উপার্জন এবং সাফল্যের নিরিখে ভারতের শিল্পপতিদের মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছেন অম্বানীরা। ফোবর্সের বিচারে এশিয়ার ধনীতম ও বিশ্বের সেরা ১০ ধনী ব্যক্তি হিসাবে নাম রয়েছে অম্বানী পরিবারের জ্যেষ্ঠপুত্র মুকেশ অম্বানীর।
মুকেশের বাবা ধীরুভাই অম্বানীর হাত ধরেই যাত্রা শুরু হয় রিলায়্যান্সের। তার পর একে একে রিফাইনিং, অয়েল অ্যান্ড গ্যাস, পেট্রোকেমিক্যাল, টেলিকম, রিটেল এবং মিডিয়ায় ব্যবসায় আরও বৃহত্তর ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রিলায়্যান্স গোষ্ঠী।
২০০২ সালে প্রয়াত হন ধীরুভাই। চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসাবে দায়িত্বভার মুকেশের হাতে আসার পর থেকেই আরও ফুলেফেঁপে ওঠে রিলায়্যান্সের ব্যবসা। চড়চড় করে বাড়তে থাকে মুকেশের ব্যক্তিগত সম্পত্তিও।
চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসাবে মুকেশ দায়িত্ব সামলালেও ধীরুভাই মারা যাওয়ার পর শক্ত হাতে পরিবারের সমস্ত ঝড়ঝাপটা ও দায়িত্ব সামলেছেন ধীরুভাইয়ের স্ত্রী কোকিলাবেন অম্বানী। তিনি নিজেও রিলায়্যান্সের অংশীদার।
মুকেশ এবং অনিল অম্বানীর মা কোকিলাবেন। তাঁর হাতেই রয়েছে রিলায়্যান্সের বেশির ভাগ সম্পদ। এই সংস্থার আসল মালিক তিনিই। রিলায়্যান্সের সবচেয়ে বেশি শেয়ার রয়েছে তাঁর হাতে।
কোকিলাবেন অম্বানীর কাছে রয়েছে রিলায়্যান্সের ১ কোটি ৫৭ হাজার শেয়ার। অর্থাৎ, এই সংস্থার মোট ০.২৪ শতাংশ শেয়ার আছে কোকিলাবেনের। মোট ১৮ হাজার কোটি টাকার শেয়ার আছে তাঁর নামে। মুকেশের তিন সন্তান আকাশ অম্বানী, ইশা অম্বানী এবং অনন্ত অম্বানীর কাছে এই সংস্থার ৮০,৫২,০২১ শেয়ার আছে। সংস্থার মোট ০.১২ শতাংশ শেয়ার আছে এই তিন জনের কাছে।
বয়স ৯০ পেরোলেও অম্বানী পরিবারের কর্তৃত্বের রাশ এখনও রয়েছে কোকিলাবেনের হাতেই। তাঁর অনুমোদন ছাড়া অম্বানী পরিবারের বহু সিদ্ধান্তই নেওয়া হয় না। পুত্র ও পুত্রবধূ, নাতি-নাতনিরাও শ্রদ্ধা করেন তাঁদের পরিবারের সবচেয়ে বর্ষীয়ান সদস্যকে।
পারিবারিক কোনও সমস্যা এলেও সেখানে হস্তক্ষেপ করেন কোকিলাবেন। ধীরুভাইয়ের মৃত্যুর পর রিলায়্যান্সের মালিকানার দখল কার হাতে উঠবে সেই নিয়ে জটিলতা দেখা দেয় দুই ভাই মুকেশ ও অনিলের মধ্যে। সেই বিরোধের মধ্যস্থতা করতে আসরে নামতে বাধ্য হন কোকিলাবেন।
