১৬ বছরের সংসার। পেশার দিক থেকেও সাফল্যের সিঁড়িতে বেশ অনেকটাই উপরে চড়েছেন রন্ধনশিল্পী। কিন্তু কয়েক মাস ধরে তিনি চর্চায় রয়েছেন তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে। বিবাহবিচ্ছেদ চান বলে পরিবার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ভারতের জনপ্রিয় রন্ধনশিল্পী কুণাল কপূর। তা নিয়েই চলছে সমালোচনা। সম্প্রতি হাই কোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
২০০৮ সালে একতা কপূরের সঙ্গে বিয়ে হয় কুণালের। বিয়ের আগে চাকরি করতেন একতা। তবে কুণালের দাবি, রন্ধনশিল্পী হিসাবে তিনি পরিচিতি পেলে কাউকে না জানিয়ে চাকরি ছেড়ে দেন একতা।
বিয়ের চার বছর পর ২০১২ সালে পুত্রসন্তান রণবীরের জন্ম দেন একতা। পরিবারে নতুন অতিথি আসার পর কুণাল এবং একতার মধ্যে দূরত্ব আরও বাড়তে থাকে। ছোট পর্দায় একটি জনপ্রিয় শোয়ের সঞ্চালনা করতে দেখা গিয়েছে কুণালকে। কুণালের অভিযোগ, শোয়ের শুটিং চলাকালীন ফ্লোরে গিয়ে তাঁর সঙ্গে ঝামেলা করেছিলেন একতা।
কুণালের দাবি, তিনি যখন শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন, তখন পুত্রকে নিয়ে সরাসরি ফ্লোরে পৌঁছে গিয়েছিলেন একতা। অশান্তি করার পর শুটিং ফ্লোরে উপস্থিত সকলের সামনে একতা তাঁকে চড় মেরেছিলেন বলেও দাবি করেন কুণাল।
শুধু তা-ই নয়, চার দেওয়ালের ভিতরেও কম অশান্তি করতেন না একতা, এমনটাই দাবি করেছেন কুণাল। একতার ব্যবহারে অসম্মান প্রকাশ পেত বলেই জানিয়েছেন রন্ধনশিল্পী।
কুণালের বাড়িতে যখন তাঁর বাবা-মা আসতেন তখন তাঁদের সঙ্গেও নাকি খারাপ ব্যবহার করতেন একতা। কুণালের অভিযোগ, এক দিন বাবার সামনে একতার কাছে শারীরিক হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন তিনি। পুরো ঘটনাটি মোবাইলে রেকর্ড করেছিলেন কুণালের বাবা। তার পর কুণালের বাবার কাছ থেকে নাকি ফোন ছিনিয়ে নিয়েছিলেন একতা।
চলতি বছরে বিবাহবিচ্ছেদ চেয়ে পরিবার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কুণাল। কিন্তু কুণালের সব অভিযোগ অস্বীকার করেন একতা।
পরিবার আদালতকে একতা জানান, তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন কুণাল। বিয়ের পর কুণালের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক বজায় রেখেছেন তিনি। কুণালের সঙ্গে সম্পর্কে বিশ্বস্ত থেকেছেন বলেও দাবি করেন তিনি। একতার অভিযোগ ছিল, নানা রকমের অজুহাত দেখিয়ে কুণাল বিবাহবিচ্ছেদ চাইছেন।
একতার আরও দাবি, পেশাগত জীবনে সাফল্য লাভের পর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন কুণাল। সব কিছু জানার পরেও নাকি মন দিয়ে সংসার করেছেন একতা।
২০১৫ সাল থেকে পুত্রকে নিয়ে একা থাকতে শুরু করেছিলেন একতা। এমনকি পুত্রের সঙ্গে কুণালকে দেখা করতেও দিতেন না একতা। এমনই অভিযোগ করেছেন কুণাল।
চাকরি ছেড়ে দেওয়ার প্রসঙ্গে একতা জানান, বিয়ের পর তিনি চাকরি করতেন বলে কুণালের বাবা-মা তাঁকে সব সময় কথা শোনাতেন। এই কারণে তিনি চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন।
কুণাল এবং একতার বিবাহবিচ্ছেদের মামলা পরিবার আদালত থেকে হাই কোর্টে পৌঁছয়। হাই কোর্ট তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদের পক্ষে রায় দিলে শীর্ষ আদালতে মামলা করেন একতা। মঙ্গলবার বিবাহবিচ্ছেদের রায়ে স্থগিতাদেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
১৯৭৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে জন্ম কুণালের। বাবা-মা এবং বোনের সঙ্গে সেখানেই থাকতেন তিনি। দিল্লির এক স্কুলে পড়াশোনা শেষ করার পর সেখানকার একটি কলেজে ভর্তি হন কুণাল।
বাণিজ্যে স্নাতক হওয়ার পর চণ্ডীগড়ের একটি কলেজ থেকে হোটেল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করেন কুণাল। তাঁর পরিবারের সকলে ব্যাঙ্কে কাজ করতেন। কুণালের পরিবারের ইচ্ছা ছিল, তিনিও যেন পড়াশোনা শেষ করার করার ব্যাঙ্কের চাকরিতে যোগ দেন। তবে কুণালের চোখে তখন অন্য স্বপ্ন।
ছোটবেলা থেকেই রান্নাবান্নার প্রতি আগ্রহ ছিল কুণালের। তাই স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর হোটেল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। বিলাসবহুল এক রেস্তরাঁয় দীর্ঘ দিন চাকরি করেন কুণাল।
খুব কম সময়ের মধ্যে রন্ধনশিল্পী হিসাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন কুণাল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে বিদেশের রাজনীতিবিদদেরও নিজের হাতের রান্না খাইয়েছেন তিনি।
ছোট পর্দার জনপ্রিয় রান্নার শোয়ের বিচারকের আসনে দেখা যায় কুণালকে। তাঁর অনুগামী মহলের বিস্তার অনেকটাই। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামের পাতায় কুণালের অনুগামীর সংখ্যা ৩৫ লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।
সব ছবি: সংগৃহীত।