Oxfam Report

লুটের টাকায় চার বার মুড়ে ফেলা যেত লন্ডন শহরকে! ভারত থেকে প্রায় ৬৫ লক্ষ কোটি ডলার লুট করে ব্রিটেন

পরাধীন ভারত থেকে ব্রিটিশ শাসকদের লুট করা সম্পত্তির পরিমাণ কত? সাধারণতন্ত্র দিবসের (পড়ুন ২৬ জানুয়ারি) মুখে সেই তথ্য প্রকাশ্যে আনল ‘অক্সফ্যাম ইন্টারন্যাশনাল’।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:৫৮
০১ ২০
UK extracted 64.82 trillion dollars from India enough money to carpet London in notes of 50 British pounds almost four times

পরাধীন ভারত থেকে কত টাকা লুট করেন ব্রিটিশ শাসকেরা? চলতি বছরের (পড়ুন ২০২৫) সাধারণতন্ত্র দিবসের (২৬ জানুয়ারি) মুখে সেই তথ্য প্রকাশ্যে আনল ‘অক্সফ্যাম ইন্টারন্যাশনাল’। তাঁদের দাবি, এ দেশ থেকে নিয়ে যাওয়া সম্পদের একটা বড় অংশ গিয়েছিল মাত্র ১০ শতাংশ ধনীর পকেটে। শুধু তা-ই নয়, লুট করা টাকায় লন্ডন শহরকে ঢেকে দেওয়া যেত বলেও রিপোর্টে স্পষ্ট করেছেন তাঁরা।

০২ ২০
UK extracted 64.82 trillion dollars from India enough money to carpet London in notes of 50 British pounds almost four times

প্রতি বছর ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম’-এর বার্ষিক সভার প্রথম দিনে আন্তর্জাতিক বৈষম্য সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে ‘অক্সফ্যাম’। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সেই প্রতিবেদনে ঔপনিবেশিক যুগে ভারত থেকে ‘সম্পদের বহির্গমন’ (ড্রেন অফ ওয়েলথ্‌) সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরেছে ওই সংস্থা।

০৩ ২০
UK extracted 64.82 trillion dollars from India enough money to carpet London in notes of 50 British pounds almost four times

‘অক্সফ্যাম’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৭৬৫ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে ব্রিটিশ শাসকেরা ভারত থেকে যে পরিমাণ সম্পদ নিজেদের দেশে নিয়ে যান, তার পরিমাণ ছিল ৬৪.৮২ লক্ষ কোটি ডলার। লুট করা এই অর্থের মধ্যে ৩৩.৮০ লক্ষ কোটি ডলারে নিজেদের সিন্দুক ভরান সে দেশের ১০ শতাংশ ধনী।

Advertisement
০৪ ২০
UK extracted 64.82 trillion dollars from India enough money to carpet London in notes of 50 British pounds almost four times

এই ধনীদের হাতে থাকা ভারতীয় সম্পদকে ৫০ ব্রিটিশ পাউন্ডে বদলে নিলে, তা দিয়ে লন্ডন শহরকে অন্তত চার বার মুড়ে দেওয়া যাবে। রিপোর্টে এমনটাই দাবি করেছে ‘অক্সফ্যাম’। তাদের ‘গ্রহণকারী, নির্মাতা নয়’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ্যে আসতেই দুনিয়া জুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছে। সেখানে বেশ কিছু গবেষণাপত্রের উদ্ধৃতি দেওয়া রয়েছে। ‘অক্সফ্যাম’-এ দাবি, আধুনিক বহুজাতিক কর্পোরেশন ঔপনিবেশিকতা থেকেই এসেছে।

০৫ ২০
UK extracted 64.82 trillion dollars from India enough money to carpet London in notes of 50 British pounds almost four times

এ বারের রিপোর্টে ‘প্যাথলিস অফ প্লান্ডার’ এবং ‘গ্লোবাল সাউথ’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছে এই আন্তর্জাতিক সংগঠন। তাদের কথায়, ‘‘ঐতিহাসিক উপনিবেশবাদের সময় থেকে যে বৈষম্য এবং লুণ্ঠন শুরু হয়েছে, উত্তরাধিকার সূত্রে সেই ধারা বহন করে চলেছে আধুনিক বিশ্ব। ফলে আর্থিক দিক থেকে দুনিয়ায় গভীর ভাবে অসমাঞ্জস্য তৈরি হয়েছে।’’

Advertisement
০৬ ২০
UK extracted 64.82 trillion dollars from India enough money to carpet London in notes of 50 British pounds almost four times

বর্ণবাদের উপর ভিত্তি করে বিশ্ব যে বিভক্ত, তা-ও রিপোর্টে উল্লেখ করেছে ‘অক্সফ্যাম’। সেখানে বলা হয়েছে, ‘‘গ্লোবাল সাউথ থেকে ক্রমাগত সম্পদ আহরণ করে চলেছে এক শ্রেণির রাষ্ট্র। এতে পৃথিবীর উত্তর অংশে বসবাসকারী ধনীদেরই সুবিধা হয়েছে।’’

