নরওয়ের রাজকুমারী মার্থা লুইস। বাগ্দত্তের সঙ্গে যৌথ ভাবে বিকল্প ওষুধ ব্যবসায় মনোনিবেশ করার জন্য রাজপাট ত্যাগ করলেন তিনি। মঙ্গলবার নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন মার্থা।
নরওয়ের ৫১ বছর বয়সি রাজকুমারীর বাগ্দত্তের ডুরেক ভেরেট। ডুরেক এক জন স্বঘোষিত ‘শ্যামন’ (আধ্যাত্মিক গুরু)। হলিউডে ডুরেক ব্যাপক জনপ্রিয়। ডুরেকের সঙ্গে মার্থার সম্পর্কের খবর নরওয়ে জুড়ে ব্যাপক হইচই তৈরি করেছিল। ডুরেকের আগের পাঁচ প্রজন্মও শ্যামন ছিলেন।
বিভিন্ন আলপটকা মন্তব্য করে বার বার বিতর্কে পড়তে হয়েছে ডুরেককে। আফ্রিকান-আমেরিকান ডুরেক তাঁর লেখা বই ‘স্পিরিট হ্যাকিং’-এ দাবি করেছিলেন, এক জন মানুষ নিজের ইচ্ছায় ক্যানসারকে শরীরে বাসা বাঁধতে দেয়। আর এর পরই বিতর্কের মুখে পড়েন ডুরেক।
ডুরেকের একটি নিজস্ব ওয়েবসাইটও রয়েছে। কোভিড আবহে সেই ওয়েবসাইট থেকে তিনি ‘স্পিরিট অপ্টিমাইজার’ নামে একটি পাথর ১৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। ওয়েবসাইটে তিনি দাবি করেছিলেন যে এই পাথর তাঁকে কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে।
এক সময়ে নরওয়ের রাজপরিবারের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে থাকলেও মার্থা এবং ডুরেকের সম্পর্ক প্রকাশ্যে আসার পর থেকে সেই জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে।
মঙ্গলবার ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে মার্থা জানান, ‘রাজপরিবারে শান্তি আনতে’ তিনি রাজপাট ত্যাগ করছেন।
রাজকুমারী হওয়ার পাশাপাশি রাজপরিবারের আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদের ভার ছিল মার্থার কাঁধে। সমস্ত দায়িত্ব থেকেই অব্যাহতি নিয়েছেন তিনি।
রাজপরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, রাজকুমারী মার্থা রাজকীয় পৃষ্ঠপোষক হিসাবে আর থাকছেন না। পাশাপাশি তিনি আর রাজপরিবারের প্রতিনিধিত্ব করবেন না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। তবে রাজার ইচ্ছা অনুসারে তিনি সব সময়ই রাজকুমারী থাকবেন।
রানি সোনজাকে নিয়ে নরওয়ের রাজা হ্যারল্ড সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় জানিয়েছেন, তিনি ‘দুঃখিত’ যে রাজকুমারী আর রাজপরিবারের প্রতিনিধিত্ব করবেন না।
২০০২ সালেই মার্থা ‘হার রয়্যাল হাইনেস’ খেতাব হারান। ২০১৯ সালে ব্যবসার স্বার্থে রাজকুমারী উপাধি ব্যবহার করবেন না বলেও জানিয়েছিলেন।
চলতি বছরের জুন মাসে আধ্যাত্মিক গুরু ডুরেকের সঙ্গে বাগ্দান হওয়ার পর থেকেই বিকল্প ওষুধের প্রতি দম্পতির বিশ্বাস প্রকাশ্যে আসে।
বিকল্প ওষুধের প্রতি আগ্রহের কারণে অনেক চিকিৎসকও প্রকাশ্যে মার্থা এবং ডুরেকের সমালোচনা করেছেন।
হাস্যকৌতুক শিল্পী ড্যাগফিন নর্ডবোর মতে ডুরেক এক জন প্রতারক এবং হাতুড়ে ডাক্তার।
ডুরেকের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে রাজা হ্যারল্ড সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘রাজপরিবারের সঙ্গে ওঁর অনেক বিষয়েই মতপার্থক্য রয়েছে। তবে আমরা নিজেদের মত মেনে নিয়েই এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’
বিকল্প ওষুধ নিয়েও নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে রাজপরিবার। বিবৃতি জারি করে রাজপরিবার জানায়, নরওয়ের স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং চিকিৎসকদের উপর তাদের পূর্ণ আস্থা আছে।
মার্থার পাল্টা দাবি, গবেষণাভিত্তিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি সচেতন। কিন্তু বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতিতেও তাঁর সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে।
মার্থা বলেন, ‘‘আধ্যাত্মিকতা, প্রাণীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, যোগব্যায়াম এবং ধ্যান গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প ওষুধ হতে পারে। পরিপূরক হতে পারে বন্ধুত্বপূর্ণ হাত, একটি আকুপাংচারের সূচ এমনকি একটি পাথরও।’’
যদিও এই মতামত তাঁর ব্যক্তিগত এবং এই কারণেই তিনি নিজেকে রাজপরিবার থেকে আলাদা করে নিয়েছেন বলেও তাঁর দাবি।
এর আগেও মার্থার এক বার বিয়ে হয়েছিল। সেই বিয়ে থেকে তাঁর তিন সন্তানও রয়েছে। তবে মার্থার সেই বিয়ে ভেঙে যায়।
রাজপরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, মার্থা এবং ডুরেকের বিয়ে হয়ে গেলে তাঁর নতুন স্বামী রাজপরিবারের সদস্য হবেন। তবে ডুরেক কোনও উপাধি ধারণ করবেন না বা রাজতন্ত্রের প্রতিনিধিত্ব করবেন না বলেও স্পষ্ট করেছে রাজপরিবার।