গৌতম আদানি। দেশের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি। এ বার বাংলাতেও তাঁর সংস্থা বড় মাপের বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। আগামী ১০ বছরে রাজ্যে ১০ হাজার কোটি টাকা লগ্নির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আদানি।
নিজস্ব চিত্র
আদতে গুজরাতের বাসিন্দা আদানিরা। মাঝপথে কলেজ ছেড়ে দিয়েছিলেন গৌতম। মূলত বস্ত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত পরিবারের ছেলে হয়েও শুরু করেন হিরের ব্যবসা। আজ তিনি দেশের অন্যতম প্রধান শিল্পগোষ্ঠী আদানি গ্রুপের কর্ণধার।
খুব কম সময়ের মধ্যেই হিরের ব্যবসায় জমি শক্তি করে ফেলেন। মহিন্দ্রা ব্রাদার্স নামে সংস্থায় কাজ করতে করতেই বছর তিনেকের মধ্যে শিখে ফেলেন হিরে ব্যবসার খুঁটিনাটি। মুম্বইয়ের জাভেরি বাজারে নিজের হিরে ব্যবসা শুরু করার সময়ে তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২০ বছর।
ব্যবসায়ী হিসেবে গৌতমের কৃতিত্বের বিচার হয় উদুপি পাওয়ার কর্পোরেশন লিমিটেড অধিগ্রহণের সময়ে। ২০১৪ সালে ওই অধিগ্রহণের যাবতীয় কাজ পাকা হয় খুবই কম সময়ের মধ্যে। মাত্র একশো ঘণ্টায় অধিগ্রহণ পর্ব মিটিয়ে ফেলে আদানি পাওয়ার লিমিটেড।
গৌতমের ছেলেবেলা থেকেই নাকি স্বপ্ন ছিল তিনি একটা বন্দরের মালিক হবেন। সেই স্বপ্ন সফল হয় ১৯৯৫ সালে। নিলামে গুজরাতের মুন্দ্রা বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব নেয় আদানি গোষ্ঠী। এটাই দেশের বৃহত্তম বেসরকারি সমুদ্র বন্দর।
দেশের প্রথম দুই ১০ হাজার কোটির বাজার টপকানো সংস্থা টাটা গোষ্ঠী এবং মুকেশ অম্বানীর রিলায়্যান্স। এর পরেই এই কৃতিত্ব দেখায় আদানি গোষ্ঠী। এই স্বীকৃতি মেলে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে।
এই মুহূর্তে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সবচেয়ে বড় সংস্থা আদানি গোষ্ঠীর আদানি পাওয়ার লিমিটেড। সংস্থা প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত গৌতম আদানি সব ব্যবসা মিলিয়ে আয়ের তিন শতাংশ খরচ করেন সেবামূলক কাজে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আমদাবাদের আদানি বিদ্যামন্দির স্কুল। এখানে দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের বিনাখরচে লেখাপড়ার সুযোগ মেলে।
গৌতম আদানির জীবনে এক কঠিন মুহূর্ত এসেছিল ১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি। বর্ষবরণের অনুষ্ঠান সেরে কংগ্রেস সাংসদ শান্তিলাল পটেলের সঙ্গে ফিরছিলেন। আমদাবাদে দু’জনকেই অপহরণ করে দুষ্কৃতীরা। শোনা যায় গৌতমের জন্য আদানি পরিবারের থেকে ১৫ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছিল। পরে মুক্তিও পান গৌতম।
জীবনের দ্বিতীয় বড় বিপদটি ঘটে ২০০৮ সালে। ২৬ নভেম্বর পাক জঙ্গিরা যখন মুম্বইয়ের তাজ হোটেল আক্রমণ করে তখন সেখানেই ছিলেন গৌতম আদানি। অন্যান্য পণবন্দিদের সঙ্গে গৌতমও গোটা রাত কাটিয়েছিলেন তাজের বেসমেন্টে। পরের দিন সকালে এনএসজি কমান্ডোরা উদ্ধার করেন। ওই হামলায় দেড় শতাধিক মানুষ নিহত হন।