটারের তালিকায় আসবে পৃথ্বী শ’র নাম। ছ’বছর টানা দলে থাকা সত্ত্বেও এই ওপেনার ব্যাটারকে ধরে রাখেনি দিল্লি ক্যাপিটলস্। নিলামে ৭৫ লক্ষ টাকা মূল্য নির্ধারিত হয়েছিল তাঁর। কোনও দলই তাঁকে নিয়ে আগ্রহ দেখায়নি।
একটা সময়ে মনে করা হয়েছিল যে, ভারতীয় দলে পাকাপাকি ভাবে জায়গা করে নেবেন পৃথ্বী। বর্তমানে তাঁর কেরিয়ারের সূচক নিম্নমুখী। ওজন বেড়ে যাওয়ায় বোর্ডও পৃথ্বীর উপর অসন্তুষ্ট। আইপিএলে ৭৯টি ম্যাচে ১ হাজার ৮৯২ রান করেছেন তিনি। স্ট্রাইক রেট ১৪৭.৪৭।
এ বারের নিলামে শিকে ছেঁড়েনি টপ অর্ডার ব্যাটার ময়াঙ্ক আগরওয়ালের। তাঁর বেস প্রাইস ছিল এক কোটি টাকা। ২০২২ সালে পঞ্জাব কিংস্ ছেড়ে দেওয়ার পর থেকে আইপিএলে সে ভাবে সুযোগই পাননি এই ভারতীয় ক্রিকেটার।
আইপিএলের শেষ দু’টি মরসুমে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ময়াঙ্ক। এ বছরের টুর্নামেন্টে মাত্র চারটি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ২০২৫ সালের টুর্নামেন্টে দল না পাওয়ায় হতাশ টিম ইন্ডিয়ার এই ক্রিকেটার।
আসন্ন আইপিএলে দল না পাওয়ার তালিকায় নাম রয়েছে জনি বেয়ারস্টোর। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের জন্য এই ইংরেজ উইকেটরক্ষকের আলাদা পরিচিতি রয়েছে। ইনিংস শুরু করার জন্যও নিজেকে তৈরি করেছেন তিনি। তবে অবিক্রিত খেলোয়াড়দের টিমে তাঁকে চার নম্বরে রেখেছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞেরা।
সানরাইজার্স হায়দরাবাদ এবং পঞ্জাব কিংসের হয়ে আইপিএল খেলেছেন বেয়ারস্টো। এই টুর্নামেন্টে ৫০টি ম্যাচে ব্রিটিশ ক্রিকেটারের সংগ্রহ ১ হাজার ৫৮৯ রান। তাঁর স্ট্রাইক রেট ১৪৪.৪৫।
লাল বলের ক্রিকেটে ভারতের হয়ে ছাপ রাখলেও আইপিএলে কোনও দল পাননি সরফরাজ খান। তাঁর বেস প্রাইস ছিল ৫০ লক্ষ টাকা। গত বছর (পড়ুন ২০২৩) দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে খেলেন মুম্বইয়ের এই ব্যাটার। ২০১৫ সালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে শুরু করা আইপিএল কেরিয়ারে কখনওই তেমন ছাপ ফেলতে পারেননি তিনি।
অবিক্রিত ক্রিকেটারদের টিমে জায়গা পেয়েছেন জিম্বাবোয়ের অধিনায়ক সিকন্দর রাজা। মিডল অর্ডারের এই ব্যাটার বহু যুদ্ধের নায়ক। অন্যান্য দেশের টি-২০ লিগে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর।
ব্যাট হাতে মাঠে ছয়-চারের ফুলঝুরির পাশাপাশি অফ স্পিন বোলিংও করতে পারেন সিকন্দর। তাঁর হাত থেকে বার হওয়া ক্যারম বল ক্রিজে জমে থাকা ব্যাটারকেও বহু বার সাজঘরের রাস্তা দেখিয়েছে।
এ বছরের আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে ন’টি ম্যাচে মাত্র পাঁচ উইকেট নেন শার্দুল ঠাকুর। পেস বোলারের এই পারফরম্যান্স আসন্ন কুড়ি-বিশের লিগ থেকে তাঁকে ছিটকে দিল বলে মনে করা হচ্ছে। নিলামে শার্দুলের বেস প্রাইস ছিল দু’কোটি।
আইপিএলের ইতিহাসে অন্যতম সেরা স্পিনার হলেন পীযূষ চাওলা। ১৯২ ম্যাচে ভারতীয় দলের ৩৫ বছর বয়সি প্রাক্তন ক্রিকেটারের শিকার ১৯২ উইকেট। শেষ দু’টি মরসুমে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে খেলেন তিনি। তাঁর বেস প্রাইস ৫০ লক্ষ টাকা ধার্য করা হয়েছিল।
নিলামে কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ হয়েছেন বাংলাদেশি ক্রিকেটার মুস্তাফিজুর রহমান। ডেথ ওভারে দুর্দান্ত ইয়র্কার করার ক্ষমতা রয়েছে তাঁর। ২০২৩ সালে চেন্নাই সুপার কিংসের জার্সিতে মাঠে নেমেছিলেন তিনি।
আইপিএলে মাত্র ন’টি ম্যাচ খেলেছেন বাংলাদেশের এই পেসার। তাঁর সংগ্রহ ১৪ উইকেট। গড় ১৪.৭১। জাতীয় দলের হয়ে খেলার জন্য টুর্নামেন্টের মাঝে দেশে ফিরে গিয়েছিলেন তিনি।
ভারতের জাতীয় দলে খেলা পেসার নভদীপ সাইনির বেস প্রাইস ছিল ৭৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু কোনও দলেই জায়গা পাননি তিনি। বার বার চোট-আঘাতের কারণে নভদীপের কেরিয়ারের সূচক নিম্নমুখী হয়েছে। এ বছর ঘরোয়া টুর্নামেন্টে ৩২ ম্যাচে ২৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি। নভদীপের ইকোনমি রেট ৮.৮৮।
আইপিএলে দল পাননি ভারতীয় পেসার উমেশ যাদবও। ফলে এই ফরম্যাটে তার কেরিয়ার শেষ হতে চলেছে বলে মনে করছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞেরা। ২০১০ সালে উমেশের আইপিএল অভিষেক হয়েছিল।
আইপিএলের শেষ মরসুমে গুজরাত টাইটান্সের হয়ে খেলেন উমেশ। সাত ম্যাচে তাঁর শিকার ছিল আট উইকেট। আইপিএলে মোট ১৪৮ ম্যাচে ১৪৪ উইকেট নিয়েছেন উমেশ। তাঁর ইকোনমি রেট ৮.৪৫।
সব ছবি: সংগৃহীত।