পদ্মা সেতু নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ দু’দেশেই আলোড়ন তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি ব্যাপক আগ্রহ এবং কৌতূহলও তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের ‘স্বপ্নের সেতু’কে কেন্দ্র করে।
এই সেতু তৈরিতে বিশ্বের বহু গুরুত্বপূর্ণ সেতুর চেয়ে বেশি খরচ হয়েছে বলে বাংলাদেশের একাধিক সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে।
অনেকেরই জিজ্ঞাস্য, ঠিক কত টাকা খরচ হয়েছে এই সেতু তৈরি করতে! তার সঠিক হিসেব পাওয়া না গেলেও এই সেতু তৈরি করতে যে সিমেন্ট ব্যবহার হয়েছে, তার খরচ জানলে কপালে উঠবে চোখ।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ২৪ লাইভ নিউজপেপারের তথ্য অনুযায়ী, পদ্মা সেতু তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে দামি সিমেন্ট।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের দাবি, সে দেশে এই মুহূর্তে ৫০ কেজির এক বস্তা সিমেন্টের দাম ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা।
যত ভালই হোক না কেন, ৬০০ টাকার উপরে সে দেশে কোনও সিমেন্ট নেই। আর পদ্মা সেতুর পিলারে ‘মাইক্রো ফাইন’ নামে যে সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে, তার বস্তা প্রতি খরচ ১৫ হাজার টাকা।
এই সিমেন্ট অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক দেওয়ান মহম্মদ আব্দুল কাদের জানান, পদ্মার নীচের মাটি খুবই নরম। পাশাপাশি পদ্মা খরস্রোতা হওয়ায় প্রতিনিয়ত এর নীচের মাটি সরে যায়।
এই অবস্থায় এত বড় পরিকাঠামো কী করে নদীর উপর দাঁড়িয়ে থাকবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছিলেন ইঞ্জিনিয়াররা।
তাই শুধু দামি সিমেন্ট ব্যবহার করাই নয়, পদ্মার ভার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা স্তম্ভগুলির ব্যাস রাখা হয়েছে প্রায় ১০ ফুট।
আব্দুল আরও জানিয়েছেন, প্রতিটি স্তম্ভের নীচে রয়েছে বড় বড় সিমেন্টের চাঁই।
বাংলাদেশের সাধারণ সিমেন্ট দিয়ে এ সব স্তম্ভ তৈরি করা সম্ভব ছিল না। তাই অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা মাইক্রো ফাইন সিমেন্ট ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে এই স্তম্ভগুলি।
এই মাইক্রো ফাইন সিমেন্ট অত্যন্ত মিহি এবং শক্তিশালী। আর এই কারণে এর বাঁধন খুবই শক্ত হয়। জলের তলায় থাকলেও এই সিমেন্টে বিশেষ ক্ষয় হয় না।
প্রায় দু’দশকের পরিকল্পনার পর তৈরি হয়েছে পদ্মা সেতু। ২০০৭ সালে পদ্মা সেতুর জন্য বাজেট পাশ করা হয়।
সেই সময় দাঁড়িয়ে এই সেতু তৈরির জন্য ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা খরচ হবে বলে বাজেটে উল্লেখ করা হয়।
সেতুর মূল নকশা এবং দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির কারণে ২০১১ সালে খরচের হিসেব বেড়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা।
২০১৬ সালে আরও ৮ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা যোগ হয় পদ্মা সেতুর বাজেটে।
চতুর্থ দফার বাজেটে এই সেতুর বাজেট বাড়ে আরও ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশের এই সংবাদমাধ্যম অনুযায়ী, সব মিলিয়ে পদ্মা সেতু তৈরি করতে প্রায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তবে বাজেটের পুরো টাকা এখনও খরচ হয়নি বলেই সূত্রের খবর।
সেতুর খরচের মধ্যে রয়েছে জমি অধিগ্রহণ, সেতুর পরিকাঠামো তৈরি, পুনর্বাসন ও পরিবেশ খাতে খরচ এবং প্রকল্পের শ্রমিকদের বেতন।
পদ্মা সেতুর নকশার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের এইসিওম-কে। ২০০৯ সালে এই সংস্থা সেতুর নকশা তৈরির কাজ শুরু করে। তাদের সঙ্গে ছিল অস্ট্রেলিয়ার এসমেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, কানাডার নর্থ ওয়েস্ট হাইড্রলিক কনসালটেন্টস ও বাংলাদেশি এসিই কনসালটেন্টস লিমিটেড।
পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ন’কিলোমিটারেও বেশি। তবে জলের উপরের অংশে রয়েছে সওয়া ছয় কিলোমিটার।
পদ্মার মতো সেতুগুলির উপরে যানবাহনের ওজনের পাশাপাশি নীচে নদীর জলের চাপ থাকে। সেতুতে বহু গাড়ি চলাচলের ফলে কম্পনের সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি সোজা সেতুতে অনেক সময় গাড়ি চালকদের মনঃসংযোগ নষ্ট হয়। আর সেই কারণেই এই সেতু বাঁকিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।