০৭ ২০
UK extracted 64.82 trillion dollars from India enough money to carpet London in notes of 50 British pounds almost four times

‘অক্সফ্যাম’-এর গবেষকদের দাবি, বর্তমান ব্রিটেনের ধনী ব্যক্তিরা তাঁদের পারিবারিক সম্পদের উৎস খুঁজলে দাসত্ব এবং উপনিবেশবাদের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদকেই পাবেন। পরবর্তী কালে অবশ্য দাস প্রথা বিলুপ্ত হয়ে যায়। ওই সময় দাসদের বিপুল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছিল। সেই টাকায় বড়লোক হওয়া ব্রিটিশবাসীর সংখ্যাও কম নয়।

Advertisement
০৮ ২০
UK extracted 64.82 trillion dollars from India enough money to carpet London in notes of 50 British pounds almost four times

পাশাপাশি, আধুনিক বহুজাতিক কর্পোরেশনের প্রাণপুরুষ হিসাবে ‘ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’র কথা উল্লেখ করেছে এই আন্তর্জাতিক সংগঠন। ভারতে ব্যবসা করতে এসে ধীরে ধীরে শাসকের স্থান নিয়ে ফেলেছিল ওই কোম্পানি। এ দেশের আইন ব্যবস্থাও ছিল তাদেরই হাতে। ঔপনিবেশিক অপরাধগুলির জন্যও পুরোপুরি দায়ী ছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।

০৯ ২০
UK extracted 64.82 trillion dollars from India enough money to carpet London in notes of 50 British pounds almost four times

২১ শতকের বিশ্বে সেই অবস্থার যে আমূল বদল হয়েছে, তা মানতে নারাজ ‘অক্সফ্যাম’। সংস্থাটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘‘আধুনিক যুগে বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলি একচেটিয়া ভাবে বাণিজ্যিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে চলেছে। গ্লোবাল সাউথের শ্রমিকদের, বিশেষত মহিলা শ্রমিকদের উত্তরের ধনী শেয়ার মালিকেরা শোষণ করেই চলেছেন।’’

১০ ২০
UK extracted 64.82 trillion dollars from India enough money to carpet London in notes of 50 British pounds almost four times

আন্তর্জাতিক সংগঠনটি জানিয়েছে, গ্লোবাল সাউথের শ্রমিকদের মজুরি গ্লোবাল নর্থের তুলনায় ৮৭ থেকে ৯৫ শতাংশ কম। এ ছাড়া দক্ষিণের কর্মীরা খারাপ কাজের পরিবেশ এবং ন্যূনতম সামাজিক সুরক্ষা পেয়ে থাকেন। বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খল এবং রফতানির উপর নজর রাখলেও বিষয়টি নগ্ন ভাবে চোখে পড়বে। এখনও দক্ষিণ থেকেই বেশি পরিমাণে সম্পদ পাচার হয় উত্তর গোলার্ধে। আর এ ভাবেই আধুনিক ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার প্রতিনিধিত্ব করছে গ্লোবাল সাউথ।

১১ ২০
UK extracted 64.82 trillion dollars from India enough money to carpet London in notes of 50 British pounds almost four times

‘‘বিশ্বব্যাপী পণ্যের সরবরাহ শৃঙ্খলে বৃহৎ বহুজাতিক সংস্থাগুলিই আধিপত্য বিস্তার করে রয়েছে। সস্তা শ্রম এবং দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে অহরহ সম্পদ আহরণ করে আর্থিক দিক থেকে যথেষ্ট উপকৃত হচ্ছে তারা। অন্য দিকে দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলি আর্থিক দিক থেকে অনেকাংশেই ওই সংস্থাগুলির উপর নির্ভরশীল। ফলে দুনিয়া জুড়ে বজায় থাকছে শোষণ এবং বহুজাতিক সংস্থার নিয়ন্ত্রণ’’— রিপোর্টে উল্লেখ করেছে ‘অক্সফ্যাম’।

১২ ২০
UK extracted 64.82 trillion dollars from India enough money to carpet London in notes of 50 British pounds almost four times

আন্তর্জাতিক সংগঠনটির দাবি, ১৭৬৫ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে ভারত থেকে ক্রমাগত সম্পদ আহরণকালে সুবিধাভোগী একটি মধ্যবিত্ত শ্রেণিরও জন্ম দেন ব্রিটিশ শাসকেরা। লুট করা অর্থের ৩২ শতাংশ গিয়েছিল তাঁদের পকেটে। ১৭৫০ সালে বিশ্বব্যাপী শিল্প উৎপাদনের প্রায় ২৫ শতাংশই ছিল ভারতীয় উপমহাদেশে। আর তাই এখান থেকে সম্পদ লুট করতে সুবিধা হয়েছিল ইউরোপের দ্বীপরাষ্ট্রের শাসকদের।

১৩ ২০
UK extracted 64.82 trillion dollars from India enough money to carpet London in notes of 50 British pounds almost four times

