সাধারণ সোফা। সেই সোফাটি রাখা থাকত আপাত অগোছালো একটা ঘরে। ঘরটি হত কোনও নাটকের পরিচালক বা নির্মাতার (তখনও চলচ্চিত্রের রমরমা হয়নি)। আর সোফার ব্যবহার হত তাঁর কাছে অভিনয়ের সুযোগ চাইতে আসা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের জন্য।
‘সোফার ব্যবহার’! সেটা ঠিক কেমন, তার একটি সহজ ব্যখ্যা দিয়েছিলেন নিউ ইয়র্কের বৈগ্রাহিক থিয়েটার নির্মাতা ‘ব্রডওয়ে’-র এক নর্তকী। তিনি বলেছিলেন, ‘‘গোটা ঘরে একটি মাত্র সোফা, যদি কাজ পেতে হয় তবে ওখানেই তোমায় ‘ওঁদের’ সঙ্গে শুতেও হবে।’’
এই ‘ওঁরা’ আসলে কারা? তার ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন নর্তকী অ্যাগনেস দে মিলে। ‘ওঁরা’ যে আদতে ব্রডওয়ের থিয়েটারের নির্মাতা তিন শুবার্ট ভাই, সে কথা বলেছিলেন তিনিই। নাটকে কাজের সুযোগ পাওয়া বা কাস্টিংয়ের বিনিময়ে শরীর দানের এই ঘটনা থেকেই ‘কাস্টিং কাউচ’ শব্দবন্ধের সূত্রপাত। পরবর্তী কালে চলচ্চিত্র জগতের বহু নায়িকা যার শিকার হন। এমনকি মিটু আন্দোলন চলাকালীন বলিউডেরও এমন বহু ঘটনা প্রকাশ্যে চলে আসে। জানা যায়, কাজ পাওয়ার বিনিময়ে বহু বলিউডের অভিনেত্রীকেই যৌন অনুগ্রহ করতে হয়েছিল পরিচালক-প্রযোজকদের।
তবে শুধু নায়িকারা নন, বলিউডের বহু নায়কও ‘কাস্টিং কাউচ’-এর শিকার হয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। তাঁদের মধ্যে চারজন নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা সর্বসমক্ষে প্রকাশও করেন। তাঁরা কারা? জেনে নিন—
পদ্মাবত-এর ‘আলাউদ্দিন খিলজি’-র চরিত্র রণবীর সিংহকে বলিউডের পাকাপোক্ত জায়গা এনে দিয়েছে বলে মনে করেন তাঁর সমালোচকরাও। ব্যান্ড বাজা বারাত থেকে অভিনয় জীবন শুরু করা রণবীর এখন বলিউডের প্রথম সারির অভিনেতা হিসেবে গণ্য হন। এই রণবীরকেও কাস্টিং কাউচের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। কেরিয়ারের শুরুতে হওয়া সেই অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ করেছেন অভিনেতা।
রণবীর জানিয়েছেন, সেদিন ওই কাস্টিং ডিরেক্টর তাঁকে নিজের বাড়িতে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তবে রণবীরের বায়োডাটায় নজর দেওয়ার প্রয়োজনও মনে করেননি তিনি। বদলে তিনি রণবীরকে পরামর্শ দেন ‘স্মার্ট অ্যান্ড সেক্সি’ হওয়ার। রণবীরের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের ইঙ্গিত দেন। অভিনেতাকে গড়িমসি করতে দেখে বিষয়টি নিয়ে দরাদরিও শুরু করেন। রণবীর অবশ্য শেষ পর্যন্ত প্রত্যাখ্যানই করেছিলেন ওই কাস্টিং ডিরেক্টরকে।
‘ভিকি ডোনার’ থেকে শুরু করে একের পর এক হিট ছবির অভিনেতা আয়ুষ্মান খুরানা। কাজের সুযোগের বিনিময়ে তাঁর কাছেও এসেছিল পরিচালকের কু-প্রস্তাব।
ভিকি জানিয়েছেন, তাঁকে সরাসরিই নগ্ন হতে এবং গোপনাঙ্গ প্রদর্শন করতে বলেছিলেন কাস্টিং ডিরেক্টর। এমনকি এ-ও বলেছিলেন, কথা শুনলে তবেই অভিনয়ের সুযোগ পাবেন। আয়ুষ্মান অবশ্য তাঁকে জানিয়ে দেন তিনি বিসমকামী। তাই ওই প্রস্তাবে রাজি হতে পারছেন না।
টেলিভিশন এবং সিনেমায় পরিচিত মুখ হর্ষবর্ধন রানে। বলিউডের উঠতি অভিনেতার তালিকায় তাঁর নাম থাকলেও সমালোচকদের চোখে পড়েছেন। ‘সনম তেরি কসম’, ‘হাসিন দিলরুবা’র মতো বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয়ও করেছেন। হর্ষও এমন পরিস্থিতির শিকার হন।
অভিনেতা জানিয়েছেন, একবার এক কাস্টিং ডিরেক্টর তাঁকে প্যান্ট খুলতে বলেন। কারণ জানতে চাওয়া হলে তাঁকে বলা হয় তিনি দেখতে চান হর্ষবর্ধনের পায়ের গঠন কীরকম? হর্ষ জানিয়েছেন, তিনি ওই পরিচালককে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে দেননি।
রাজীব খান্ডেলওয়াল কেরিয়ার শুরু করেছিলেন টেলিভিশনে। পরে সিনেমাতেও অভিনয় করেন। মিটু আন্দোলনের সময় নিজের অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ করেছিলেন অভিনেতা।
রাজীব জানিয়েছেন, বলিউডের এক প্রথম সারির পরিচালক তাঁকে তাঁর ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। বেশ কয়েকবার দেখা করতে ডেকেও পাঠান। কিন্তু দ্বিতীয় সাক্ষাতের পর রাজীবের মনে হয় কোথাও একটা গন্ডগোল হচ্ছে। কারণ ওই পরিচালক রাজীবকে তাঁর ঘরে যেতে বলেছিলেন। রাজীব অবশ্য নির্দেশ পালন করেননি। নিজের প্রেমিকার কথা জানিয়ে পরোক্ষে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি বিসমকামী। বিষয়টি বুঝতে পেরে নাকি রাজীবের কেরিয়ার শেষ করে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন প্রথম সারির ওই বলিউড পরিচালক।