১৩ জানুয়ারি, সোমবার থেকে শুরু হয়েছে মহাকুম্ভ মেলা। এই মেলা চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মহাকুম্ভ আয়োজিত হচ্ছে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে। গঙ্গা, যমুনা এবং অন্তঃসলিলা সরস্বতী নদীর পবিত্র সঙ্গমস্থলে লক্ষ লক্ষ ভক্ত জড়ো হয়েছেন পুণ্যস্নান করতে।
এ বছর ১৩ জানুয়ারি (পৌষ পূর্ণিমা), ১৪ জানুয়ারি (মকর সংক্রান্তি), ২৯ জানুয়ারি (মৌনী অমাবস্যা), ৩ ফেব্রুয়ারি (বসন্ত পঞ্চমী), ১২ ফেব্রুয়ারি (মাঘী পূর্ণিমা) এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি (শিবরাত্রি) শাহিস্নানের তিথি রয়েছে।
১২ বছর অন্তর প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ মেলা হয়। মহাকুম্ভ উপলক্ষে নতুন করে সাজানো হয়েছে উত্তরপ্রদেশের এই শহরকে। এ বছরের মহাকুম্ভে সব মিলিয়ে ৪৫ কোটিরও বেশি ভক্তের সমাগম হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
পূণ্যতিথিতে স্নান করতে শনিবার থেকেই সাধু-সন্ন্যাসিনীরা ভিড় করতে শুরু করেছেন মহাকুম্ভ মেলায়। এঁদের মধ্যে অনেকেই নজর কেড়েছেন বিবিধ কারণে। বেশ কয়েক জন অদ্ভুতনামী বাবাও রয়েছেন তালিকায়।
এঁদের মধ্যেই এক জন হলেন ‘আইআইটি বাবা’। ভক্তেরা তেমনটাই নাম দিয়েছেন হাস্যমুখ সেই যুবা সাধুর। কারণ, তিনি পড়াশোনা করেছেন দেশের নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (আইআইটি) থেকে। তার পরে বেছে নিয়েছেন আধ্যাত্মিকতার পথ।
অনেক ভারতীয় পড়ুয়ার কাছে আইআইটিতে পড়ার সুযোগ স্বপ্নপূরণের মতো। মনে করা হয়, মেধাবী ছাত্রেরাই কেবল আইআইটিতে পড়ার সুযোগ পান। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করে বেরোলেই ভবিষ্যৎ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উজ্জ্বল।
কিন্তু কেন এ রকম সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ছেড়ে আধ্যাত্মিকতার পথে পা বাড়ালেন ওই যুবা সাধু? ‘আইআইটি বাবা’কে দেখার পর থেকেই এই প্রশ্নই ঘুরে বেড়াচ্ছে নেটাগরিকদের মনে।
মহাকুম্ভ মেলায় ক্যামেরা রাখার তাঁবুর বাইরে একটি পাইপের উপর বসেছিলেন জটাধারী ‘আইআইটি বাবা’। তখনই সিএনএন-নিউজ় ১৮-এর এক সাংবাদিকের নজর পড়ে দোহারা চেহারার লম্বা যুবা সাধুর দিকে। বুদ্ধিদীপ্ত এবং হাস্যমুখ সেই সাধুর সঙ্গে কথাও বলেন সাংবাদিক। শোনেন তাঁর ‘আইআইটি বাবা’ হয়ে ওঠার গল্প।
‘আইআইটি বাবা’র আসল নাম অভয় সিংহ। সাধু হওয়ার পর পরিচিত ‘মাসানি গোরখ’ নামে। হরিয়ানার বাসিন্দা অভয় পড়াশোনা করেছেন আইআইটি বোম্বে থেকে।
অভয় জানিয়েছেন, আইআইটি থেকে ‘এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং’ নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। আইআইটি বোম্বেতে চার বছর পড়াশোনা শেষ করে কেরিয়ারে পথ পরিবর্তন করেন তিনি। স্নাতকোত্তর করেন ডিজাইনিং নিয়ে। ছবি তোলার কাজও করতে শুরু করেন। পাশাপাশি, শিক্ষার্থীদের পদার্থবিদ্যার প্রশিক্ষণও দিতেন তিনি।
তবে শেষমেশ বিজ্ঞান এবং মহাকাশের জগত ছেড়ে নিজেকে আরও ‘চিনতে’ আধ্যাত্মিকতার পথে এগোনোর সিদ্ধান্ত নেন। ঈশ্বরকে বোঝার জন্য দীক্ষা নিয়ে সাধু হয়ে ওঠেন।
দীক্ষা নেওয়ার পর অভয়ের নাম পরিবর্তন হয়ে মাসানি গোরখ রাখা হয়। শিবের উদ্দেশে জীবন উৎসর্গ করেন তিনি। নিজেকে রাঘব এবং জগদীশ বলেও পরিচয় দেন তিনি।
সদাহাস্য এবং শান্ত স্বভাবের ‘আইআইটি বাবা’ জানিয়েছেন যে, জীবনের অর্থ বোঝার জন্য উত্তর-আধুনিকতাবাদ, সক্রেটিস এবং প্লেটোর দর্শন নিয়েও পড়াশোনা করেছেন তিনি। বেশ কয়েক বার কেরিয়ার বদলে ‘মৌলিক বিষয়গুলিতে’ মনোযোগ দিতে শুরু করেন।
‘আইআইটি বাবা’র কথায়, “আমি এখন বুঝতে পারি আমি এখন যা আহরণ করছি, সেটাই আসল জ্ঞান। যদি আপনি মন বা মানসিক স্বাস্থ্য ভাল করে বুঝতে চান, তা হলে আধ্যাত্মিকতার মাধ্যমে তা অর্জন করতে পারেন।’’
তিনি যোগ করেছেন যে, মানুষ তাঁর সম্পর্কে কী ভাবছেন তা নিয়ে তিনি বেশি ভাবেন না। তিনি কী ভাবে এই পর্যায়ে পৌঁছলেন? সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে ‘আইআইটি বাবা’ বলেন, ‘‘এই পর্যায়টিই জীবনের সেরা পর্যায়।’’
‘আইআইটি বাবা’র সঙ্গে সাংবাদিকের কথোপকথনের ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ঝড়ের মতো ভাইরাল হয়েছে। যুবা সাধুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন নেটাগরিকদের একাংশ। এক নেটাগরিক লিখেছেন, “সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডের জ্ঞান অর্জন করার পরেও শূন্যতা থেকে যায়। শিব চিরন্তন সত্য। ‘আইআইটি বাবা’ এর জীবন্ত উদাহরণ।’’
অন্য এক জন আবার লিখেছেন, “এই যুবা সাধু খুব ভাল এবং সত্যবাদী। কোনও কিছুর প্রতি কোনও লোভ নেই।’’ তবে আইআইটি থেকে পড়াশোনা করার পরেও ভবিষ্যতের কথা না ভাবার জন্য ‘আইআইটি বাবা’র সমালোচনাও করেছেন কেউ কেউ। এক জন লিখেছেন, ‘‘কত পড়ুয়া আইআইটিতে পড়ার স্বপ্ন দেখেন। আশ্চর্যজনক ব্যাপার! আমার কাছে প্রকাশ করার মতো কোনও শব্দ নেই।’’
সব ছবি: পিটিআই, রয়টার্স এবং ভিডিয়ো থেকে।