বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওয়াজ়িরাবাদ জেলায় একটি এসইউভি গাড়িতে চড়ে প্রচার চালানোর সময় গুলিবিদ্ধ হন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। গুজ়রনওয়ালার আলওয়ালা চকে ইমরানকে লক্ষ্য করে ছ’রাউন্ড গুলি চালান হামলাকারী। এই হামলায় ইমরান ছাড়াও তাঁর আপ্তসহায়ক-সহ বহু ব্যক্তি আহত হন। তার পর থেকেই দিকে দিকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর নেতা-কর্মীরা। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ পাক ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়কের সুস্থতা কামনা করে তাঁর জন্য প্রার্থনা করেছেন।
ইমরান গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর অনেক খ্যাতনামীও টুইট বার্তা দিয়ে ইমরানের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন। ইমরানের জন্য প্রার্থনা করা মানুষদের তালিকা বেশ লম্বা। সেই তালিকায় রয়েছে পাকিস্তানি অভিনেত্রী আরমিনা খানের নামও।
আরমিনা লিখেছেন, ‘‘আমি ইমরান এবং বাকি আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। আমি হতবাক! হামলাকারীরা কি ভেবেছিল যে আজকের দুনিয়ায় তারা এই জঘন্য অপরাধ করে ছাড় পেয়ে যাবে?’’
আরমিনা পাকিস্তানের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী। পুরো নাম আরমিনা রানা খান।
কানাডার টরন্টোতে এক পাকিস্তানি পরিবারে আরমিনার জন্ম। বাবা-মায়ের তিন মেয়ের মধ্যে আরমিনা মেজো। টরন্টোতে তাঁর বাবার ব্যবসা ছিল। টরন্টোতেই তাঁর ছোটবেলা কাটে। পরে পরিবার ম্যানচেস্টারে চলে যায়। উচ্চশিক্ষাও ম্যানচেস্টারেই।
‘ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানচেস্টার’ থেকে ‘বিজ়নেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ নিয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পাওয়ার পর তিনি পড়াশোনার পাট চোকান।
পড়াশোনা শেষ করে ‘ইলিং স্টুডিয়ো’ এবং ‘পাইনউড স্টুডিয়ো’তে অভিনয়ের শেখার জন্য ভর্তি হন আরমিনা। ২০১০ থেকে মডেল হিসাবে যাত্রা শুরু করেন তিনি।
সেই সময় আরমিনা নামীদামি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জন্য মডেলিং করেন। ব্রিটেনের পাশাপাশি পাকিস্তানেও সমান তালে মডেলিংয়ের কাজ চালিয়ে যান আরমিনা।
আরমিনা দ্রুতই পাকিস্তান ও ব্রিটেনে নিজেকে এক জন সুপরিচিত মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। অভিনয়ের প্রস্তাবও পেতে শুরু করেন তিনি।
২০১১ সাল থেকে পাকিস্তানের টিভি সিরিয়ালে কাজ শুরু করেন আরমিনা। ‘ডলি আন্টি কি ড্রিম ভিলা’ সিরিয়ালের মাধ্যমেই তাঁর অভিনয় জগতে হাতেখড়ি।
ব্রিটেনের স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি ‘রিদ’-এ অভিনয় করেন আরমিনা। সেই স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি ২০১৩-র কান চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছিল। তিনিই প্রথম পাকিস্তানি অভিনেত্রী, যিনি কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
পরে ‘স্ট্রেঞ্জার উইদিন মি’ নামে আরও এক স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবিতে অভিনয় করেন আরমিনা।
পাকিস্তানি নায়িকা হলেও পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবিতে আরমিনার হাতেখড়ি কিন্তু হিন্দি ছবির হাত ধরে। এই হিন্দি সিনেমার নাম ছিল ‘উফফ্! ইটস্ টু মাচ’।
পুষ্কর যোগ অভিনীত এবং পরিচালিত এই হিন্দি সিনেমা বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। এই ছবিই আরমিনা অভিনীত একমাত্র হিন্দি ছবি।
২০১৪ সাল থেকে পূর্ণদৈর্ঘ্যের উর্দু ছবিতে অভিনয় শুরু করেন আরমিনা। তবে পাকিস্তানে অভিনেত্রী হিসাবে বিপুল সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেন।
২০১৬ সালে আরমিনা অভিনীত রোমান্টিক কমেডি ছবি ‘জনান’ এবং ২০১৭ সালে যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তৈরি ছবি ‘ইয়ালগার’ ব্যাপক সাফল্য পায়। এই দু’টি সিনেমা পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আয় করা উর্দু সিনেমাগুলির মধ্যে অন্যতম।
এ ছাড়াও একাধিক জনপ্রিয় উর্দু সিনেমা এবং সিরিয়ালে আরমিনা অভিনয় করেছেন। অভিনয়ের জন্য একাধিক পুরস্কারও জিতেছেন। ২০১৪ সালে নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেও পুরস্কার জেতেন আরমিনা।
২০১৬ সালে, ব্রিটিশ সংবাদপত্র ‘ইস্টার্ন আই’ আরমিনাকে ‘ফিফটি সেক্সিয়েস্ট এশিয়ান উইমেন’-এর তালিকাতেও জায়গা দিয়েছে।
২০১৭-র জুলাই মাসে ব্রিটেনের ব্যবসায়ী ফেসিল খানের সঙ্গে বাগ্দানের কথা ঘোষণা করেন আরমিনা। বিয়ে করেন ২০২০-র ১৪ ফেব্রুয়ারিতে।
অভিনেত্রীর মতে, তিনি পাকিস্তান এবং কানাডার দ্বৈত নাগরিকত্ব ধারণ করেন। তিনি ইংরেজি ও উর্দুতে সাবলীল এবং আরবিও পড়তে পারেন বলে অভিনেত্রী জানিয়েছিলেন।