
২৪ ঘণ্টার বেশির ভাগ সময়টাই কাটে গরাদের আড়ালে। আহার, নিদ্রা, কাজকর্ম সবই চলে সংশোধনাগারের কড়া নিয়মে, নজরবন্দি হয়ে। তারই মাঝে বন্দিদের জন্য সুখবর এনে দিলেন ইটালির কারা কর্তৃপক্ষ। জেলের চৌহদ্দির মধ্যেই সঙ্গীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর ছাড়পত্র মিলল বন্দিদের। আদালতের নির্দেশ এসেছে এই বিষয় নিয়ে।

সম্প্রতি বলিউডের জনপ্রিয় একটি ওয়েব সিরিজ়ে দেখানো হয়েছিল মহিলা বন্দিদের দাম্পত্য সমস্যার বিষয়ে। জেলবন্দি তরুণীর ‘ফুলশয্যা’র বন্দোবস্ত করতে কালঘাম ছুটেছিল আইনজীবীদের। প্রচুর ফন্দি ও ছলেবলে কৌশলে শেষমেশ মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য তাঁদের ‘ফুলশয্যা’ করাতে পেরেছিলেন আইনজীবীরা।

সেই সমস্যা যেন শুনতে পেয়েছিল ইটালির আদালত। সে দেশের একটি সংশোধনাগারের বন্দিদের অন্তরঙ্গ সময় (যৌন মিলন) কাটানোর কক্ষের অনুমোদন মিলল আইনি ভাবে। প্রথম বারের জন্য জেলের ভিতরেই স্ত্রী কিংবা দীর্ঘ দিনের সঙ্গীর সঙ্গে শারীরিক মিলনের সুযোগ পাবেন বন্দিরা। শুক্রবার এমনই এক ‘সঙ্গম কক্ষের’ উদ্বোধন করা হল ইটালিতে। সে দেশের জেলবন্দিদের দাম্পত্য অধিকারের ক্ষেত্রে যুক্ত হল নতুন এক অধ্যায়।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সে দেশের সাংবিধানিক আদালতের একটি রায় অনুসরণ করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই রায়ে বলা হয়েছে, স্ত্রী বা দীর্ঘমেয়াদি সঙ্গীদের সঙ্গে জেলের মধ্যেই যৌন মিলনের অধিকার দেওয়া হচ্ছে বন্দিদের। কোনও রক্ষীর উপস্থিতি ছাড়াই দু’ঘণ্টা একান্তে সময় কাটাতে পারবেন তাঁরা।

আদালতের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, অনুমতিপ্রাপ্ত বন্দিরা সেই ঘরে নির্ধারিত সময়ে তাঁর স্ত্রী বা সঙ্গীর সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন। জেলেই একটি পৃথক ঘরের বন্দোবস্ত করতে হবে। তাতে খাট-বিছানা-বালিশ রাখা থাকবে। থাকবে সংলগ্ন শৌচালয়ও। নিরাপত্তার কারণে কক্ষের দরজা খোলা রাখতে হবে যাতে কারারক্ষীরা প্রয়োজনে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।

এই আইনের বলে গত শুক্রবার ইটালির আমব্রিয়া অঞ্চলের টেরনি নামের একটি জেলে বিশেষ ভাবে তৈরি কক্ষে এক বন্দিকে তাঁর সঙ্গীর সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেওয়া হয় বলে সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে।

বন্দিদের অধিকার বিষয়ক এক আধিকারিক জিউসেপ্পে ক্যাফোরিও সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, প্রথম বারের জন্য এক বন্দির সঙ্গে তাঁর সঙ্গীর সাক্ষাৎ সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বন্দিদের গোপনীয়তা বজায় রেখে পরীক্ষামূলক এই সাক্ষাৎটি ভাল ভাবে উতরে যাওয়ায় ভবিষ্যতে আরও কিছু বন্দির জন্য অনুমতি দেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত এই রায়ে আদালত বলেছে, বন্দিদের স্বামী, স্ত্রী বা দীর্ঘমেয়াদি সঙ্গীর সঙ্গে একান্তে সাক্ষাতের অধিকার থাকা উচিত। সেই সাক্ষাৎপর্বে কড়া নজরদারির প্রয়োজন নেই। তবে নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে দরজা বন্ধের অনুমতি দেয়নি আদালত।

জেলবন্দিদের দাম্পত্য অধিকার সুনিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এগিয়ে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ। ইউরোপের বেশির ভাগ দেশে এই অনুমতি ইতিমধ্যেই রয়েছে। এই তালিকায় ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন এবং অন্যান্য দেশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইটালিও সেই তালিকায় নিজের নাম জুড়ল।

এশীয় দেশ হিসাবে ভারতও পিছিয়ে নেই এ ক্ষেত্রে। সার্বিক ভাবে কোনও আইন না থাকলেও রাজ্যভেদে স্ত্রীর সঙ্গে বন্দিদের মিলনের অনুমতি দিয়ে থাকে কয়েকটি সংশোধনাগার।

২০২২ সালে পঞ্জাবে প্রথম চালু হয়েছিল সঙ্গীর (স্বামী বা স্ত্রী) সঙ্গে সময় কাটানোর নিয়ম। জেলে এই নিয়ম চালু করেছিল পঞ্জাবের কারা বিভাগ। গোবিন্দওয়াল সাহিব সেন্ট্রাল জেল, নাভার নতুন জেলা জেল, ভাটিন্ডার মহিলা জেলে এই ব্যবস্থা চালু করা হয়।

যদিও সব বন্দি এই সুযোগ পান না। ভয়ঙ্কর অপরাধী, গ্যাংস্টার, জীবনের ঝুঁকি রয়েছে এমন বন্দি, যৌন হেনস্থায় জড়িতদের এই সুযোগ দেওয়া হয় না।

সঙ্গীর সঙ্গে সময় কাটাতে চাইলে জেলে থাকাকালীন সেই বন্দির আচরণ ভাল হতে হবে। তবেই সংশোধনাগারের নির্দিষ্ট একটি ঘরে দু’ঘণ্টার জন্য সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দেয় কারা বিভাগ। ওই ঘরের সঙ্গে থাকে শৌচালয়ও। তিন মাসে এক বারই মেলে সেই সুযোগ।

ইউরোপের যে সব দেশের কারাগারে ধারণক্ষমতার চেয়ে বন্দির সংখ্যা বেশি, সে সব দেশের মধ্যে অন্যতম ইটালি। দেশটির কারাগারে সম্প্রতি আত্মহত্যার হারও বেড়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ইটালির সংশোধনাগারে বর্তমানে ৬২ হাজারের বেশি বন্দি রয়েছেন।
সব ছবি: সংগৃহীত।