বিশ্বকাপের মাঠে নজর কেড়েছেন ভারতের জোরে বোলার মহম্মদ শামি। ক্রিকেট অনুরাগীদের প্রশংসা কুড়োনোর পাশাপাশি তিনি এ বার জায়গা করে নিলেন এক বাঙালি অভিনেত্রীর মনেও! সরাসরি শামিকে বিয়ের প্রস্তাবই দিয়ে ফেলেছেন তিনি। তবে বিয়ে করার জন্য দিয়েছেন একটি শর্তও। কে এই অভিনেত্রী?
অভিনেত্রীর নাম পায়েল ঘোষ। বলিউডের পাশাপাশি দক্ষিণী ফিল্মজগতের সঙ্গেও যোগ রয়েছে তাঁর। ২ নভেম্বর পায়েল তাঁর এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করে জানান যে তিনি শামিকে বিয়ে করতে চান। বিয়ের ইচ্ছাপ্রকাশ করে দেন একটি শর্ত।
এক্স হ্যান্ডলে পোস্টে পায়েল লেখেন, ‘‘শামি, তুমি তোমার ইংরেজি শুধরে নাও। আমি তোমায় বিয়ে করার জন্য তৈরি।’’ তার পর দু’টি হাসির ‘ইমোজি’ দিয়ে নিজের বক্তব্য শেষ করেন অভিনেত্রী।
১৯৯২ সালে কলকাতায় জন্ম পায়েলের। কলকাতা থেকেই স্কুল-কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন পায়েল।
ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ে নামার ইচ্ছা ছিল পায়েলের। ১৭ বছর বয়স থেকে অভিনয় শুরু করেন তিনি। ২০০৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বিবিসি-র টেলিফিল্ম ‘শার্পে’স পেরিল’-এর জন্য এক বন্ধুর সঙ্গে অডিশন দিতে যান পায়েল। অডিশন দিয়ে এই টেলিফিল্মে অভিনয়ের সুযোগও পান তিনি।
‘শার্পে’স পেরিল’-এ এক বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামীর কন্যার ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যায় পায়েলকে। কানাডার একটি ছবিতেও অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু পড়াশোনা ছেড়ে তিনি অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়তে চাইলে আপত্তি জানান পায়েলের বাবা-মা।
অভিনয় নিয়েই ভবিষ্যতে এগিয়ে যাবেন বলে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান পায়েল। বলিপাড়া সূত্রে খবর, কলেজে ছুটি চলাকালীন কলকাতা ছেড়ে মুম্বই চলে যান তিনি।
মুম্বইয়ে গিয়ে অভিনয়ের প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন পায়েল। সেখানে তাঁর আলাপ হয় দক্ষিণী পরিচালক চন্দ্রশেখর ইয়েলেতির সঙ্গে। পায়েলকে তেলুগু ভাষার একটি ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন চন্দ্রশেখর।
২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্রায়ানাম’ নামের রোম্যান্টিক ড্রামা ঘরানার তেলুগু ছবিতে অভিনয় করেন পায়েল। এই ছবির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন চন্দ্রশেখর। তার পর একের পর এক দক্ষিণী ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় পায়েলকে।
‘ওসারাভেলি’ এবং ‘মিস্টার রাসকেল’ নামে আরও দু’টি তেলুগু ছবিতে অভিনয় করেন পায়েল। কন্নড় এবং তামিল ভাষার ছবিতেও কাজ করেছেন তিনি।
২০১০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কন্নড় ছবি ‘বর্ষাধারে’ এবং তামিল ছবি ‘থেড়োদাম ভিড়িইলে’তে অভিনয় করেন পায়েল। হিন্দি ফিল্মজগতেও কাজ করার সুযোগ পান তিনি।
২০১২ সালে বিবেক অগ্নিহোত্রীর পরিচালনায় ‘ফ্রিডম’ নামে একটি ছবিতে অভিনয় করেন পায়েল। এই ছবির মাধ্যমেই বলিপাড়ায় আত্মপ্রকাশ করেন তিনি।
২০১৬ সাল থেকে সম্প্রচারিত ‘সাথ নিভানা সাথিয়া’ নামের একটি জনপ্রিয় হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করেন পায়েল।
২০১৭ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় কমেডি ঘরানার ছবি ‘পটেল কি পঞ্জাবি শাদি’। এই ছবিতে ঋষি কপূর, পরেশ রাওয়াল, প্রেম চোপড়া এবং বীর দাসের মতো তারকাদের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পান পায়েল।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, দীর্ঘ দিন বলিপাড়ায় কোনও কাজ পাননি পায়েল। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে অভিনেত্রী দাবি করেন, অর্থাভাবে ভুগছেন তিনি। হাতে কোনও কাজও নেই তাঁর। জানান, তিনি এমন ভাবে জীবনযাপন করছেন যা কখনও কল্পনাও করেননি।
২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বরে বলিউডের প্রথম সারির ছবিনির্মাতা অনুরাগ কাশ্যপের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ করেন পায়েল।
পায়েলের অভিযোগ, ২০১৩ সালে মুম্বইয়ের ভারসোভা এলাকায় যৌন নিগ্রহের শিকার হন তিনি। পুলিশের কাছে অনুরাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলে সেই অভিযোগের ভিত্তিতে অনুরাগকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠায় পুলিশ।
পায়েলের সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন অনুরাগ। দাবি করেন, যে সময়ের কথা পায়েল উল্লেখ করছেন, সে সময় মুম্বইয়ে ছিলেন না তিনি, শ্রীলঙ্কায় শুটিংয়ের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। প্রমাণ হিসাবে প্রয়োজনীয় নথিপত্রও পুলিশকে দেন তিনি।
অনুরাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার সময় বলি অভিনেত্রী রিচা চড্ডার নামও জড়িয়ে ফেলেন পায়েল। এর ফলে মুম্বইয়ের আদালতে পায়েলের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন রিচা। ক্ষতিপূরণ হিসাবে পায়েলের কাছে ১.১ কোটি টাকাও দাবি করেন রিচা। পরে রিচার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করলে সেই মামলার নিষ্পত্তি হয়।
২০২০ সালের ২৬ অক্টোবর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন পায়েল। রামদাস অটওয়ালের রিপাবলিক পার্টি অফ ইন্ডিয়া (এ) দলের মহিলা শাখার সহ-সভাপতি পদে যোগ দেন তিনি।
চলতি বছরে মুক্তি পাওয়ার কথা ‘ফায়ার অফ লভ: রেড’ নামে একটি হিন্দি ছবির। এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে পায়েলকে। সেই ছবিতে কৌতুকাভিনেতা ক্রুষ্ণা অভিষেকের বিপরীতে অভিনয় করবেন তিনি।
সমাজমাধ্যমের পাতায় যথেষ্ট সক্রিয় থাকেন পায়েল। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুরাগী সংখ্যা ৩৫ লক্ষের গণ্ডি পার করেছে।
সকল ছবি সংগৃহীত।