১৯৯৯ সালে প্রকাশিত হয় লেখক রবিন শর্মার বিখ্যাত বই ‘দ্য মঙ্ক হু সোল্ড হিজ় ফেরারি’। সারা বিশ্ব জুড়ে সেই বই হু হু করে বিক্রি হয়েছিল।
এক সফল আইনজীবী ‘জুলিয়ান ম্যান্টল’ আধ্যাত্মিক জীবনে পা দেওয়ার জন্য কী ভাবে নিজের প্রাসাদ এবং বিলাসবহুল গাড়ি বিক্রি করে দেন, তা-ই ছিল বইটির বিষয়বস্তু।
‘দ্য মঙ্ক হু সোল্ড হিজ় ফেরারি’র বইয়ের জুলিয়ান ছিল কাল্পনিক চরিত্র। কিন্তু ভেন আজহন সিরিপানিয়োর কাহিনি বাস্তব। জুলিয়ানের সঙ্গে ভেনের মিলও অনেক।
মালয়েশিয়ার সদ্যপ্রয়াত ধনকুবের আনন্দ কৃষ্ণণের একমাত্র পুত্র আজহন। বর্তমানে পাকাপাকি ভাবে মালয়েশিয়ায় থাকলেও আনন্দের জন্ম তামিলনাড়ুতে। তিনি বেশি পরিচিত ছিলেন ‘একে’ নামে।
মালয়েশিয়ার নামী টেলিকম সংস্থার মালিক ছিলেন আনন্দ। মালয়েশিয়ার টেলিকম শিল্পে পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রেও ছিল তাঁর। বন্ধ হয়ে যাওয়া টেলিকম সংস্থা এয়ারসেলের অন্যতম মালিক ছিলেন তিনি।
টেলিকম সংস্থা ছাড়াও সংবাদমাধ্যম, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং তেল, নির্মাণ ব্যবসা, উপগ্রহের যন্ত্রাংশ তৈরির সংস্থাতেও বিনিয়োগ ছিল আনন্দের। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী আনন্দের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকা।
আনন্দের সেই বিপুল অর্থভান্ডারের উত্তরাধিকারী তাঁর একমাত্র পুত্র, আজহন। কিন্তু বাবার তৈরি ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যে মন নেই তাঁর। তিনি বিরাজ করতে চান আধ্যাত্মিকতার সূক্ষ্ম স্তরে। হয়েছেও তাই।
বাবার অঢেল সম্পদ উপেক্ষা করে আজহন পা বাড়িয়েছেন সন্ন্যাসী হওয়ার পথে। বেছে নিয়েছেন বৌদ্ধ ভিক্ষুর জীবন। তবে বাবা বেঁচে থাকতেই সন্ন্যাস নিয়েছিলেন তিনি।
আজহনের বৌদ্ধ ভিক্ষু হওয়ার সিদ্ধান্তে বাধা হয়ে দাঁড়াননি বাবা আনন্দও। বরং তিনিই নাকি সব থেকে বেশি উৎসাহ জুগিয়েছিলেন পুত্রকে।
আজহনের বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি বিশ্বাসের অন্যতম কারণও কিন্তু তাঁর বাবাই। আনন্দ একজন নিবেদিতপ্রাণ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন অসরকারি সংস্থায় দানধ্যান করার জন্যও সুনাম রয়েছে তাঁর।
তাই ছেলে পার্থিব সম্পদের মায়া ত্যাগ করে কঠিন জীবনযাপন বেছে নিতে চায় শুনে বাধা দেননি আনন্দ। কিন্তু কেন বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে আজহন বৌদ্ধ ভিক্ষু হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন, সে বিষয়ে তিনি কখনও কিছু জানাননি।
দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে, আজহন বৌদ্ধ ভিক্ষু হিসাবে জীবনযাপন করছেন। বর্তমানে তিনি তাইল্যান্ড এবং মায়ানমার সীমান্তের কাছে দতাও দম মঠে থাকেন। ভিক্ষা করে তাঁর যে সামান্য আয় হয়, তাতেই অনাড়ম্বর জীবন কাটান তিনি।
আনন্দের প্রথম পক্ষের সন্তান আজহন। আজহনের জন্মদাত্রী মমওয়াজরংসে সুপ্রিন্দা চক্রবন তাইল্যান্ডের রাজপরিবারের সদস্য। আজহনের শরীরেও তাই রাজবংশের রক্ত বইছে।
বর্তমানে তাইল্যান্ডের একটি মঠে বৌদ্ধ ভিক্ষু হিসাবে জীবন কাটালেও আজহনের বেড়ে ওঠা ব্রিটেনে। দুই বোনের সঙ্গে সেখানেই তিনি মানুষ হয়েছেন।
আজহনের যখন ১৮ বছর বয়স, তখন তিনি তাঁর মায়ের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে তাইল্যান্ডে যান। এই ভ্রমণের সময়ই নাকি তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে তিনি সন্ন্যাসীর জীবন কাটানোর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করবেন।
অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য শুরু করলেও শীঘ্রই আজহনের জীবন চিরতরে বদলে যায়। শীঘ্রই পার্থিব সম্পত্তি ত্যাগ করে পুরোপুরি সন্ন্যাসী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
উল্লেখ্য, বিভিন্ন ভাষায় দক্ষতা রয়েছে আজহনের। মোট আটটি ভাষা রপ্ত করেছেন তিনি। আজহনের জীবনকাহিনি অনেক তরুণ-তরুণীকে অনুপ্রাণিত করেছে।
ছবি: সংগৃহীত।