নায়কের সঙ্গে পার্টিতে আলাপ। দু’মাস প্রেমপর্ব চলার পরেই বিয়ে। তবে বিয়ের পর মধুচন্দ্রিমায় নিজেকে হোটেলের ঘরে বন্দি করে ফেলেছিলেন নায়িকা। বহু ক্ষণ দরজায় ধাক্কা দেওয়ার পরেও নায়ককে ঘরে ঢুকতে দেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত নববধূকে হোটেলে ফেলে রেখে বিয়ে ভেঙে চলে গিয়েছিলেন নায়ক। হলিউডের যে তারকা-দম্পতিদের বিয়ে সবচেয়ে কম সময় টিকেছে সেই তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন নির্বাক চলচ্চিত্রের এই দুই তারকা। মাত্র ২০ মিনিট টিকেছিল তাঁদের বিয়ে।
অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়তে চান বলে ১৯১৯ সালে নিউ জার্সি থেকে ক্যালিফর্নিয়া যান জিন অ্যাকার। ক্যালিফর্নিয়ায় যাওয়ার পর অ্যালা নাজ়িমোভা নামে এক অভিনেত্রীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন জিন। পাশাপাশি গ্রেস ডারমন্ড নামে এক নায়িকার সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল জিনের।
১৯১৯ সালে এক তারকাখচিত পার্টিতে জিনের সঙ্গে আলাপ হয় রুডল্ফ ভ্যালেন্টিনো নামে এক তরুণের। রুডল্ফ তখন নির্বাক চলচ্চিত্রজগতের উঠতি অভিনেতা। রুডল্ফের সঙ্গেও প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন জিন।
দু’মাস সম্পর্কে থাকার পর রুডল্ফকে বিয়ে করেন জিন। কিন্তু সেই বিয়ে ২০ মিনিটও টেকেনি। মধুচন্দ্রিমা কাটাতে দুই তারকা একটি বিলাসবহুল হোটেলে যান। কিন্তু সেই হোটেলে গিয়ে নিজেকে ঘরবন্দি করে ফেলেন নায়িকা। রুডল্ফের শত অনুরোধের পরেও ঘরের দরজা খোলেননি জিন।
বার বার দরজায় ধাক্কা দেওয়ার পরেও যখন জিনের সাড়া পাওয়া যায়নি, তখন দরজার বাইরে দাঁড়িয়েই বিয়ে ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন রুডল্ফ। হোটেলে জিনকে একা রেখে চলে যান তিনি। মাত্র ২০ মিনিট টিকেছিল তাঁদের বিয়ে। সবচেয়ে কম সময় বিয়ে টিকে থাকার জন্য হলিউডের তারকা-দম্পতি হিসাবে জিন এবং রুডল্ফের নাম ‘গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এর খাতায়ও উঠেছে।
গুঞ্জন শোনা যায়, স্ত্রী না পুরুষ, আদতে কার প্রতি জিনের আকর্ষণ রয়েছে তা বুঝতে পারেননি নায়িকা। আবেগে ভেসে গিয়ে রুডল্ফকে বিয়ে করে ফেলেন তিনি। আবার কেউ বলেন, জিন নিজের লিঙ্গপরিচয় গোপন রাখার জন্যই নাকি এই বিয়ে করেন।
অবশ্য রুডল্ফের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ঘটনার এক বছর পর মুখ খোলেন জিন। মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে রুডল্ফ নাকি স্বীকার করেছিলেন যে, তিনি যৌনবাহিত রোগে আক্রান্ত। রুডল্ফের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে আবদ্ধ হতে চাননি বলে জিন মধুচন্দ্রিমায় নিজেকে ঘরবন্দি করেছিলেন। এমনটাই দাবি নায়িকার।
শোনা যায়, রুডল্ফের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর জিন নাকি গ্রেসের কাছে ফিরে যান। গ্রেসের পাশাপাশি অ্যালার সঙ্গেও সম্পর্ক বজায় রাখেন জিন। রুডল্ফ এবং জিনের ছাদ আলাদা থাকলেও ১৯২১ সালে আইনি বিচ্ছেদ হয় তাঁদের।
