গুণীজনেরা বলেন, লোভ করা ভাল নয়। আর সেই লোভ যদি টাকার হয়, তা হলে শত যোজন দূরে থাকাই ভাল। কিন্তু টাকার লোভ সংবরণ করা চাট্টিখানি কথা নয়! আর সেই কারণেই এক সাধারণ মানুষের জীবন এক লহমায় বদলে গেল। টাকার লোভে অন্ধ হয়ে খুনই করে ফেললেন এক যুবক।
প্রতীকী ছবি।
২০২২ সালের ঘটনা। এক গবেষক ছাত্রের গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছিল। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে যে, ওই গবেষক ছাত্র খুন হয়েছেন। তাঁর দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলে দেওয়া হয়েছিল বিভিন্ন জায়গায়।
প্রতীকী ছবি।
উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে এই খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। খুন হন অঙ্কিত নামে ৪০ বছরের এক যুবক। মোদীনগরে উমেশ শর্মা নামে ৩৫ বছরের এক যুবকের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন অঙ্কিত। উমেশের বিরুদ্ধেই খুনের অভিযোগ ওঠে। ঠিক কী ঘটেছিল?
ছবি সংগৃহীত।
বাগপতের বাসিন্দা অঙ্কিত। ২০১৪ সালে তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়। পরের বছর, ২০১৫ সালে বাবাকে হারান তিনি। তার পর থেকে একাই থাকতেন। ভীমরাও আম্বেদকর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করছিলেন তিনি।
ছবি সংগৃহীত।
মোদীনগরে উমেশের বাড়িতে ভাড়া থাকতে শুরু করেন অঙ্কিত। উমেশের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বেশ ভাল ছিল। বিশেষ করে উমেশের স্ত্রীর সঙ্গে অঙ্কিতের খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। উমেশের স্ত্রীকে বোন বলে ডাকতেন তিনি। রাখিপূর্ণিমায় অঙ্কিতের হাতে রাখিও বাঁধতেন উমেশ-পত্নী।
ছবি সংগৃহীত।
মোদীনগরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে কম্পাউন্ডার হিসাবে কাজ করতেন উমেশ। ব্যবসা করতে চেয়েছিলেন তিনি। সেই কারণে টাকার প্রয়োজন ছিল তাঁর। অঙ্কিতের কাছ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা ধার নেন উমেশ। আর এই নিয়েই যত গোলমাল।
প্রতীকী ছবি।
অঙ্কিতের কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত দিতে পারেননি উমেশ। এর পরই অঙ্কিতকে খুনের ছক কষেন তিনি। সেই সময় বাগপতে পূর্বপুরুষের সম্পত্তি বিক্রি করেছিলেন অঙ্কিত।
প্রতীকী ছবি।
সম্পত্তি বিক্রির কথা জানতে পারেন উমেশ। সেই সঙ্গে তিনি এ-ও জানতে পারেন যে, অঙ্কিতের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১ কোটি টাকা রয়েছে। এটা জানার পরই অঙ্কিতের কাছ থেকে টাকা হাতাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন উমেশ।
প্রতীকী ছবি।
যেমন ভাবনা, তেমন কাজ। এর পরই টাকার লোভে বাড়িতেই অঙ্কিতকে শ্বাসরোধ করে খুন করেন উমেশ। এতেই শেষ নয়। প্রমাণ লোপাট করতে অঙ্কিতের দেহ ৪ টুকরো করেন। তার পর তা ৩টি জায়গায় ফেলে দেন। তদন্তে নেমে এমন তথ্যই জানতে পেরেছিল পুলিশ।
প্রতীকী ছবি।
গাজিয়াবাদ এবং মুজফ্ফরনগরে গঙ্গা ক্যানাল, দাসনা এলাকায় ইস্টার্ন পেরিফেরাল এক্সপ্রেসওয়ের কাছে জঙ্গলে অঙ্কিতের দেহাংশ ফেলে দেওয়া হয়।
প্রতীকী ছবি।
অঙ্কিতকে খুনের পর স্বাভাবিক জীবনযাপনই করতেন উমেশ। তবে রহস্যভেদ করতে সক্রিয় হন অঙ্কিতের বন্ধুরা। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে অঙ্কিতের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে উদ্বিগ্ন হন তাঁর বন্ধুরা। প্রথমে তাঁরা ভেবেছিলেন, হয়তো পিএইচডি নিয়ে ব্যস্ত অঙ্কিত। কিন্তু অঙ্কিতের ফোন বন্ধ থাকায় সন্দেহ দানা বাঁধে তাঁদের।
ছবি সংগৃহীত।
কী হল অঙ্কিতের? জানতে মোদীনগরে অঙ্কিতের সেই ভাড়া বাড়িতে যান বন্ধুরা। বাগপতের বাড়িতেও যান তাঁরা। কিন্তু অঙ্কিতের দেখা পাওয়া যায়নি। এর পরই অঙ্কিতের বন্ধুদের সন্দেহ আরও গাঢ় হয়।
প্রতীকী ছবি।
২০২২ সালের নভেম্বর মাস। সেই সময় ‘অঙ্কিত সার্চ’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলেন তাঁর বন্ধুরা। কয়েক দিনের মধ্যেই অঙ্কিতের ফোন নম্বর থেকে মেসেজ পেতে থাকেন তাঁর বন্ধুরা। কিন্তু ফোন করলে কেউ রিসিভ করতেন না।
প্রতীকী ছবি।
উমেশের সঙ্গেও দেখা করেছিলেন অঙ্কিতের বন্ধুরা। অঙ্কিতের ফোন নম্বর থেকে যে মেসেজ পেয়েছিলেন তাঁর বন্ধুরা, সেই একই মেসেজ তাঁর ফোনেও এসেছে বলে তা দেখান উমেশ। এর জেরে সন্দেহ আরও জোরালো হয়।
ছবি সংগৃহীত।
মোবাইল ফোনের টেক্সট মেসেজে হিন্দিতে বন্ধুদের ‘তু’ বলে সম্বোধন করে লেখা ছিল। আর এতেই সন্দেহ হয় অঙ্কিতের বন্ধুদের। কারণ তাঁদের দাবি, অঙ্কিত বরাবরই তাঁদের ‘আপ’ বলে সম্বোধন করতেন। অঙ্কিতের বন্ধুরা বুঝতে পারেন যে, যিনি মেসেজ পাঠাচ্ছেন, তিনি অঙ্কিত নন।
প্রতীকী ছবি।
গত বছরের ১২ ডিসেম্বর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন অঙ্কিতের বন্ধুরা। এর পরই তদন্তে নামে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় উমেশকে। তাঁকে জেরা করতেই রহস্যের সমাধান হয়। টাকার জন্য অঙ্কিতকে খুন করে তাঁর দেহ কুড়ুল দিয়ে কেটে টুকরো করে বিভিন্ন জায়গায় ফেলার কথা পুলিশকে জেরায় জানান উমেশ।
প্রতীকী ছবি।
এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় উমেশের এক বন্ধু প্রবেশ শর্মাকেও। অঙ্কিতের ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড হাতিয়েছিলেন উমেশ। এর পর অঙ্কিতের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে প্রবেশকে পাঠিয়েছিলেন উমেশ। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে যে, টাকার জন্যই নিজের ভাড়াটিয়া অঙ্কিতকে খুন করেছিলেন উমেশ। টাকার লোভে খুনের ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছিল ওই এলাকায়।
গ্রাফিক- সনৎ সিংহ।