মুদ্রাস্ফীতির জেরে মধ্যবিত্তের মাথায় হাত! হু-হু করে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। ফলে এখন থেকেই বুঝেশুনে খরচ না-করলে আগামী দিনে আর্থিক সঙ্কটে পড়ার প্রবল সম্ভাবনা। তাই এর হিসেব-নিকেশ এখনই করে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন দেশের তাবড় আর্থিক বিশ্লেষকেরা।
চলতি আর্থিক বছরের (পড়ুন ২০২৪-২৫) অক্টোবরে মুদ্রাস্ফীতির হার গত ১৪ মাসের মধ্যে সর্বাধিক স্তরে চলে গিয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। আর এর জন্য খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিকেই দায়ী করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। মুদ্রাস্ফীতির হার নিম্নমুখী করার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই)।
এ বছরের অক্টোবরে খুচরো মুদ্রাস্ফীতির সার্বিক হার পাঁচ শতাংশের উপরে উঠে যায়। কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ৫.৪৯ শতাংশে। আর সূচক ৩.৬৫ শতাংশে দাঁড়িয়ে ছিল এ বছরের অগস্ট মাসে।
এই সময়সীমার মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে ৬.২১ শতাংশ হয়েছে। এর জেরে মূল্যবৃদ্ধির হার আরবিআইয়ের ২১ বেসিস পয়েন্টের সহ্যসীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। মুদ্রাস্ফীতিকে চার শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। এতে উভয় দিকে দুই শতাংশ মার্জিন রেখেছে আরবিআই।
আর্থিক বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, আগামী দিনে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আরও বাড়তে পারে। ফলে এখন থেকেই সংসার চালানোর ক্ষেত্রে আয়-ব্যয়ের হিসাবে পরিবর্তন আনা উচিত। না হলে লম্বা সময় কেটে যাওয়ার পর আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়তে হতে পারে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তদের।
উদাহরণ হিসাবে মাসে লাখ টাকা খরচ করা একটি পরিবারের কথা ধরা যেতে পারে। সাত শতাংশ বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতির হার বজায় থাকলে ১০, ২০ এবং ৩০ বছর পর সংসার চালাতে কত টাকার প্রয়োজন হবে? আনন্দবাজার অনলাইনের এই প্রতিবেদনে রইল তার হদিস।
সিকিউরিটিজ় অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়ার (সেবি) ক্যালকুলেটর অনুযায়ী, ১০ বছর পর ওই পরিবারের মাসিক খরচ দাঁড়াবে ১.৯৭ লক্ষ টাকা। এই অঙ্ক ৩.৮৭ লক্ষে পৌঁছে যাবে ২০ বছর পর। ৩০ বছরের মাথায় প্রতি মাসের সাংসারিক খরচ দাঁড়াবে ৭.৬১ লক্ষ টাকা।
সেবির দেওয়া এই হিসাবের ক্ষেত্রে দু’টি জিনিস মনে রাখতে হবে। প্রথমত, সংসার খরচের এই বৃদ্ধি বেস বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতির হার সাত শতাংশ হলে তবেই দেখতে পাওয়া যাবে। দ্বিতীয়ত, এই হিসাব আর্থিক ভাবে খারাপ পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে নির্ণয় করা হয়েছে।
সেবি ক্যালুলেটরের করা এই অঙ্ক মিলে গেলে মাসে এক লক্ষ টাকা সংসার খরচ আগামী ১০ বছরের মধ্যেই দ্বিগুণ হয়ে যাবে। সেই কথা মাথায় রেখে এখন থেকে টাকা জমানোর দিকে নজর দিতে বলেছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা।
সংসার খরচ বৃদ্ধির নেপথ্যে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে খুচরো মুদ্রাস্ফীতি। এটি মূলত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস এবং পেট্রপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সম্পৃক্ত। খুচরো মুদ্রাস্ফীতির জেরে খাদ্যদ্রব্যের দামও আকাশছোঁয়া হয়ে থাকে।
রেটিং সংস্থা ‘ক্রিসিল’ জানিয়েছে, চলতি বছরের অক্টোবরে বাড়িতে রান্না করা নিরামিষ থালির দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ। গত বছরের (পড়ুন ২০২৩) অক্টোবরের তুলনায় আমিষ প্লেট পাঁচ শতাংশ দামি হয়েছে। গত ৭ নভেম্বর এই রিপোর্ট প্রকাশ করে ক্রিসিল।
সরকারি সূত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় এ বছরের সেপ্টেম্বরে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার কমেছে। ২০২৩ সালে এটি ছিল ৭.৪১ শতাংশ। ঠিক তার পরের মাসে সূচক কিছুটা নেমে ৬.৭৭ শতাংশ হয়।
অন্য দিকে, খাদ্যপণ্যে মূল্যবৃদ্ধি এ বছরের অগস্টে ছিল ৫.৬৬ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে একলাফে তা বেড়ে ৯.২৪ শতাংশে চলে যায়। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে খাদ্যপণ্যে মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৬.৬২ শতাংশ।
শস্য, সব্জি এবং অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে খুচরো পণ্যে মূল্যবৃদ্ধির হার কমানো কঠিন হবে বলে অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করছেন। এমন পরিস্থিতি হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে শেয়ার বাজারেও।
সব ছবি: সংগৃহীত।