ধনীদের তালিকায় সবে দু’বছর হল নাম উঠেছে। অথচ এরই মধ্যে অম্বানী, আদানিদের উত্থানের সঙ্গে তুলনা টানা হচ্ছে তাঁর।
নাম ইন্দর জয়সিংহানি। গত এক বছরে এই ধনকুবেরের সম্পত্তি বেড়েছে দ্বিগুণ।
ভারতীয় ধনকুবেরদের সেরা ১০০-র তালিকায় ২০২২ সালেও ৬০ নম্বরে ছিল তাঁর নাম। ২০২৩ সালে এক লাফে ৩২ নম্বরে উঠে এসেছেন তিনি।
এক বছরে এমন উত্থান সচরাচর চোখে পড়ে না। এর আগে গৌতম আদানিও এমন আচমকাই ধনীতালিকার শীর্ষে চলে এসেছিলেন। ইন্দরের উত্থানেও সেই হঠাৎ পরিবর্তন নজরে পড়েছে বাজার বিশেষজ্ঞদের।
ধনীতালিকার হিসাব বলছে ২০২১ সালে প্রথম বার ভারতীয় ধনীদের ১০০ জনের তালিকায় নাম উঠেছিল ইন্দরের। সেই সময়ে ১০০ জনের তালিকায় তিনি ছিলেন ৫৭তম।
তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৩৬০ কোটি ডলারের। অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক ছিলেন তিনি।
এর পরে ২০২২ সালে তাঁর সম্পত্তির মূল্য সামান্য কমে দাঁড়ায় ৩৪০ কোটি ডলারে। যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২৮ হাজার ৩০৮ কোটি টাকার সমান। ধনীতালিকাতেও নাম নেমে আসে ৬০ নম্বরে।
পরের এক বছরে আচমকাই সব হিসাব বদলে যায়। ইন্দরের সম্পত্তি এক বছরে বাড়ে ৯১.০৪ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ।
সম্পত্তির মূল্য বেড়ে দাঁড়ায় ৬৪০ কোটি ডলারে। অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৫৩ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। এক লাফে ২৮ জনকে টপকে ধনীতালিকায় ৩২ নম্বরে চলে আসে ইন্দরের নাম। কিন্তু কী করে এমন রকেটগতিতে উত্থান?
সেই রহস্য স্পষ্ট নয়। তবে ইন্দরের অতীত বলছে, নিজের ব্যবসাকে দাঁড় করানোর জন্য বহু দিন ধরেই চেষ্টা করে আসছেন তিনি। সেই চেষ্টা শুরু হয়েছিল ১৯৮৩ সাল থেকে। সফল হল ৪০ বছর পর। তবে মূলত গত চার-পাঁচ বছরের উত্থানে।
পেট চালাতেই ব্যবসা শুরু করেছিলেন একদা মুম্বইয়ের বাসিন্দা ইন্দর। মুম্বইয়ের চওলে বাবা এবং তিন ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন। বিদ্যুতের সরঞ্জামের একটি ছোট্ট দোকান ছিল তাঁদের। ১৯৬৮ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর দোকানটির দায়িত্ব নেন তিনি।
তখনও পড়াশোনা শেষ হয়নি। অথচ ছোট তিন ভাইয়ের খাওয়া-পড়ার ভার এসে পড়েছে তাঁর উপরেই। পড়ার পাট চুকিয়ে বাবার ব্যবসার হাল ধরেছিলেন ইন্দর। তার ১৫ বছর পর ছোট্ট একটি গ্যারাজে ভাইদের নিয়ে শুরু করেছিলেন ইলেকট্রিক তারের ব্যবসা।
কালক্রমে সেই ব্যবসার বিস্তার হয়। ইন্দর তাঁর প্রথম কারখানা খোলেন গুজরাতে।
প্রথমে শুধু বিদ্যুতের তারের ব্যবসা করলেও ধীরে ধীরে তাঁর সংস্থা সিলিং ফ্যান, টেবিল ফ্যানের মতো বিভিন্ন বিদ্যুৎচালিত পাখা, এলইডি লাইট, বিভিন্ন রকমের আলো, সুইচ, সৌরবিদ্যুৎ চালিত পণ্যও তৈরি করতে শুরু করে। অন্তত এই সংস্থার ওয়েবসাইট তা-ই বলছে।
গত এক বছরে এই সবের ব্যবসা হঠাৎই ফুলেফেঁপে উঠেছে জয়সিংহানিদের। অর্থনীতিবিদদের একাংশের বক্তব্য, গত এক বছরে দেশ জুড়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিকরণের যে জোয়ার এসেছে, তার জেরেই লাভবান হয়েছেন জয়সিংহানিরা।
তবে অন্য আরও একটি তথ্য বলছে, ২০২১ সালে ভারতের ধনীতালিকায় নাম ওঠার বছর তিনেক আগে ২০১৮ সালে হঠাৎই ইন্দরের সংস্থায় শেয়ার কিনেছিল বিশ্বব্যাঙ্ক।
অথচ তখনও ইন্দরের সংস্থার নাম তেমন পরিচিত নয়। তাঁর নিজের নামও ভারতীয় ধনীতালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
অর্থনীতিবিদেরা আরও একটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ২০১৪ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। ওই বছর খাস তাঁরই রাজ্যে প্রথম উৎপাদন সংস্থা গড়েন ইন্দর। সেটা কি নেহাতই কাকতালীয়?