১৯০০ সালে এই উপমহাদেশের শিল্প উৎপাদন হঠাৎ করেই দু’শতাংশে নেমে আসে। এই নাটকীয় হ্রাসের জন্য ব্রিটেনের এশীয় বস্ত্রের বিরুদ্ধে কঠোর সুরক্ষাবাদী নীতি বাস্তবায়নকে দায়ী করেছে ‘অক্সফ্যাম’। এর জেরে ভারতীয় শিল্প উৎপাদনের সম্ভাবনা এবং বিস্তার পদ্ধতিগত ভাবে দুর্বল হয়েছিল।

১৪ ২০
UK extracted 64.82 trillion dollars from India enough money to carpet London in notes of 50 British pounds almost four times

‘অক্সফ্যাম’ জানিয়েছে, শিল্পের ক্ষেত্রে ব্রিটেনের দমননীতির অবশ্যাম্ভাবী পরিণতি ছিল বিশ্বব্যাপী সংঘাত। ফলস্বরূপ, ১৯১৪ থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত চলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। এর জেরে ঔপনিবেশিক বাণিজ্যের ধরন অনেকটা বদলে যায়। পরবর্তী দশকগুলিতে ব্রিটেনের প্রবল অনিচ্ছা থাকলেও উপনিবেশগুলিতে শিল্পের বিস্তার এবং উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছিল।

১৫ ২০
UK extracted 64.82 trillion dollars from India enough money to carpet London in notes of 50 British pounds almost four times

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ভারতে ব্রিটিশ পণ্যের আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায়। ফলে আঞ্চলিক শিল্পে বাড়তে থাকে কর্মসংস্থান। সেই ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। ১৮ শতকে এ দেশে উপনিবেশবাদ বেসরকারি সংস্থার দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল, যাদের একচেটিয়া ব্যবসা এবং বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে মুনাফা অর্জনের সুবিধা দেওয়া হয়েছিল।

১৬ ২০
UK extracted 64.82 trillion dollars from India enough money to carpet London in notes of 50 British pounds almost four times

প্রসঙ্গত, ঔপনিবেশিক শাসনে বিভিন্ন সময়ে দানা বেঁধেছিল বিদ্রোহ। সেগুলি দমন করতে স্থানীয়দের নিয়েই বিরাট সেনাবাহিনী তৈরি করেন ব্রিটিশ শাসকেরা। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে ছিলে ২.৬ লক্ষ ভারতীয় সৈনিক।

১৭ ২০
UK extracted 64.82 trillion dollars from India enough money to carpet London in notes of 50 British pounds almost four times

বিভিন্ন তথ্য ঘেঁটে ‘অক্সফ্যাম’ জানিয়েছে, ১৮৩০ থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত উপনিবেশের বিভিন্ন বাগান এবং খনিতে কাজ করার জন্য ভারতীয়, চিনা, আফ্রিকান, জাপানি এবং মালয়েশীয়-সহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩৭ লক্ষ মানুষকে কাজে লাগানো করা হয়েছিল। মূলত চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক হিসাবে পরিকাঠামোগত উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাঁরা।

১৮ ২০
UK extracted 64.82 trillion dollars from India enough money to carpet London in notes of 50 British pounds almost four times

মজার বিষয় হল, ১৮৭৫ সালে ভারতে সর্বোচ্চ উপার্জনকারীরা ছিলেন সেনাবাহিনী এবং প্রশাসনের উঁচু পদে থাকা ইউরোপীয় কর্তারা। কিন্তু ১৯৪০ সালের মধ্যে তাঁরা ব্যবসায়ী, ব্যাঙ্ক মালিক এবং শিল্পপতি হয়ে ওঠেন।

১৯ ২০
UK extracted 64.82 trillion dollars from India enough money to carpet London in notes of 50 British pounds almost four times

ঔপনিবেশিকতার চলমান প্রভাবকে ‘বিষাক্ত গাছের ফল’ বলে উল্লেখ করেছে ‘অক্সফ্যাম’। পরাধীন ভারতে জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, ভাষা-সহ নানা ক্ষেত্রে নিরন্তর চলেছিল সুসংহত শোষণ। ফলে পরবর্তী সময়ে এ দেশের সমাজব্যবস্থায় নানা জটিলতা দেখা গিয়েছে বলে রিপোর্টে স্পষ্ট করেছে ওই আন্তর্জাতিক সংগঠন।

২০ ২০
UK extracted 64.82 trillion dollars from India enough money to carpet London in notes of 50 British pounds almost four times

প্রসঙ্গত, ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধের পর ভারতের শাসন ক্ষমতা ধীরে ধীরে চলে যায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে। ১৭৬৫ সালে কর আদায়ের ক্ষমতা পায় কোম্পানি। এর পরই শুরু হয় এ দেশ থেকে সম্পদের বহির্গমন। ‘পভার্টি অ্যান্ড আন ব্রিটিশ রুল ইন ইন্ডিয়া’ বইয়ে এর বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন দাদাভাই নওরোজি।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও গ্যালারি