কেরিয়ার শুরু করেন ছোট পর্দায়। প্রায় এক দশক হিন্দি ধারাবাহিকে কাজ করার পর বলিপাড়ায় পা রাখেন অভিনেত্রী। অক্ষয় কুমার, ইমরান হাশমি এবং রণবীর কপূরের মতো তারকাদের ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন তিনি। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনের প্রভাব পড়ে তাঁর পেশাগত জীবনে। প্রাক্তন প্রেমিকের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার কারণে কাজের সুযোগ হারান মধুরিমা তুলি।
১৯৮৬ সালের অগস্ট মাসে ওড়িশায় এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম মধুরিমার। ওড়িশায় জন্ম হলেও উত্তরাখণ্ডের দেহরাদূনে বেড়ে ওঠা তাঁর। বাবা-মা এবং ভাইয়ের সঙ্গে সেখানেই থাকতেন তিনি।
পড়াশোনার পাশাপাশি মধুরিমার আগ্রহ ছিল খেলাধুলোর প্রতি। স্কুলে পড়াকালীন ক্রিকেট খেলে কেরিয়ার গড়ে তুলতে চাইতেন তিনি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্ন বদল হয় তাঁর।
মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিজ্ঞাপনে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন মধুরিমা। বলিপাড়া সূত্রে খবর, অভিনয় করে ১৫০০ টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন তিনি।
দেহরাদূনের কলেজে পড়াকালীন মডেলিংয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মায় মধুরিমার। সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বিজয়ীও হন তিনি। এর পর অভিনয় শিখবেন বলে মুম্বই চলে যান।
মুম্বইয়ের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অভিনয় শিখতে শুরু করেন মধুরিমা। একাধিক সংস্থার বিজ্ঞাপনী প্রচারে মডেলিং করতে দেখা যায় তাঁকে।
২০০৭ সালে ‘কস্তুরী’ নামের এক হিন্দি ধারাবাহিকের হাত ধরে ছোট পর্দায় প্রথম অভিনয় করেন মধুরিমা। তার পর ‘শ্রী’, ‘ঝাঁসি কি রানি’, ‘পরিচয়’, ‘কয়ামত কি রাত’ নামের একাধিক ধারাবাহিকে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি।
‘২০১৪’ সালে ‘কুমকুম ভাগ্য’ ধারাবাহিকে অভিনয় করে মধুরিমা তাঁর পরিচিতি তৈরি করলেও তিনি ২০১৭ সালে ‘চন্দ্রকান্তা’ ধারাবাহিকে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পান।
২০০৮ সালে ‘হোমাম’ নামের একটি তেলুগু ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান মধুরিমা। তেলুগু ছবির পাশাপাশি পঞ্জাবি, তামিল, কন্নড়, হিন্দি, এমনকি ইংরেজি ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য ব্ল্যাক প্রিন্স’ নামের ইংরেজি ছবিতে অভিনয় করেন মধুরিমা। এই ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় বর্ষীয়ান অভিনেত্রী শাবানা আজ়মিকেও। ছবিতে শাবানা যে চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, পর্দায় সেই চরিত্রের ছেলেবেলা ফুটিয়ে তুলেছিলেন মধুরিমা।
২০০৮ সালে বড় পর্দায় মুক্তি পায় রণবীর কপূরের ‘বচনা অ্যায় হাসিনো’। রণবীর ছাড়াও এই ছবিতে অভিনয় করেন দীপিকা পাড়ুকোন, বিপাশা বসু, মিনিশা লাম্বার মতো বলি নায়িকারা। এই ছবিতে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান মধুরিমা।
‘কালো’, ‘সিগারেট কি তারাহ’, ‘ওয়ার্নিং’, ‘পাস্তা’, ‘জিনা অভি বাকি হ্যায়’-এর মতো একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছেন মধুরিমা। কিন্তু কোনও ছবিই বক্স অফিসে সফল হয়নি।
২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বেবি’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান মধুরিমা। এই ছবিতে বলিউডের ‘খিলাড়ি’ অক্ষয় কুমারের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
২০১৫ সালে ‘হমারি অধুরি কহানি’ ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। ইমরান হাশমি, বিদ্যা বালন এবং রাজকুমার রাও অভিনীত এই ছবিতে ক্যামিয়ো চরিত্রে অভিনয় করেন মধুরিমা।
২০১৭ সালে তাপসী পন্নু অভিনীত ‘নাম শাবানা’ ছবিতে ক্যামিয়ো চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান মধুরিমা। তার পর থেকে নাকি বলিউডে কাজের প্রস্তাব তেমন পান না অভিনেত্রী। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে তেমনটাই দাবি করেছিলেন তিনি।
‘চন্দ্রকান্তা’ ধারাবাহিকে মধুরিমার সহ-অভিনেতা ছিলেন বিশাল আদিত্য সিংহ। পেশাগত সূত্রে আলাপ হলেও তা বন্ধুত্ব থেকে প্রেমে পরিণত হয়। কয়েক বছর সম্পর্কে থাকার পর বিচ্ছেদ হয়ে যায় দুই তারকার।
বিশালের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর নাচের একটি জনপ্রিয় শোয়ে প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করেন মধুরিমা। সেখানে প্রতিযোগী ছিলেন বিশালও। তার পরেই ‘বিগ বস্’-এর ত্রয়োদশ সিজ়নে দু’জনকে প্রতিযোগী হিসাবে দেখা যায়।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, একই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার পর বিশাল এবং মধুরিমার সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়ে ওঠে। মধুরিমার অভিযোগ, তাঁর গায়ে জল ঢেলে দিয়েছিলেন বিশাল। সেই সময়ে তিনি রেগে গিয়েছিলেন। রাগের বশে বিশালকে ফ্রাইং প্যান দিয়ে আঘাত করেছিলেন মধুরিমা। এই ঘটনা নিয়েই শুরু হয় বিতর্ক।
মধুরিমা এক পুরনো সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, ‘বিগ বস্’-এ বিশালের সঙ্গে অশান্তি হওয়ার পর তাঁর পেশাগত জীবনে প্রভাব পড়ে। অভিনেত্রী বলেছিলেন, ‘‘আমার হাতে কোনও কাজ নেই। ওই একটি ঘটনা দিয়েই লোকে আমায় বিচার করেন। সকলে ভাবেন, আমি নেতিবাচক চরিত্রের ব্যক্তি। তাই আমি কোনও কাজও পাই না আর।’’
বিতর্কে জড়ানোর পর মাত্র দু’টি মিউজ়িক ভিডিয়োয় অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে মধুরিমাকে। তার পর কোনও ধারাবাহিক অথবা সিনেমায় অভিনয় করতে দেখা যায়নি তাঁকে।
সমাজমাধ্যমে অনুগামীমহল নজর কাড়ার মতো মধুরিমার। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ১০ লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।
সব ছবি: সংগৃহীত।