ক্যালিফর্নিয়ার আইন অনুযায়ী, বিবাহবিচ্ছেদের এক বছরের মাথায় অন্য কাউকে বিয়ে করা যায় না। বিয়ে করলেই হত শাস্তি। কিন্তু বিচ্ছেদের আবেদন করার পর আর তর সইল না রুডল্ফের। এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই মেক্সিকো গিয়ে নাতাশা রামবোভা নামের এক তরুণীকে বিয়ে করেন অভিনেতা।
দ্বিতীয় বিয়ের পর আবার ক্যালিফর্নিয়া ফিরে যান রুডল্ফ। কিন্তু আইনের প্যাঁচে জড়িয়ে পড়েন তিনি। যে হেতু এক বছর পার হতে না হতেই তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করে ফেলেছেন, সে হেতু জিন আইনত তখনও রুডল্ফের বিবাহিত স্ত্রী হিসাবে পরিচিতি পান। আগের স্ত্রীকে বিচ্ছেদ না দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য রুডল্ফের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন জিন। জিনকে ক্ষতিপূরণ দেন রুডল্ফ।
‘দ্য শেখ’, ‘দ্য ফোর হর্সমেন অফ দ্য অ্যাপোক্যালিপ্স’ নামের ছবিতে অভিনয় করে কম সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন রুডল্ফ। সেই জনপ্রিয়তাকে সিঁড়ি বানিয়ে নিজের কেরিয়ার তৈরি করতে চান জিন। তাই চলচ্চিত্রজগতে রুডল্ফের প্রাক্তন স্ত্রী হিসাবে নিজের পরিচিতি বজায় রাখেন জিন।
রুডল্ফ এবং জিনের মধ্যে কোনও সম্পর্কই ছিল না। এমনকি, জিনের প্রতি ক্ষুব্ধও ছিলেন রুডল্ফ। মাত্র ৩১ বছর বয়সে ১৯২৬ সালে রুডল্ফের মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর পর রুডল্ফের উদ্দেশে একটি গান লেখেন জিন।
হলিপাড়ার জনশ্রুতি, রুডল্ফের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর একাধিক সম্পর্কে জড়ান জিন। কিন্তু কোনও সম্পর্কই পূর্ণতা পায়নি। ১৯২৩ সালে স্পেনের এক তরুণের সঙ্গে বাগ্দান পর্ব সারেন জিন। কিন্তু তা বিয়ে পর্যন্ত পৌঁছয়নি।
বিয়ে ভাঙার পর মিশরের এক জাদুকরের সঙ্গেও সম্পর্কে জড়ান জিন। কিন্তু সেই সম্পর্ক কোনও পরিণতি পায়নি। কানাঘুষো শোনা যায়, উইলিয়াম ডেলাহান্তির নামে এক বিবাহিত রাজনীতিবিদের সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল জিনের।
১৯২৯ সালে শেয়ারবাজারে নিজের সমস্ত সঞ্চয় বিনিয়োগ করেন জিন। কিন্তু সেখানে সর্বস্ব হারান তিনি। তখনই উইলিয়ামের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন জিন।
জিনের দাবি, উইলিয়াম নাকি জিনকে অভিনয় থেকে সরে আসার অনুরোধ করেন। জিন যদি অভিনয় ছেড়ে দেন তা হলে প্রতি বছর জিনকে ১৮,৪০০ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৫ লক্ষ ৯২ হাজার ১২৯ টাকা) দেবেন বলে কথা দেন উইলিয়াম। যদিও উইলিয়াম তা অস্বীকার করেন। তবে জিনের জন্য তিনি যে মোটা টাকা খরচ করতেন তা স্বীকার করেন রাজনীতিবিদ।
পরে ছবিনির্মাতা হ্যারি রুবির প্রথম স্ত্রী ক্লোয়ি কার্টারের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন জিন। ১৯৭৮ সালের অগস্ট মাসে ৮৫ বছর বয়সে মারা যান জিন।
সব ছবি: সংগৃহীত।