সঙ্গীকে মনে ধরেনি। কিন্তু তার সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হতে হবে! মুখ ফুটে ইচ্ছা-অনিচ্ছার কথা জানাতে পারে না বলে মরে যাওয়ার ‘নাটক’ করে স্ত্রী ব্যাঙ। গবেষণা করে এমনটাই দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
ন্যাচরাল হিস্ট্রি মিউজ়িয়াম অফ বার্লিনের গবেষক ক্যারোলিন ডিটরিচ তাঁর গবেষণাপত্রে স্ত্রী ব্যাঙের কয়েক ধরনের ‘স্ট্রেস রেসপন্স’-এর ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন। সাধারণত সঙ্গমের সময় কিছু বিশেষ ধরনের আচরণ করে তারা।
ক্যারোলিনের দাবি, পুরুষ ব্যাঙেদের প্রতি স্ত্রী ব্যাঙেরা আদৌ আকর্ষিত হয় কি না তা পরীক্ষা করার জন্য এক বাক্সের ভিতর দু’টি স্ত্রী ব্যাঙ এবং একটি পুরুষ ব্যাঙ রেখে দেওয়া হয়।
দুই স্ত্রী ব্যাঙের মধ্যে একটি আকারে বড় হয় এবং অন্য একটি ব্যাঙের আকার তুলনামূলক ভাবে ছোট হয়। পুরুষ ব্যাঙ নিজেদের পছন্দ মতো সঙ্গী নির্বাচন করে তাদের সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হয়। কিন্তু সব সময় তাতে সাড়া দেয় না সেই স্ত্রী ব্যাঙ।
পুরুষ সঙ্গীকে পছন্দ না হলে নানা ধরনের আচরণে তা বোঝানোর চেষ্টা করে স্ত্রী ব্যাঙ। কখনও তারা নিজেদের শরীর উল্টে দেয়। তার ফলে পুরুষ ব্যাঙের পক্ষে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া সম্ভব হয় না।
ক্যারোলিন জানান, সঙ্গমে লিপ্ত হওয়ার ইচ্ছা না থাকলে স্ত্রী ব্যাঙেরা মৃতের ভান করে। হাত-পা শক্ত করে চিৎপাত হয়ে পড়ে থাকে। সারা শরীর কাঠের মতো শক্ত হয়ে যায় তাদের। সেই পরিস্থিতিতে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে পুরুষ ব্যাঙের পক্ষে। তাই বাধ্য হয়ে দূরে সরে যায় তারা।
ক্যারোলিনের মতে, সারা শরীর শক্ত করে মৃত হওয়ার অভিনয় করে ওই স্ত্রী ব্যাঙ। এ ভাবেই ‘স্ট্রেস রেসপন্স’ দেয় তারা। এই আচরণ করলেই স্ত্রী ব্যাঙের কাছ থেকে সরে পড়ে পুরুষ ব্যাঙ।
সাধারণত আকারে ছোট এবং কমবয়সি স্ত্রী ব্যাঙেদের মধ্যে বিশেষ এই আচরণ লক্ষ করেছেন ক্যারোলিন। ৫৪টি স্ত্রী ব্যাঙ পর্যবেক্ষণ করে ক্যারোলিন জানান, ৮৩ শতাংশ স্ত্রী ব্যাঙ সঙ্গমের সময় নিজেদের শরীর উল্টে ফেলে।
সঙ্গমের সময় ৪৮ শতাংশ স্ত্রী ব্যাঙ অদ্ভুত ধরনের শব্দ বার করে। পুরুষ ব্যাঙের সঙ্গ যে তার মনে ধরেনি, তারই ইঙ্গিত দেয় ওই স্ত্রী ব্যাঙগুলি।
তবে সঙ্গী পছন্দ না হলে ৩৩ শতাংশ স্ত্রী ব্যাঙ সারা শরীর শক্ত করে হাত-পা ছড়িয়ে দেয়। এর ফলে সঙ্গীর হাত থেকে ছা়ড়া পাওয়া যায় ঠিকই, তবে এই আচরণের মাধ্যমে অন্য একটি জিনিসও পরীক্ষা করে দেখে স্ত্রী ব্যাঙেরা।
গবেষকের দাবি, স্ত্রী ব্যাঙ সঙ্গমে লিপ্ত হওয়ার আগে পুরুষ ব্যাঙের শক্তি পরখ করে দেখতে চায়। তাই সেই সময় নিজের শরীর উল্টে দেয় সে। পুরুষ ব্যাঙটি আদৌ শক্তিশালী কি না তার পরীক্ষা নেয় স্ত্রী ব্যাঙ।
শক্তির পরীক্ষায় পাশ না করতে পারলে সেই পুরুষ ব্যাঙের সঙ্গে আর সঙ্গমে লিপ্ত হতে চায় না স্ত্রী ব্যাঙ। তার পর মৃত হওয়ার অভিনয় করে দূরে সরিয়ে দেয় পুরুষ ব্যাঙটিকে।
ক্যারোলিন জানিয়েছেন, সাধারণত ইউরোপের বিভিন্ন এলাকায় এই ধরনের স্ত্রী ব্যাঙের উপস্থিতি লক্ষ করা যায় যারা অভিনয় করে পুরুষ সঙ্গীদের দূরে সরিয়ে দেয়।
সব ছবি: সংগৃহীত।