
সারা ভারতে শিরা-উপশিরার মতো ছড়িয়ে রয়েছে রেলপথ। ব্রিটিশ শাসকের হাত ধরে অবিভক্ত ভারতে প্রথম স্থাপিত হয় রেলপথ। পরবর্তী কালে ধীরে ধীরে প্রত্যেক ভারতীয়ের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে ভারতীয় রেল। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, অসম থেকে গুজরাত জুড়ে গিয়েছে ভারতীয় রেলের সৌজন্যে।

স্বাধীনতার পর থেকে ভারতের রেলের মুকুটে জুড়েছে নানা পালক। এসেছে নতুন নতুন ট্রেন। এখন আর শুধুই রাজধানী বা শতাব্দী এক্সপ্রেস নয়, এমন অনেক ট্রেন ভারতে চলাচল করছে বা অদূর ভবিষ্যতে চালু হতে চলেছে যাদের গতিবেগ দুর্দান্ত। বন্দে ভারত তো আছেই, পাশাপাশি বুলেট ট্রেনের জন্যও প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে।

ভারতের সঙ্গে একই সময়ে স্বাধীন হয়েছিল পাকিস্তানও। স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই নয়াদিল্লির সঙ্গে নানা বিষয়ে প্রতিযোগিতায় নামার চেষ্টা করেছে ইসলামাবাদ। তবে সফল হয়নি কোনও ক্ষেত্রেই।

ভারতের মতো পাকিস্তানেরও বিভিন্ন প্রদেশে সংযোগ রক্ষা করার জন্য রয়েছে একাধিক রেলপথ। তাতে চলে বিভিন্ন ট্রেন। পাকিস্তানের দ্রুততম যাত্রিবাহী ট্রেনের কথা উঠলে একটি ট্রেনের কথাই উল্লেখ করা যেতে পারে। সেটি হল কারাকোরাম এক্সপ্রেস। পাকিস্তানের দ্রুততম ট্রেন এটি।

ভারতের দ্রুততম ট্রেন হল বন্দে ভারত। এটি একটি মাঝারি উচ্চ গতির ট্রেন যার সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১৬০ কিমি। ট্রেনটি কেন্দ্রীয় সরকারের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের অংশ এটি। ২০১৯ সালে বাণিজ্যিক ভাবে পরিষেবা চালু হয় বন্দে ভারতের। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক রুটে যাত্রীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বন্দে ভারত।

এ ছাড়াও ভারতীয় রেলের হাতে রয়েছে রাজধানী, শতাব্দী, তেজসের মতো উচ্চ গতিবেগসম্পন্ন ট্রেনও। বুলেট ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে ভারত। প্রাথমিক ভাবে কথা ছিল, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালে চালু হবে দেশের প্রথম বুলেট ট্রেন। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি।

রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব পরে জানিয়েছিলেন, ২০২৬ সালের অগস্ট থেকে বুলেট ট্রেন দৌড় শুরু করবে গুজরাতের সুরাত থেকে বিলিমোরা পর্যন্ত। এই পথটি ৫০ কিলোমিটার লম্বা। ট্রেনের গতি হবে প্রতি ঘণ্টায় ৩২০ কিলোমিটার

ভারত যখন বুলেট ট্রেন চালু করার স্বপ্ন সফল করতে উঠেপড়ে লেগেছে, তখন পাকিস্তানের হাতে রয়েছে একটি মাত্র উচ্চ গতির ট্রেন। সেই ট্রেনের গতিবেগ জানলে চোখ কপালে উঠবে আপনারও। পাকিস্তানের দুই গুরুত্বপূর্ণ শহর করাচি ও লাহোরের মধ্যে প্রতি দিন চলাচল করা এই ট্রেনটির সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১০৫ কিলোমিটার। বন্দে ভারতের সর্বোচ্চ গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ১৬০ কিমি।

করাচি ও লাহোরের মধ্যের ১২৪১ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পাকিস্তানের কারাকোরাম এক্সপ্রেস সময় নেয় প্রায় ১৮ ঘন্টা। করাচি-পেশোয়ার রেললাইন, খানেওয়াল-ওয়াজিরাবাদ শাখা লাইন এবং শাহদারা বাগ-সাংলা হিল শাখা লাইন দিয়ে চলাচল করে কারাকোরাম এক্সপ্রেস।

উত্তর পাকিস্তানের বিখ্যাত কারাকোরাম পর্বতমালার নামানুসারে কারাকোরাম এক্সপ্রেস ‘পাকিস্তানের দ্রুততম ট্রেন’ হিসাবে পরিচিত। কারাকোরাম এক্সপ্রেস ১৪ আগস্ট ২০০২ সালে উদ্বোধন করা হয়। সে সময় পাকিস্তানের গদিতে আসীন ছিলেন পারভেজ মুশারফ। ১৩টি সাধারণ বগি, ৪টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরা, ১টি পাওয়ার ভ্যান এবং ১টি মালপত্র নিয়ে যাওয়ার কামরা রয়েছে এতে।

পাকিস্তানের দ্রুততম ট্রেন হওয়া সত্ত্বেও, কারাকোরাম এক্সপ্রেসের সর্বোচ্চ গতি ভারতের বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের তুলনায় অনেকটাই কম। এমনকি এর গতিবেগ রাজধানী এক্সপ্রেসের চেয়েও কম। সর্বোচ্চ ১৪০ কিমি প্রতি ঘণ্টায় ছুটতে পারে রাজধানী এক্সপ্রেস।

দুই দেশের মধ্যে রেলের পরিকাঠামো এবং প্রযুক্তির মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়ে গিয়েছে। ভারত যেখানে উচ্চ গতির ট্রেন তৈরি করেছে, পাকিস্তানের রেল এখনও সেই ঐতিহ্যবাহী লোকোমোটিভের উপর নির্ভর করে চলছে। বন্দে ভারত এবং কারাকোরাম এক্সপ্রেসের মধ্যে তুলনা করলে দেখা যায়, উচ্চ গতির রেলের উন্নয়নে ভারত কতটা এগিয়ে গিয়েছে। অন্য দিকে রেল ব্যবস্থার আধুনিকীকরণে পাকিস্তানের উন্নতি তেমন হয়নি।

পকিস্তানের অন্য বিখ্যাত ট্রেনগুলি হল, সুপার এক্সপ্রেস, তেজগম, খাইবার মেল। ১৯৭০ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে সুপার এক্সপ্রেস। করাচি থেকে লাহোরের মধ্যে ট্রেনটি চলাচল করত। ২০১২ সালে ট্রেনটিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। তেজগম এক্সপ্রেসটি চলে লাহোর থেকে মুলতানের মধ্যে। পাকিস্তান রেলের অন্যতম বিখ্যাত এক্সপ্রেস ট্রেন এটি। খাইবার মেল চলাচল করে করাচি থেকে পেশোয়ার পর্যন্ত।
সব ছবি: সংগৃহীত।