বিশ্বের ‘বৃহত্তম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র’ পরীক্ষা করতে পুরোপুরি ভাবে প্রস্তুত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। খুব শীঘ্রই পুতিন সেই ‘অপ্রতিরোধ্য ব্রহ্মাস্ত্র’ পরীক্ষা করতে চলেছেন বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
আরএস-২৮ সারমাট ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটিকে ‘স্যাটান-২’ তকমা দিয়েছে পশ্চিমি বিশ্ব। ‘স্যাটান’ শব্দের অর্থ শয়তান। এই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটিকে ‘ডুমস্ডে ওয়েপন’ বা পৃথিবী শেষ করার অস্ত্র হিসাবেও ব্যাখ্যা করছেন কেউ কেউ।
পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রটির গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ২৬ হাজার কিলোমিটার। অনায়াসে এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে পাড়ি দিতে সক্ষম ‘স্যাটান-২’।
ক্ষেপণাস্ত্রের ওজন ২ লক্ষ ৮০ হাজার কিলোগ্রাম। উচ্চতা ১৪ তলা বাড়ির সমান।
রাশিয়ার দাবি, এই ক্ষেপণাস্ত্রের নাম শুনলেই পিলে চমকে উঠবে সকলের! পুতিনের দাবি, পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে নির্ভুল আঘাত হানতে সক্ষম সারমাট।
কেন একে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র বলা হচ্ছে? অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি হল এটি একসঙ্গে একাধিক পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম। পরমাণু অস্ত্র বহন করে বিশ্বের যে কোনও লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারে সারমাট।
দ্বিতীয়ত, এই ক্ষেপণাস্ত্রে ১০ বা তার বেশি ‘ওয়ারহেড’ যোগ করা যায়। অর্থাৎ, তা একাধিক যুদ্ধাস্ত্র নির্ভুল ভাবে ছুড়তে পারে। যার ফল, সাধারণ ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়ে সারমাটের ধ্বংসের ক্ষমতা অনেক বেশি।
পাশাপাশি ওই ক্ষেপণাস্ত্র এমনই প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয়েছে যে, একে ধরতে পারবে না শত্রুপক্ষের কোনও রাডার। ফলে শত্রুপক্ষের অজান্তেই এই ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারে বলে দাবি রুশ সংবাদমাধ্যমের।
রুশ সংবাদমাধ্যম এ-ও দাবি করেছে, এই ক্ষেপণাস্ত্রটি নিয়ে প্রায় ২২ বছর ধরে গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণা করে এই ক্ষেপণাস্ত্রটিকে এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যা অন্য ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি শক্তিশালী।
বলা হচ্ছে, সারমাটের তিনটি স্তর রয়েছে। দূর পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে তরল দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করা হয়।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘মেট্রো’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট এমন একটি রেজিমেন্ট তৈরির পরিকল্পনা করছেন, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে যারা ‘দ্বিতীয় শয়তান’কে নিয়ে লড়াইয়ে নামবে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই সেই দল তৈরি হয়ে যাবে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা সূত্র সংবাদ সংস্থা টিএএসএস-কে বলেছে, ‘‘ডিসেম্বরে কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনী এই অস্ত্রের দায়িত্ব পাবে। সেই বাহিনীর এক কমান্ডারও থাকবেন।’’ অন্য একটি সূত্র যোগ করেছে যে, সেই রেজিমেন্টকে পরীক্ষামূলক একটি যুদ্ধের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি চাউর হয় যে, রাশিয়ার সারমাট ক্ষেপণাস্ত্র সঠিক ভাবে পরীক্ষা করা হয়নি। সেই আবহেই ‘শয়তান-২’-এর পরীক্ষার কথা প্রকাশ্যে এসেছে। এর আগে ২০২২ সালের এপ্রিলে রাশিয়ার মধ্যে সারমাট ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা করা হয়েছিল বলে শোনা গিয়েছিল। রুশ সংবাদমাধ্যমের দাবি ছিল, ছ’হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যে নির্ভুল ভাবে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছিল এই ক্ষেপণাস্ত্রটি।
রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা টিএএসএস-এর প্রতিবেদনে প্রথমে দক্ষিণ মেরুতে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের উল্লেখ ছিল। তবে তার পর থেকে এই নিয়ে আর কোনও উচ্চবাচ্য করেনি রাশিয়ার সামরিক কর্তারা।
প্রসঙ্গত, ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে বিশ্বের বহু দেশ চিন্তিত।
রাশিয়ার আগামী প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে রয়েছে পুতিনের ভাষায় ‘অজেয়’ কিঞ্ঝল এবং আভানগার্ড হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সারমাটও।
ছবি: সংগৃহীত।