প্রত্যেক খেলোয়াড়ের স্বপ্ন থাকে দেশ বা ক্লাবের হয়ে ট্রফি জয়। বহু ঘাম, রক্ত ঝরিয়ে পাওয়া সেই ট্রফি পেয়ে কেউ ডেভিড ওয়ার্নারের মতো চোখ বুজে নিবিড় চুম্বন এঁকে দেন, অনেকে আবার বহু দিন পর দেখা হওয়া বন্ধুর মতো জড়িয়ে ধরেন। ব্যতিক্রম শুধু মিচেল মার্শ।
মার্শ ট্রফির উপর পা তুলে মদ্যপান করলেও তাঁর সতীর্থ ওয়ার্নার, স্টিভ স্মিথ এবং মার্নাস লাবুশেনকে দেখা গিয়েছে একসঙ্গে ট্রফিতে চুমু খেতে। বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার মুখ থেকে ফিরে ট্রফি জিতে নেওয়ার তৃপ্তি দেখা যাচ্ছিল তাঁদের চোখেমুখে।
আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ২০১ রানের ইনিংস খেলা গ্লেন ম্যাক্সওয়েল যে ভাবে ট্রফির দিকে তাকিয়েছিলেন, মনে হচ্ছিল নিজের সন্তানের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। পরম স্নেহে আপন করে দু’হাতে তুলে ধরেছিলেন ট্রফিটি।
অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের সঙ্গে ট্রফি নিয়ে ভালবাসা দেখা গিয়েছে সমর্থকদের মধ্যেও। কামিন্স ট্রফি নিয়ে সাজঘরে উঠে যাওয়ার সময় হাত বাড়িয়ে এক বার ট্রফিটি ছোঁয়ার চেষ্টা করছিলেন দুই সমর্থক। একটু ছোঁয়ার সেই আকুতি বুঝিয়ে দেয় ট্রফি কতটা দামি তাঁদের কাছেও।
অস্ট্রেলিয়ার মেয়েরাও গত বছর ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ জিতেছিল। সেই ট্রফি জয়ের পর মেগ ল্যানিংকে দেখা যায় পরম আদরে ট্রফিতে চুম্বন করতে। এমন দৃশ্যই তো বার বার দেখা গিয়েছে ক্রিকেটে।
১৯৮৩ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর কপিল দেবকে দেখা গিয়েছিল ট্রফিটি মাথায় তুলে নিতে। ভারতের প্রথম বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক জানতেন সেই ট্রফিটি কত দামি। ভারতীয় ক্রিকেটকে বদলে দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা ছিল সেই ট্রফি জয়ের।
২০০৭ সালে ভারতকে ট্রফি এনে দিয়েছিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হাতে নিয়ে শ্যাম্পেন ছিটিয়ে তাঁর হাঁটার ছবি এখনও ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে রয়ে গিয়েছে। সেই ছবির মধ্যে ছিল ক্রিকেটকে শাসন করার তেজ, কিন্তু কখনওই ট্রফিকে অপমান করে নয়।
২০১১ সালে বিশ্বকাপ এক দিনের জিতেছিল ভারত। দ্বিতীয় বার ভারতের এক দিনের বিশ্বকাপ জয়। যে ট্রফি হাতে নিয়ে ধোনি ছবি তুলেছিলেন ইন্ডিয়া গেটের সামনে। এক হাত ট্রফির নীচে, অন্য হাতে এলিয়ে রাখা ট্রফিটি। দেখে মনে হবে ধোনির কত আপন জিনিস সেটি।
ভারত শেষ বার আইসিসি ট্রফি জিতেছিল ২০১৩ সালে। সে বার দেখা গিয়েছিল দীনেশ কার্তিককে অবাক চোখে ট্রফির দিকে তাকিয়ে থাকতে। ধোনির ভারতের অন্যতম সদস্য ছিলেন কার্তিক। একগাল হাসি নিয়ে ট্রফির দিকে তাকিয়ে ছিলেন তিনি।
