১১ মার্চ, ২০২২। বক্স অফিসে মুক্তি পায় পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রীর ‘দ্য কাশ্মীর ফাইল্স’। ছবিটি ঘিরে তত দিনে দেশের রাজনীতিতে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে।
ছবি: সংগৃহীত।
বিনোদনের গণ্ডি পেরিয়ে ‘কাশ্মীর ফাইল্স’ রাজনীতির আঙিনায় জায়গা করে নিয়েছিল প্রথম থেকেই। কারণ এই ছবির অন্যতম প্রধান উপাদান রাজনীতি। প্রেক্ষাপট সদা উত্তপ্ত কাশ্মীর।
ছবি: সংগৃহীত।
নব্বই-এর দশকে উপত্যকা থেকে সংখ্যালঘু কাশ্মীরি পণ্ডিতদের বিতাড়নের ঘটনাকে তুলে ধরা হয়েছে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইল্স’ ছবিতে। হিন্দু পণ্ডিতদের উপর অত্যাচার, হত্যার রক্তাক্ত সেই প্রেক্ষাপট থেকে বিতর্কের জন্ম হতে দেরি হয়নি।
ছবি: সংগৃহীত।
বিবেকের ছবিটির ট্রেলার মুক্তির পর থেকেই বিতর্ক দানা বাঁধছিল। ১১ মার্চ ছবি মুক্তির পর সে বিতর্কের আগুনে যেন ঘৃতাহুতি দেওয়া হয়। এই ছবিতে চিত্রিত ঘটনাবলির নিন্দায় দেশ জুড়ে সরব হন অনেকে। অনেকেই আবার প্রশংসায় ভরিয়ে দেন ছবির নির্মাতাদের।
ছবি: সংগৃহীত।
প্রায় ৩০ বছর আগে কাশ্মীর থেকে হিন্দু পণ্ডিতদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। ধর্ম ও সম্মান রক্ষার্থে ঘরছাড়া সেই পণ্ডিতরা আর কখনও আদি বাসস্থানে ফিরে যেতে পারেননি। দূর থেকেই দেখে যেতে হয়েছে জন্মভূমি ভূস্বর্গ।
ছবি: সংগৃহীত।
পরিচালক বিবেকের দাবি, ছবিটি তৈরির জন্য তাঁকে দীর্ঘ সময় ব্যয় করে ইতিহাস ঘাঁটতে হয়েছে, নথিপত্র যাচাই করতে হয়েছে। প্রায় ৫ হাজার ঘণ্টার গবেষণার ফসল এই ‘কাশ্মীর ফাইল্স’।
ছবি: সংগৃহীত।
ছবি তৈরির জন্য নির্যাতিত কাশ্মীরি পণ্ডিতদের বয়ানও রেকর্ড করেছেন বিবেক। ছবিতে সেই সংক্রান্ত ভিডিয়ো রয়েছে।
ছবি: সংগৃহীত।
অভিযোগ, নব্বই-এর দশকে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উপর অত্যাচার, নিপীড়ন ধামাচাপা দেওয়া হয়েছিল খোদ সরকারের মদতেই। হিন্দু পণ্ডিতদের সঙ্গে কী হচ্ছে, তা সুকৌশলে প্রচারের আড়ালে রেখেছিল তৎকালীন সরকার।
ছবি: সংগৃহীত।
বিবেকের এই ছবির বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, ছবিটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রচারমূলক। কাশ্মীরের ঘটনাকে পর্দায় এনে এই ছবি ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক মনোভাবকে প্রশ্রয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ। রাজনৈতিক দলগুলিও ছবির বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে মাঠে নামতে দেরি করেনি।
ছবি: সংগৃহীত।
মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইল্স’-কে করমুক্ত ঘোষণা করা হয় বেশ কিছু বিজেপি শাসিত রাজ্যে। এমনকি কোথাও কোথাও বিজেপি নেতারা সদলবলে সিনেমা হলে গিয়ে এই ছবি দেখে আসেন। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত প্রশংসায় ভরিয়ে দেন ‘কাশ্মীর ফাইল্স’-কে।
ছবি: সংগৃহীত।
অন্য দিকে, ‘কাশ্মীর ফাইল্স’-কে হাতিয়ার করে শাসকদলকে একহাত নেন বিরোধীরা। এই ছবিকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ এবং ‘ইতিহাসের বিকৃতি’ আখ্যা দিয়ে তা বয়কটের ডাক দেন কেউ কেউ। দেশ জুড়ে যেন বিতর্কের ঝড় ওঠে।
ছবি: সংগৃহীত।
তবে শত বিতর্কের মাঝেও বক্স অফিসে ‘কাশ্মীর ফাইল্স’ সফল। কয়েক সপ্তাহ ধরে বিপুল ব্যবসা করে রেকর্ড ভেঙে দেয় বিবেকের ছবি। এই ছবি মোট ২৫২ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে।
ছবি: সংগৃহীত।
