একত্রে তিন স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস! সতীনের ঘর করা সত্ত্বেও তাঁদের মধ্যে নেই কোনও মন কষাকষি। বরং পরম আদর যত্নে স্বামীকে সুখেই রেখেছেন তাঁরা। শুধু তা-ই নয়, পত্নী ত্রয়ীর ভরনপোষণের জন্য বিন্দুমাত্র রোজগারের চিন্তা নেই পতিদেবতাটির।
এ হেন ‘ভাগ্যবানের’ নাম নিক ডেভিস। নিবাস আমেরিকা। সেখানকার সমাজে তাঁর পরিচিতি ‘ট্রফি স্বামী’ হিসাবে। তাতে অবশ্য নিকের থোড়াই কেয়ার। উল্টে ঘর আলো করে থাকা স্ত্রীদের জন্য আয়ের কোনও প্রয়োজনই নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।
ইংরেজি অভিযানে এই ‘ট্রফি স্বামী’ শব্দবন্ধের একটি বিশেষ অর্থ রয়েছে। অনেক সময়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত মহিলারা কিছুটা বেশি বয়সে তরুণ সুদর্শন যুবকদের বিয়ে করে থাকেন। এতে সামাজিক ভাবে আলাদা একটা মর্যাদাও পান তাঁরা। এঁদেরকেই বলা হয় ‘ট্রফি স্বামী’।
দুই সন্তানের বাবা নিকের ব্যাপারটাও কতকটা তাই। যদিও এই নিয়ে তাঁর মনে কোনও খেদ নেই। প্রায়ই গর্ব করে তিনি বলেন, ‘‘আমার কাজ করার দরকার নেই। কারণ জীবনে যে রানিদের পেয়েছি, আমি তাঁদের ক্ষমতায় বিশ্বাসী।’’
নিকের তিন স্ত্রীর নাম এপ্রিল, জেনিফার এবং ড্যানিয়েল। বিয়ের পর একই বাড়িতে থাকেন তাঁরা। একই শয়নকক্ষে রোম্যান্টিক স্বামীকে কাছে না পেলে একটা রাতও কাটে না তাঁদের।
এপ্রিল ছিলেন নিকের প্রথম পক্ষের স্ত্রী। ন’বছর ঘর করার পর স্বামীকে নতুন সম্পর্কে জড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি। একঘেয়ে দাম্পত্য জীবনে নতুন কেউ এলে সেটা যে যথেষ্ট রোমাঞ্চকর হবে, সেই ভাবনা থেকেই এই বুদ্ধি মাথায় আসে তাঁর।
এর পরই ব্যাপারটা নিয়ে নিককে উৎসাহ দিতে শুরু করেন এপ্রিল। শর্ত ছিল, যাঁর সঙ্গেই তিনি সম্পর্কে জড়াবেন তাঁকে সব সত্যি কথা বলে বিয়ে করতে হবে। দ্বিতীয় পক্ষকে নিজের সাজানো সংসারে বরণ করে নেবেন তিনি।
স্ত্রীর এই উদ্ভট খেয়ালে প্রথমটায় রাজি ছিলেন না নিক। শেষে এপ্রিলের কথাই মেনে নেন তিনি। কিছু দিন পর জেনিফারের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাঁর। বিয়ে করে প্রেয়সীকে ঘরে তোলেন যুক্তরাষ্ট্রের এই যুবক। তবে সবটাই ঘটে প্রথম স্ত্রীর শর্তমাফিক।
আমেরিকার জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল ‘টিএলসি’র একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানে নিজেদের দাম্পত্য জীবনের সাতকাহন তুলে ধরেন নিকের তিন স্ত্রী। সেখানে যথেষ্ট খোলামেলা ভাবেই কথা বলেন তাঁরা। স্পষ্ট করেন পতিদেবতার সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কের রসায়ন।
এ প্রসঙ্গে এপ্রিল জানিয়েছেন, তিনি জেনিফারকে পছন্দ করতেন। স্বামীর যে তাঁকে নিয়ে একটা আলাদা আকর্ষণ রয়েছে, তা বুঝতে পেরেছিলেন তিনি। তাঁর পরিকল্পনামাফিক সেটা কাজ করুক, মনে মনে চেয়েওছিলেন নিকের প্রথম পক্ষ।
