বাইশ গজের নায়কের বোধহয় এ ভাবেই জন্ম হয়। রবিবার আইপিএলে আমদাবাদে নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে নাটকীয় পরিসমাপ্তি ঘটেছে তাঁর হাত ধরে। শেষ ওভারে গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে জিততে কলকাতা নাইট রাইডার্সের দরকার ছিল ২৯ রান। শেষ ওভারে যা প্রায় অসম্ভব ছিল টিম কলকাতার। কিন্তু সেই অসাধ্যসাধন করেই রাতারাতি জয়ের নায়ক হয়ে উঠেছেন রিঙ্কু সিংহ।
ছবি সংগৃহীত।
শেষ ওভারে ব্যাট হাতে রীতিমতো ভেলকি দেখিয়েছেন রিঙ্কু। প্রথম বলে ১ রান হয়। এর পরই খেলা ঘুরিয়ে দেন ২৫ বছরের এই তরুণ তুর্কি। পর পর ৫ বলে ৫ ছক্কা মেরে জয় ছিনিয়ে নেন উত্তরপ্রদেশের ‘বাজিগর’।
ছবি সংগৃহীত।
কেকেআরের জয়ের নেপথ্যে রিঙ্কুর এই খেল দেখে মুগ্ধ ক্রিকেটপ্রেমীরা। উচ্ছ্বসিত কেকেআর শিবিরও। এমন অবিশ্বাস্য জয়ের মুহূর্ত তো সব সময় তৈরি হয় না।
ছবি সংগৃহীত।
উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ের সাধারণ ঘরের ছেলে রিঙ্কু। ছোট থেকেই ক্রিকেটের প্রতি তাঁর অগাধ ভালবাসা ছিল। কিন্তু সেই স্বপ্নপূরণের যাত্রাপথ মোটেই মসৃণ ছিল না। বরং ক্রিকেটার হওয়াটা তাঁর কাছে একটা সংগ্রাম ছিল।
ছবি সংগৃহীত।
১৯৯৭ সালের ১২ অক্টোবর আলিগড়ে জন্ম রিঙ্কুর। ৫ ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় রিঙ্কু। তাঁর এক বোন রয়েছে।
ছবি সংগৃহীত।
রিঙ্কুদের অভাবের সংসার। তাঁর বাবা বাড়ি বাড়ি এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডার বিলি করতেন। এক দাদা অটোচালক। অন্য এক দাদার কোচিং সেন্টার রয়েছে। পড়াশোনাতেও ভাল ছিলেন না রিঙ্কু। নবম শ্রেণিতে অকৃতকার্য হওয়ার পর আর স্কুল যাননি।
প্রতীকী ছবি।
টানাটানির সংসারে দু’বেলা খাবারের জন্য রিঙ্কুকে ঝাড়ুদারের কাজে লাগিয়েছিলেন তাঁর দাদা। টাকা উপার্জনের জন্য কাজের দরকার ছিল ঠিকই। কিন্তু ঝাড়ুদার হতে চাননি রিঙ্কু।
ছবি সংগৃহীত।
ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নে বুঁদ তখন রিঙ্কু। সেই সময় বাড়ি ফিরে রিঙ্কু তাঁর মাকে জানিয়েছিলেন যে, কোনও কাজ করার থেকে ক্রিকেটে মন দিতে চান তিনি।
ছবি সংগৃহীত।
অভাব থাকলেও ক্রিকেট খেলায় কখনও ইতি টানেননি রিঙ্কু। তাঁর যখন ১৭ বছর বয়স, সেই সময় প্রথম বার উত্তরপ্রদেশ রাজ্য ক্রিকেট দলে খেলার সুযোগ পান। নিজের রাজ্যের হয়ে লিস্ট এ ম্যাচ খেলেন রিঙ্কু। সেটা ২০১৪ সাল। ৮৩ রান করেছিলেন রিঙ্কু।
ছবি সংগৃহীত।
এর পর ২০১৬ সালের ৫ নভেম্বর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে হাতেখড়ি হয় রিঙ্কুর। প্রথম ৭টি লিস্ট এ-র ম্যাচে ৪টি অর্ধশতরান করেছিলেন তিনি। যা দেখে অনেকেই বুঝেছিলেন যে, রিঙ্কুর মধ্যে ভাল ক্রিকেটার হওয়ার মশলা রয়েছে।
ছবি সংগৃহীত।
