২০২১-এর ২৬ জুলাই মুম্বইয়ের ভাসাইয়ের ভুইগাঁওয়ে সমুদ্রসৈকতে একটি ট্রাভেল ব্যাগ থেকে উদ্ধার হয় এক মহিলার মুণ্ডহীন দেহ। মৃতদেহটি যখন উদ্ধার করা হয়, তখন শরীরে পচন শুরু হয়ে গিয়েছিল। তবে এই মৃতদেহ কার বা এর পিছনে কার হাত রয়েছে, তা নিয়ে ধন্দে প়ড়ে যায় পুলিশ। ১৪ মাস পর পুলিশ সেই খুনের ঘটনার কিনারা করে।
খুনের কিনারা করতে চারটি দল গঠন করা হয়। এক বছর ধরে থানায় নিখোঁজ মহিলাদের অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখে তদন্তকারী দলগুলি। মৃতদেহের হাতে মেহেন্দির নকশা দেখে পুলিশ আন্দাজ করে যে মৃতা ইসলাম ধর্মাবলম্বী।
এই বছরের ২৯ অগস্ট পুলিশ প্রথম জানতে পারে যে ওই মৃতদেহ সানিয়া (২৫) নামের এক মহিলার। সানিয়ার পরিবারের লোকজন তাঁর খোঁজে নেমে বিভিন্ন থানা ঘুরে ভাসাই থানায় উপস্থিত হন। পোশাক এবং ওই মেহেন্দির ছবি দেখে মেয়েকে চিহ্নিত করেন তাঁরা।
সানিয়ার পরিবারের অভিযোগ ছিল, মৃতার স্বামী আসিফ শেখ এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে প্রায়ই টাকার জন্য নির্যাতন করতেন। সানিয়াকে খুন করেছে আসিফ, এমন অভিযোগও জানায় সানিয়ার পরিবার।
আসিফ তখন অন্ধেরির একটি শিপিং কোম্পানিতে কর্মরত। কাজের জায়গা থেকেই পুলিশ তাকে আটক করে। আসিফের মেয়ের সঙ্গে মৃতদেহের ডিএনএ মিলে যাওয়ার পর পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, এই মৃতদেহ সানিয়ারই।
পুলিশি জেরায় সব কথা স্বীকার করেন আসিফ। এর পরই পুলিশকে সানিয়ার খুনের রোমহমর্ষক কাহিনি শোনান আসিফ।
২০১৬ সালে আসিফ এবং সানিয়ার বিয়ে হয়। তিন বছর বয়সি এক মেয়েও ছিল দম্পতির।
ধৃত আসিফ পুলিশকে জানান, পূর্ব নালাসোপারার আচোলে এলাকায় ‘রশ্মি রিজেন্সি অ্যাপার্টমেন্টে’র একটি ফ্ল্যাটে যৌথ পরিবারে তাঁরা বসবাস করতেন।
মাঝখানে বেশ কিছু দিন কর্মসূত্রে সৌদি আরবেও ছিলেন আসিফ। করোনা অতিমারির আবহে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন।
বাড়ি ফেরার পর থেকে সানিয়া এবং আসিফের মধ্যে গন্ডগোল লেগেই থাকত। ২১ জুলাই বকরি ইদের দিন সন্ধেবেলা টাকা নিয়ে আসিফ এবং সানিয়ার মধ্যে আবার ঝামেলা শুরু হয়। সানিয়ার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আসিফ। আসিফের দাবি, সানিয়া পাল্টা চিৎকার শুরু করলে তিনি তাঁকে রাগের বশে খুন করেন।
খুনের পর সানিয়ার মাথা মৃতদেহে থেকে আলাদা করে দেন অভিযুক্ত। এর পর মৃতদেহ একটি বড় ট্রলিব্যাগে ঢুকিয়ে অ্যাপ ক্যাব ভাড়া করেন।
আসিফ নালাসোপারার সমুদ্রসৈকতে নিয়ে গিয়ে মৃতদেহ রাখা ব্যাগটি ফেলে দেন। সানিয়ার কাটা মুণ্ড ফেলে দেন অন্যত্র। এর পর আবার একটি অ্যাপ ক্যাব ভাড়া করে তিনি বাড়ি ফিরে যান।
পরের দিন আসিফ আত্নীয়পরিজন এবং প্রতিবেশীদের জানান, সানিয়া তাঁর প্রেমিকের সঙ্গে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছেন। সানিয়ার নাম করে একটি ভুয়ো চিঠি লিখে সবাইকে দেখান তিনি। পুলিশের তদন্তে ওই ভুয়ো চিঠির হাতের লেখা আসিফের হাতের লেখার সঙ্গে মিলে যায়।
সানিয়াকে খুনের পর নালাসোপারার ফ্ল্যাটও বিক্রি করে দেন আসিফ। নতুন ফ্ল্যাট কিনে পরিবার-সহ মুম্বরায় থাকতে শুরু করেন।
সানিয়ার পরিবারের সদস্যেদেরও একই কথা জানিয়েছিলেন আসিফ। তবে তাঁরা এই কথা বিশ্বাসই করতে চাননি। প্রথম কয়েক বার সানিয়ার পরিবারের ফোন ধরলেও ধীরে ধীরে আসিফ তাঁদের ফোন ধরা বন্ধ করে দেন।
পুলিশ হিসাব করে বুঝতে পারে, খুনের পাঁচ দিন পরই তারা সানিয়ার মৃতদেহ উদ্ধার করেছিল। এর পরই বৃহস্পতিবার পুলিশ সানিয়াকে খুনের অভিযোগে তাঁর স্বামী আসিফকে গ্রেফতার করেছে।
আসিফ পুলিশকে আরও জানান, তাঁর পরিবারের সদস্যেরা এই খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। খুনের দিন সন্ধেবেলা সানিয়ার সঙ্গে বাড়িতে তিনি একাই ছিলেন। পরিবারের বাকিরা ইদ উপলক্ষে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন বলেও পুলিশকে আসিফ জানান।
ভাসাই থানার এক পুলিশ আধিকারিক কল্যাণরাও কার্পে জানিয়েছেন, সানিয়াকে যে অস্ত্র দিয়ে খুন করা হয় এবং খুনের পর মাথা কেটে ফেলা হয়, সেই অস্ত্র এখনও উদ্ধার করা যায়নি।