শুধু ভারতীয় ক্রিকেটারেরা নন, ইংল্যান্ডের বেন স্টোকসকেও দেখা গিয়েছিল ট্রফিকে জড়িয়ে ধরতে। ২০১৯ সালে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ জিতেছিল। যে ভাবে বন্ধুর কাঁধে হাত রাখা হয়, স্টোকস ঠিক সে ভাবে ট্রফিটি ধরেছিলেন। ইংল্যান্ডের প্রথম বার বিশ্বকাপ জয়ের পথ বড়ই বন্ধুর। ম্যাচ এবং সুপার ওভার ড্র হওয়ার পর বাউন্ডারি বেশি মারার কারণে জিতেছিল তারা। তার পর ট্রফিকে বন্ধু হিসাবে কাছে টেনে নিয়েছিলেন স্টোকস।
শুধু ক্রিকেট নয়, অন্যান্য খেলাতেও ট্রফি-প্রেম বার বার দেখা গিয়েছে। ২০২২ সালে কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপ জিতে লিয়োনেল মেসিকে দেখা গিয়েছিল ট্রফির মাথায় চুম্বন করতে। যে দৃশ্য শুধু আর্জেন্টিনা বা মেসি ভক্তদের মনে নয়, ফুটবলপ্রেমীদের মনেও রয়ে গিয়েছে।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে চুমু খেয়েছিলেন ট্রফিতে। ২০১৬ সালে ট্রফি জিতে সেই দৃশ্য দেখা যায়। তবে এই দৃশ্য ব্যতিক্রম নয়। ট্রফি জয়ের পর এই ছবিই বার বার দেখা গিয়েছে।
২০১৮ সালে ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন কিলিয়ান এমবাপে। ১৯ বছর বয়সে ট্রফি জিতে আবেগে ভাসছিলেন এমবাপে। তাঁকে দেখা গিয়েছিল পরম যত্নে ট্রফিতে চুম্বন করতে।
স্পেনের জেনিফার হারমোসো বিশ্বকাপ জয়ের পর ট্রফি নিয়ে বিছানায় শুয়েছিলেন। তাঁর সেই ছবি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরম আদরে ট্রফি জড়িয়ে শুয়েছিলেন স্পেনের মহিলা ফুটবলার।
টেনিস বিশ্বেও এই ছবি দেখা যায়। উইম্বলডন জিতে ট্রফিতে চুমু খেয়েছিলেন রজার ফেডেরার। সুইস টেনিস তারকা আট বার উইম্বলডন জিতেছেন। চোখ বন্ধ করে চুমু খেয়েছিলেন ট্রফিতে।
রাফায়েল নাদাল ফরাসি ওপেন জিতেছেন ১৪ বার। এত বার এক ট্রফি জিতেও কখনও ঔদ্ধত্য দেখা যায়নি তাঁর মধ্যে। ট্রফির গলা জড়িয়ে চুমু খেয়েছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁর কাছে সেই ট্রফি কতটা আপন।
বাদ যাননি সেরিনা উইলিয়ামসও। আমেরিকার টেনিস-কন্যা ২৩টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালকিন। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতেছেন সাত বার। সেই ট্রফি জিতে সন্তানের মতো তা জড়িয়ে ধরেছিলেন সেরিনা।
নোভাক জোকোভিচ গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন ২৪ বার। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন তিনি জিতেছেন ১০ বার। এই বছরও সেই ট্রফি জিতেছেন তিনি। ট্রফি জিতে জোকোভিচ স্নেহ ভরা চোখে তাকিয়েছিলেন। প্রচণ্ড পরিশ্রমের সাফল্য পেয়ে তাঁর মুখে দেখা গিয়েছিল তৃপ্তির হাসি।
সব ছবি: সংগৃহীত।