মূলত বিতর্কের কারণেই ছবিটি বার বার দেখতে গিয়েছেন মানুষ। হল উপচে পড়েছে শুধু মাত্র এটা জানার জন্য, কী নিয়ে এত বিতর্ক।
ছবি: সংগৃহীত।
তবে বক্স অফিসে সাফল্য পেলেও এই ছবির উৎকর্ষ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। সমালোচক মহলে ছবিটি খুব একটা প্রশংসিত হয়নি।
ছবি: সংগৃহীত।
‘কাশ্মীর ফাইল্স’ ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনুপম খের। এ ছাড়া মিঠুন চক্রবর্তী, পল্লবী জোশী, দর্শন কুমার, মৃণাল কুলকার্নি, ভাষা সুম্বলির মতো তারকাদের দেখা গিয়েছে ছবিতে। তাঁদের অভিনয় যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছে।
ছবি: সংগৃহীত।
‘কাশ্মীর ফাইল্স’-এর সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে ‘দিল্লি ফাইল্স’ ছবির ঘোষণা করেন বিবেক। ‘কাশ্মীর ফাইল্স’-এর সিক্যুয়েল তৈরির কথাও জানান।
ছবি: সংগৃহীত।
সময়ের সঙ্গে ‘কাশ্মীর ফাইল্স’-এর বিতর্কে ভাটা পড়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি ফের উস্কে গিয়েছে এক বিদেশি পরিচালকের হাত ধরে।
ছবি: সংগৃহীত।
গোয়ায় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইল্স’। সেখানে জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান তথা ইজ়রায়েলি পরিচালক নাদাভ লাপিডের হাত ধরে নতুন করে বিতর্কের সূত্রপাত।
ছবি: সংগৃহীত।
প্রকাশ্যে এই ছবিটিকে ‘অশ্লীল’ ও ‘প্রচারধর্মী’ বলে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চে তার তীব্র ভর্ৎসনা করেছেন লাপিড। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিযোগিতায় থাকা ১৫টি ছবির মধ্যে ১৪টির শিল্পগুণ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু পঞ্চদশ সিনেমা ‘দ্য কাশ্মীর ফাইল্স’-কে আমি প্রচারধর্মী এবং আপত্তিকর একটি ছবি বলেই মনে করছি। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিযোগিতায় এই ছবিকে রাখাটাই ঠিক হয়নি।’’
ছবি: সংগৃহীত।
নাদাভের এ হেন মন্তব্যের পর ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে নেমেছে ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অফ ইন্ডিয়া বা ইফি-র জুরি বোর্ড। তারা জানিয়েছে, ‘‘সবটাই পরিচালকের ব্যক্তিগত মতামত।’’
ছবি: সংগৃহীত।
লাপিডের মন্তব্যের সমালোচনা করেন ইজরায়েলি রাষ্ট্রদূত নায়োর গিলনও। তিনি টুইট করে ভারতের কাছে ক্ষমা চান। লাপিডের উদ্দেশে লেখেন, ‘‘আপনার লজ্জা হওয়া উচিত। ইজ়রায়েল নিয়ে আপনার যা নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে বলুন না মন খুলে। কিন্তু অন্য দেশকে নিয়ে এ রকম নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করবেন না।’’
ছবি: সংগৃহীত।
বস্তুত, হলোকাস্ট বা ইহুদি গণহত্যার রক্তাক্ত ইতিহাস রয়েছে লাপিডের শিকড়েও। তিনি নিজেও এমন একটি সম্প্রদায়ের মানুষ, যাঁদের রয়েছে হলোকাস্টের মতো নিষ্ঠুর গণহত্যার ইতিহাসে। ‘কাশ্মীর ফাইল্স’ নিয়ে তাঁর মন্তব্যে ইহুদিদের সেই ইতিহাসও টেনে আনেন কেউ কেউ।
ছবি: সংগৃহীত।
লাপিডের মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন পরিচালক বিবেক এবং অভিনেতা অনুপম খের। বিবেক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে জানিয়ে দেন, ‘কাশ্মীর ফাইল্স’ ছবিতে যা যা দেখানো হয়েছে, তা ভুল প্রমাণ করতে পারলে তিনি পরিচালনা ছেড়ে দেবেন।
ছবি: সংগৃহীত।
‘কাশ্মীর ফাইল্স’-কে নিয়ে বিতর্ক থামানো যাচ্ছে না। তবে বিতর্কই যে এই ছবির সাফল্যের টিআরপি, তাতে সন্দেহ নেই। সেই টিআরপি গত মার্চ মাস থেকে একটানা শিরোনামে রেখেছে ‘কাশ্মীর ফাইল্স’কে।
ছবি: সংগৃহীত।