২০১৮ সালে বিজয় হজারে ট্রফিতে ত্রিপুরার বিরুদ্ধে ৪৪ বলে ৯১ রান করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন এই বাঁহাতি ব্যাটার।
ছবি সংগৃহীত।
২০১৭ সালে আইপিএলে ভাগ্য খুলে যায় রিঙ্কুর। ১০ লক্ষ টাকায় রিঙ্কুকে কিনেছিল কিংস ইলেভেন পঞ্জাব। তবে সে বার টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগই পাননি রিঙ্কু। তাই ব্যাট হাতে তাঁর কেরামতি দেখার সুযোগ পায়নি বাইশ গজের দুনিয়া।
ছবি সংগৃহীত।
২০১৮ সালে ৮০ লক্ষ টাকায় রিঙ্কুকে নেয় কেকেআর। এর পর থেকে কলকাতার দলেই রয়েছেন উত্তরপ্রদেশের ছেলে। তবে খেলার সুযোগ খুবই কম পেয়েছেন তিনি।
ছবি সংগৃহীত।
কেকেআর দলে যোগ দেওয়ার পর একাধিক ম্যাচে ফিল্ডিং করতে দেখা গিয়েছে রিঙ্কুকে। দুর্দান্ত সব ক্যাচও ধরেছেন। কিন্তু সে ভাবে ম্যাচ খেলতে দেখা যায়নি তাঁকে।
ছবি সংগৃহীত।
সেই রিঙ্কুই রবিবার ৫ ছক্কা মেরে রাতারাতি ‘নায়ক’ হয়ে উঠলেন। ঠিক যেন কোনও সিনেমার ক্লাইম্যাক্স দৃশ্য।
ছবি সংগৃহীত।
ক্রিকেট দুনিয়ায় পা রেখেও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল রিঙ্কুকে। ২০১৯ সালে বিসিসিআই-কে না জানিয়েই বিদেশি লিগে খেলেছিলেন। এই জন্য বিসিসিআইয়ের ৩ মাসের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছিলেন রিঙ্কু।
ছবি সংগৃহীত।
চলতি আইপিএলে রিঙ্কুকে ৫৫ লক্ষ টাকায় কিনেছে শাহরুখ খানের দল। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, রিঙ্কুর মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৬ কোটি টাকা। আইপিএলের হাত ধরেই কোটিপতি হন রিঙ্কু।
ছবি সংগৃহীত।
শোনা যায়, রিঙ্কু কোটিপতি হলেও তাঁর বাবা খানচন্দ্র সিংহ এখনও নাকি বাড়ি বাড়ি সিলিন্ডার পৌঁছে দেন। রিঙ্কু এক বার চোট পেয়েছিলেন। সেই সময় নাকি তাঁর বাবা খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। রিঙ্কুর বাবা আশঙ্কা করেছিলেন যে, ছেলে বোধহয় আর খেলতে পারবে না। ফলে পরিবারে আর্থিক সমস্যার বহর বাড়বে। এ কথা নিজেই জানিয়েছিলেন রিঙ্কু।
ছবি সংগৃহীত।
এখনও সে ভাবে কোনও বিজ্ঞাপনে মুখ দেখাননি রিঙ্কু। তবে রবিবারের ম্যাচের পর এবং আগামী দিনে তাঁর দুরন্ত পারফরম্যান্সের দৌলতে বিজ্ঞাপন দুনিয়াতেও শিকে ছিঁড়তে পারে এই তরুণ ব্যাটারের।
ছবি সংগৃহীত।
আলিগড়ে পরিবারের সঙ্গেই থাকেন রিঙ্কু। গাড়ির প্রতি তাঁর কোনও শখ রয়েছে কি না, তা এখনও জানা যায়নি।
ছবি সংগৃহীত।
ছোটবেলায় অনেকেই স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু ক’জন আর সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন! রিঙ্কু সেই স্বপ্ন দেখেছিলেন। স্বপ্নপূরণও করেছেন। কঠিন লড়াইয়ের কাছে হার মানেননি। আর সেই জন্যই ম্যাচের শেষপাতে নায়কের মতোই জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন।
ছবি সংগৃহীত।