কলকাতা
শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:০৬
এক সময়ে রাস্তায় ঠেলাগাড়িতে পাঁপড় বিক্রি করতেন। এখন তিনিই কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিতে যান। রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নেন। তাঁর ‘সুপার থার্টি’ বলিউডের দৌলতে এখন সকলেরই চেনা। কথা হচ্ছে আনন্দ কুমারের।
প্রতি বছর বিহারের পটনার এই গণিতজ্ঞ দুঃস্থ ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের আইআইটিতে ভর্তি করানোর জন্য লড়াই করেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলে প্রশিক্ষণ। বিনা পারিশ্রমিকে গরিব ছাত্রদের জয়েন্ট এন্ট্রান্স উতরোতে ২০০২ সাল থেকে লড়াই করেন আনন্দ।
এ তো গেল আনন্দের কথা। কিন্তু অনেকেই জানেন না বিহারের এমন এক গ্রামের কথা যা পরিচিত ‘আইআইটি গ্রাম’ নামে।
বার বার দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় কেলেঙ্কারির অভিযোগে সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে উঠে আসে বিহারের নাম (বলা ভাল বদনাম)। কিন্তু এই ক্ষেত্রে বিহারের পটয়োটোলি ব্যতিক্রম।
গয়া জেলার অন্তর্গত মানপুরের পটয়োটোলি। এমন এক গ্রাম যেখান থেকে প্রতি বছর কেউ না কেউ আইআইটিতে পড়াশোনার সুযোগ পান।
পটয়োটোলি গ্রামে সব মিলিয়ে দেড় হাজার পরিবারের বাস। বাস করেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ। সেই পরিবারগুলির প্রায় তিনশো পুত্র এবং কন্যা জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পাশ করে আইআইটিতে পড়াশোনা করছেন। যা একটি ছোট গ্রামের পক্ষে ব্যতিক্রম।
উল্লেখযোগ্য যে পটয়োটোলি গ্রামের অধিকাংশ পরিবারই আর্থিক ভাবে সচ্ছল নয়।
মূলত বিছানার চাদর বা ঐতিহ্যবাহী গামছা তৈরি করেই দিন গুজরান করেন গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে তাঁতকল।
বাবা-মায়েরা দিনমজুরি এবং তাঁতের কাজ করলেও সন্তানদের শিক্ষায় কোনও ত্রুটি রাখেন না।
ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষিত করে তুলতে অনেকে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণও নেন। সেই টাকায় সন্তানদের আইআইটির কোচিং নিতে পাঠান।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পটয়োটোলি গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবারেই কেউ না কেউ আছেন যিনি হয় আইআইটিতে পড়াশোনা করছেন বা সেখানে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ২০১৭ সালে ওই গ্রাম থেকে একসঙ্গে ২০ জন আইআইটিতে সুযোগ পান।
সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পটয়োটোলির গ্রামের মানুষদের জন্য আইআইটির মতো জায়গায় ভর্তি হওয়া দারিদ্র্যপীড়িত জীবন থেকে মুক্তির অন্যতম উপায়।
আইআইটি থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন পটয়োটোলির এমন অনেক সন্তান বর্তমানে দেশ-বিদেশের নামী সংস্থায় যুক্ত আছেন।
আইআইটি থেকে পাশ করে পটয়োটোলির দেব নারায়ণ বর্তমানে সিঙ্গাপুরে কর্মরত। ৩০ বছর বয়সি দেব এক সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‘২০০০ সালের গোড়ার দিকে পটয়োটোলি আইআইটি জ্বরে আক্রান্ত হয়। তার আগে সেই গ্রামে কোনও ভাল স্কুল ছিল না। কাছাকাছি কোনও ভাল কলেজও ছিল না। চাকরির সম্ভাবনাও ছিল না।’’
দেবের কথায়, ‘‘আমাদের গ্রামের মেয়েরা খুব কমই পড়াশোনার সুযোগ পেত। ছেলেরাও দশম শ্রেণির পর আর পড়াশোনা করত না। এমনকি, অনেকে আইআইটির কথাই শোনেনি। এর পর ধীরে ধীরে গ্রামের পরিস্থিতি বদলে যায়।’’
সব ছবি সংগৃহীত।