গত বছর (পড়ুন ২০২৩ সাল) এই পরিবারে পা রাখেন ড্যানিয়েল। তখন সদ্য ২২ বছরে পড়েছেন তিনি। ফলে মনের মানুষের সাজানো সংসারে তৃতীয় পক্ষ হিসাবে প্রবেশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া মোটেই সহজ ছিল না তাঁর। কিন্তু প্রেমের কাছে হার মানেন ড্যানিয়েল। ফের এক বার সাত পাকে বাঁধা পড়তে হয় নিককেও।
টিভি শোয়ে বড় বৌ এপ্রিল বলেন, ‘‘নিককে অনেক কিছু সামলাতে হয় এবং আগামী দিনেও হবে। ওর ব্যক্তিত্বেও পরিবর্তন আসা খুবই প্রয়োজন। তবে নিক যে ভাবে আমার ইচ্ছাপূরণের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, তাতে আমি অভিভূত।’’
অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন ট্রফি স্বামী নিকও। তাঁর কথায়, ‘‘তৃতীয় বার যখন বিয়ে করছিলাম, তখন মনে হয়েছে স্বপ্নের মধ্যে রয়েছি।’’ পাশাপাশি, চুপ করে থাকেননি ড্যানিয়েলও। তিনি বলেন, ‘‘এই সংসারে এসে যে এতটা সুখী হব, তা ভাবতেই পারিনি।’’
বিয়ের কিছু দিন পর নিকের দ্বিতীয় স্ত্রী জেনিফার গর্ভবতী হন। ডেভিস পরিবারে জন্ম নেয় প্রথম সন্তান। তাঁর নাম রাখা হয় ভেরা। নিকের তিন পত্নীই চাকরিজীবী। একসঙ্গে যাবতীয় কাজকর্ম সামলে কর্মস্থলে যান তাঁরা।
এ ছাড়া নিকের আরও এক ছেলে রয়েছে। সদ্য কৈশোরে পা দিয়েছে সে। পরিবারে তাকে বড় ভাইয়ের ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। এ হেন সুখী ডেভিস পরিবারের ইনস্টাগ্রামের ভক্তসংখ্যা রীতিমতো হিংসে করার মতো। মজার বিষয় হল, সমাজমাধ্যমে এখনও অনেক ‘লাস্যময়ী’ জানতে চান, নিকের চতুর্থ বার পাণিগ্রহণের ইচ্ছা রয়েছে কি না!
যুক্তরাষ্ট্রের এই ট্রফি স্বামীর জীবন নিয়ে নেটাগরিকদের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। তাঁদের এক জন লিখেছেন, ‘‘আপনি জীবনটাকে সত্যিকারের উপভোগ করছেন।’’ আর এক জনের কথায়, ‘‘এখনও পর্যন্ত সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেকেই আমাকে প্রতারণা করেছে। আর আপনার ঘরে তিন স্ত্রী। তাঁরা কোনও অভিযোগও করছেন না। সত্যিই অবিশ্বাস্য।’’
নিকের জীবনযাপন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় পিছিয়ে নেই মহিলা নেটাগরিকরাও। তাঁদেরই এক জন লিখেছেন, ‘‘আপনি কী দেখে কারও প্রেমে পড়েন? যাঁরা সর্ব ক্ষণের চাকরিজীবী? না কি পার্টটাইম কাজ করছেন এমন কেউ হলেও চলবে? কোনও ঘৃণা থেকে নয়, সাধারণ ভাবে জানতে চাইছি।’’
সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীদের একাংশ মনে করেন, তিন স্ত্রীর সঙ্গে কোনও রকমের আত্মিক সম্পর্ক নেই নিকের। তিনি কখনও এঁদের সঙ্গে কোনও ডেটে জাননি। তবে চুটিয়ে সঙ্গম উপভোগ করছেন।
টিভি শোয়ে অবশ্য নিকের পত্নীরা জানিয়েছেন, বাড়িতে তাঁদের আলাদা আলাদা ঘর রয়েছে। স্ত্রীদের ‘গোপনীয়তার অধিকার’ রক্ষায় যথেষ্ট ওয়াকিবহাল তিনি। যদিও রাতে একসঙ্গেই ঘুমোতে যান তাঁরা।
সব ছবি: সংগৃহীত।