প্যান কার্ড নিয়ে বড় ঘোষণা করল কেন্দ্র। কেন্দ্রের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, এখন থেকে প্যান কার্ডে যুক্ত করা হবে কিউআর কোড। সোমবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্যান কার্ডে কিউআর কোড ছাড়া আর কী কী সুবিধা থাকবে তা নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। এই প্রকল্পের নাম ‘প্যান ২.০’ দেওয়া হয়েছে।
প্যান ২.০ প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বরাদ্দ করা হয়েছে ১৪৩৪ কোটি টাকা।
এই আবহে দেশবাসীর মনে প্রশ্ন উঠতে শুরু হয়েছে, নতুন প্যান কার্ড এলে পুরনো প্যান কার্ডের কী হবে? সেই কার্ড কি বাতিল হয়ে যাবে? নতুন কার্ডের সঙ্গে নতুন প্যান নম্বরও আসবে?
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, সাধারণ মানুষকে প্যান ২.০ প্রকল্পের জন্য কোনও খরচ করতে হবে না। যাবতীয় খরচ বহন করবে কেন্দ্রই। বর্তমান প্যান নম্বর বদলও করতে হবে না। নতুন প্যান কার্ডের কাজ শুরু হলেই দেশবাসীকে সমস্ত তথ্য বিস্তারিত ভাবে জানানো হবে।
কেন্দ্রের তরফে এ-ও জানানো হয়েছে, আসন্ন প্যান ২.০ প্রকল্প বর্তমান প্যান ব্যবস্থার একটি উন্নত রূপ হিসাবে চালু করা হবে। অশ্বিনী আরও ব্যাখ্যা করেছেন, নতুন কার্ডের তথ্য স্ক্যান করার জন্য একটি কিউ আর কোড থাকবে।
নতুন প্যান কার্ডের ক্ষেত্রে পুরোটাই ‘পেপারলেস’ বা ডিজিটাল হবে বলেও জানিয়েছে কেন্দ্র। অর্থাৎ পকেটে কার্ড বয়ে বেড়াতে হবে না। ডাউনলোড করে রাখা যাবে মোবাইলে।
প্যান কার্ড ২.০ প্রকল্পকে ‘কমন বিজ়নেস আইডেনটিফায়ার’ হিসাবেও চিহ্নিত করেছে কেন্দ্র। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী এবং শিল্প সংস্থাকে এই কার্ডের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হবে। প্যান নম্বর ব্যবহার করেই সমস্ত ব্যবসায়িক কাজকর্ম করা যাবে। অন্য কোনও পরিচয়পত্র বা নম্বরের প্রয়োজন পড়বে না।
কী কী সুবিধা পাওয়া যাবে নতুন এই প্রকল্পে? বিবৃতির মাধ্যমে তা বিশদে জানিয়েছে কেন্দ্র। বলা হয়েছে, প্যান কার্ডে কিউআর কোড থাকার ফলে আয়করদাতাদের আর্থিক লেনদেন অনেক সহজ এবং স্বচ্ছ হয়ে উঠবে। উন্নত মানের এবং দ্রুত পরিষেবা পাওয়া যাবে।
পাশাপাশি কেন্দ্র এ-ও জানিয়েছে, প্যান ২.০ প্রকল্পে প্যান কার্ডের উন্নতির সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোর দিকেও জোর দেওয়া হবে। ব্যক্তিগত তথ্য এবং অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত থাকবে। আর্থিক জালিয়াতির ভয় অনেকটাই কমবে।
এই প্রকল্পের ফলে সাধারণ মানুষের আর্থিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা আরও উন্নত হবে বলেও দাবি করা হয়েছে সরকারের তরফে।
নতুন প্যান ব্যবস্থাকে এক জন গ্রাহকের আয়ের সূত্রের স্বচ্ছতা এবং ওই সংক্রান্ত তথ্যের নির্ভরযোগ্য উৎস হিসাবেও বিবেচনা করা হবে।
১৯৭২ সাল থেকে আয়কর আইন মেনে আয়করদাতাদের চিহ্নিত করতে প্যান কার্ডের ব্যবহার হয় ভারতে। কেন্দ্রের তরফে এখনও পর্যন্ত মোট ৭৮ কোটি কার্ড জারি করা হয়েছে। যার মধ্যে ৯৮ শতাংশ রয়েছে একক ব্যবহারের জন্য।
এই প্রকল্প নিয়ে আশাবাদী কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এক্স হ্যন্ডলে লেখেন, “প্যান ২.০ প্রকল্পের মাধ্যমে আয়করদাতাদের অনেক সুবিধা হবে। তাঁরা নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে স্বচ্ছ, সহজ এবং উন্নত পরিষেবা পাবেন।”
তবে কী ভাবে এই প্রকল্পটির কাজ শুরু হবে তা এখনও পরিষ্কার নয়। পাশাপাশি, কবে থেকে এই পরিষেবা চালু হবে তা নিয়ে এখনও কিছু জানায়নি কেন্দ্রীয় সরকার।
উল্লেখ্য, এর আগে কেন্দ্রের তরফে আধারের সঙ্গে প্যান যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্র। তখন জানানো হয়েছিল, সময়সীমা মেনে আধারের সঙ্গে সংযোগ না করায় বাতিল হয়ে গিয়েছে দেশের সাড়ে ১১ কোটি নাগরিকের প্যান কার্ড। তথ্যের অধিকার আইনে করা একটি প্রশ্নের জবাবে আয়কর বিভাগ এই তথ্য জানিয়েছিল।
এর পর চলতি বছরের এপ্রিল মাসে প্রত্যক্ষ কর পর্ষদ জানিয়েছিল, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্যানের সঙ্গে আধার যুক্ত করা হলে অতিরিক্ত হারে উৎসে কর কাটা বা সংগ্রহ (টিডিএস/টিসিএস) করতে হবে না।
সাম্প্রতিককালে আয়কর আইন সংশোধন করে চালু হওয়া নতুন নিয়ম অনুযায়ী, প্যানের সঙ্গে আধার যুক্ত করা না থাকলে দ্বিগুণ হারে টিডিএস বা টিসিএস কাটাতে হবে।
ছবি: সংগৃহীত।