দুই ভাইয়ের মধ্যে পারিবারিক ব্যবসা ভাগ করেন। অম্বানী পরিবারে ফাটল ধরে। তা সত্ত্বেও অম্বানী পরিবারকে যিনি বেঁধে রেখেছেন, সেই কোকিলাবেন থাকেন কার কাছে? কেমন সম্পর্ক দুই ছেলে ও তাঁদের পরিবারের সঙ্গে।
কোকিলাবেনের জন্ম ১৯৩৪ সালে গুজরাতের জামনগরে। ধীরুভাই ও কোকিলাবেনের চার সন্তান, মুকেশ, অনিল, নীনা এবং দীপ্তি।
চার সন্তানের মা নবতিপর কোকিলাবেন থাকেন তাঁর বড় ছেলে মুকেশ অম্বানী ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে মুম্বইয়ের বিলাসবহুল বাসভবন অ্যান্টিলিয়ায়। বিশ্বের বিলাসবহুল বাড়িগুলির মধ্যে এটা অন্যতম। মুম্বইয়ের ২৭ তলার এই বাড়িতেই বাস করেন কোকিলাবেন-সহ গোটা পরিবার। ১৫ হাজার কোটি টাকার বাড়ির সবচেয়ে দামি অংশ এই ২৭ তলাই।
২৭ তলায় রাজকীয় সুইটে থাকেন মুকেশ-নীতাও। এই বাড়িতেই তাঁর সঙ্গে থাকেন আকাশ-শ্লোকা, তাঁদের দুই সন্তান। এক বছর হল মুকেশ-নীতা তাঁদের ছোট ছেলে অনন্তের বিয়ে দিয়ে বৌমা রাধিকাকে ঘরে এনেছেন। রাধিকা-অনন্তও সেখানেই থাকেন।
রাধিকা-অনন্তের বিয়ের সময় প্রকাশ্যে এসেছিলেন কোকিলাবেন। তখনই পাপারাৎজ়ির ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল তাঁর ছবি। নাতির বিয়ে বলে কথা! সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন কোকিলাবেন। লাল-সাদা জর্জেট শাড়ির সঙ্গে মানানসই ব্লাউজ় ছিল তাঁর পরনে। শাড়ির পাড় জুড়ে ছিল মণিমুক্তো। গলায় হিরের হার, কানে হিরের দুল। সঙ্গে দু’হাতে মানানসই হিরে বসানো চুড়ি।
কোকিলবেনের বিলাসবহুল গাড়ির প্রতিও দূর্বলতা রয়েছে। দেশি, বিদেশি নানা গাড়ির ব্যক্তিগত সংগ্রহ রয়েছে মুকেশের মায়ের। তার প্রিয় গাড়ির মধ্যে রয়েছে একটি মার্সিডিজ় বেঞ্জ। তাঁর স্বামী ধীরুভাইয়ের পছন্দ ছিল ক্যাডিলাক লিমুজ়িন।
কোকিলাবেন শ্রীনাথজির একনিষ্ঠ ভক্ত। আধ্যাত্মিক টানে তিনি তাই বার বার ছুটে যান জামনগরের দ্বারকাধীশ মন্দির এবং রাজস্থানের নাথদ্বারা মন্দিরে। ব্যবসা ও পরিবারের দায়িত্বের পাশাপাশি ভক্ত হিসাবে নিজের ভূমিকা বরাবর পালন করে এসেছেন তিনি।
মুকেশপত্নী নীতা ও অনিলপত্নী টিনা অম্বানীর সঙ্গেও মধুর সম্পর্ক কোকিলাবেনের। টিনা প্রায়ই সমাজমাধ্যমে কোকিলাবেনের সঙ্গে ছবি পোস্ট করেন। পারিবারিক অনুষ্ঠানে নীতাকে প্রায়শই তাঁর শাশুড়ির সঙ্গে থাকতে দেখা যায়। পারিবারিক ব্যবসা নিয়ে যত বিরোধ থাক, দুই ভাই ও তাঁদের পরিবারের মধ্যে মেলবন্ধন বজায় রাখার প্রধান কারিগরই হয়েই রয়েছেন কোকিলাবেন।
সব ছবি: সংগৃহীত।